back to top
শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Iconসেপ্টেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধি: প্রযুক্তি খাতের জয়জয়কার

সেপ্টেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধি: প্রযুক্তি খাতের জয়জয়কার

সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন শেয়ারবাজার নতুন রেকর্ড স্পর্শ করায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ ব্যক্তির সম্পদে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। ফোর্বসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, এই শীর্ষ ১০ ধনকুবের সম্মিলিত সম্পদ মাত্র এক মাসে বেড়েছে ২০১ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে যাদের সম্পদ কমেছিল, তাদের মধ্যে তিনজন বাদে বাকি সবাই সেপ্টেম্বরে আরও সমৃদ্ধ হয়েছেন। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন বিশ্বের দুই শীর্ষ ধনী—ইলন মাস্ক এবং ল্যারি এলিসন।

ইলন মাস্ক: অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে

৪৯০.৮ বিলিয়ন ডলার নিট সম্পদ নিয়ে ইলন মাস্ক এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সএআই এবং এক্স (সাবেক টুইটার)—এই চারটি বিশাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার সম্পদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সেপ্টেম্বরে টেসলার শেয়ারের দর ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাস্কের সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। গত ১২ সেপ্টেম্বর মাস্ক নিজেই এক বিলিয়ন ডলারের টেসলা শেয়ার কিনেছেন, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে টেসলার বোর্ড তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ প্রস্তাব করে, যেখান থেকে তিনি প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের শেয়ার পেতে পারেন।

বর্তমানে ৫৪ বছর বয়সী মাস্ক টেসলার সিইও, স্পেসএক্সের সিইও, এক্সের চেয়ারম্যান ও চিফ টেকনোলজি অফিসার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান এক্সএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা। ২০২৫ সালের মার্চে এক্সএআই এক্স অধিগ্রহণ করে ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যে। বর্তমানে এক্সএআইয়ের মূল্যমান ৮০ বিলিয়ন ডলার বলে দাবি করা হচ্ছে।

ল্যারি এলিসন: ক্লাউড প্রযুক্তির রাজা

৩৪১.৮ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে ল্যারি এলিসন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি। ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা এই ৮১ বছর বয়সী উদ্যোক্তা সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ওরাকলের শেয়ার মূল্য এক লাফে ৩৬ শতাংশ বেড়ে যায়, যার ফলে এলিসনের সম্পদ একদিনেই প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। কোম্পানি ঘোষণা করে যে আগামী চার বছরে তাদের ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবসা ৭০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। পরবর্তীতে শেয়ারের দাম কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর শেষে বৃদ্ধির হার ছিল ২৪ শতাংশ।

এলিসন বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চাভিলাষী ‘স্টারগেট প্রজেক্টে’র সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ওরাকল, ওপেনএআই এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে চার বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রযুক্তি মহাশক্তিদের আধিপত্য

শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় প্রযুক্তি খাতের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। মার্ক জাকারবার্গ ২৫১.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ) প্রতিষ্ঠাতা এই ৪১ বছর বয়সী উদ্যোক্তা ২০০৪ সালে হার্ভার্ড থেকে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করেছিলেন।

জেফ বেজোস ২৩২.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা বেজোস ১৯৯৪ সালে একটি অনলাইন বইয়ের দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, যা আজ বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স ও ক্লাউড স্টোরেজ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ (২০২.২ বিলিয়ন ডলার) এবং সের্গেই ব্রিন (১৮৭.৬ বিলিয়ন ডলার) যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন। সেপ্টেম্বরে একটি ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে গুগলকে ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করতে হবে না, যার ফলে আলফাবেটের শেয়ার ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

এআই যুগের নতুন তারকা

জেনসেন হুয়াং ১৬২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছেন। এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হুয়াং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে চিপ নির্মাণে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তার নেতৃত্বে এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালু ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপের প্রতিনিধি

শীর্ষ ১০ এ একমাত্র ইউরোপীয় ব্যক্তিত্ব হলেন ফ্রান্সের বার্নার্ড আর্নল্ট, যিনি ১৫৯.৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছেন। এলভিএমএইচ গ্রুপের সিইও ও চেয়ারম্যান আর্নল্ট লুই ভুইটন, ক্রিস্টিয়ান ডিওর, টিফানি সহ প্রায় ৭০টি বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের মালিক।

প্রবীণ দিকপালরা

স্টিভ বলমার (১৫৬ বিলিয়ন ডলার) এবং ওয়ারেন বাফেট (১৫০.২ বিলিয়ন ডলার) যথাক্রমে নবম ও দশম স্থানে রয়েছেন। মাইক্রোসফটের প্রাক্তন সিইও বলমার বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স এনবিএ দলের মালিক। অন্যদিকে ৯৫ বছর বয়সী বিনিয়োগ কিংবদন্তি ওয়ারেন বাফেট এখনও বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে পরিচালনা করছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে ২০২৫ সালের শেষে তিনি সিইও পদ থেকে অবসর নেবেন।

সেপ্টেম্বরের এই সম্পদ বৃদ্ধি মূলত প্রযুক্তি খাতের শক্তিশালী অবস্থান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে প্রতিফলিত করে। টেসলা, ওরাকল, মেটা, গুগল এবং এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিগুলো এআই যুগে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, যা শুধু এই ধনকুবেরদের নয়, বরং সমগ্র বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এই বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং প্রযুক্তি খাতের একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular