আচ্ছা,আপনি কি জানেন,এমন কোন নেশা আছে যেটার মধ্যে পৃথিবীর ঌঌ.৯% মানুষ আসক্ত? কি উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ?ঠিক আছে আমি বলছি। সেটা হচ্ছে,”Addiction to thinking” অর্থাৎ চিন্তা করার প্রতি আসক্তি”।একজন মানুষের চিন্তা-শক্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।হোক সে ছোট শিশু,মধ্যবয়সী বা প্রবীণ।একটি ছোট্ট শিশু একটার বেশি চকলেট কিভাবে পাবে বা তার মা-বাবার আদরের ভাগটা তার অন্য কোনো ভাইবোনের চেয়ে কিভাবে বেশি পাবে সেটা নিয়েও চিন্তা করে।কিন্তু প্রশ্ন আসে তখনি যখন কেউ কোনো বিষয়ে অত্যাধিক পরিমাণে চিন্তায় আসক্ত হয়ে পড়ে।কোনো ভাবেই রেহাই পায় না,ঠিক তখনি সেটা হয় “দুশ্চিন্তা”।
আচ্ছা,আপনি কি পারবেন ১০সেকেন্ড কোন রকম চিন্তা না করে,মনের ভেতর কোনো রকম একটাও কথা না বলে থাকতে?কি পারছেন না তো!!দুঃখের কিছু নেই।আমাদের মধ্যে ৯৯% মানুষই আপনার দলে।কখনও কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা,কখনও সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় মানসিক দোলাচল,কখনও থাকে উদ্বেগ।আর এভাবেই দুশ্চিন্তা থেকে শুরু হয় নানা রকম মানসিক এমনকি শারীরিক সমস্যাও।তাই নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে দেখে নিন ৩টি কৌশল :
১. মেডিটেশন : মেডিটেশন বা ধ্যান মনের এমন এক অবস্থা যখন মন অপ্রয়োজনীয় সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে নির্দিষ্ট বিষয়ে নিমগ্ন হয় এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করতে পারে।আর মানসিক চাপের ছুটির ঘন্টা বাজানোর জন্য মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম।শুধুমাত্র চোখ বন্ধ করে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোনিবেশ করলেই মানসিক স্থিরতা আসে। তাই যখন মাথায় প্রচুর কাজের চাপ থাকবে, অথবা কোনো কারণে উৎকণ্ঠায় ভুগবেন তখন একটু সময় বের করুন নিজের জন্য। শুধু প্রয়োজন একটা “শান্ত স্থান ও উন্মুক্ত মন”। দু’মিনিটের মনসংযোগও চিন্তা-ভাবনা স্বচ্ছতা বাড়াতে সক্ষম।
কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে- ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে।
২. দুশ্চিন্তার তালিকা : দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হলো এলোমেলো ভাবনা।আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন।তাই তৈরি করুন আপনার দুশ্চিন্তা গুলোর একটি তালিকা।দেখবেন,অল্প কয়েকটির পর আর খুঁজেই পাচ্ছেন না।মানুষ দুশ্চিন্তা করে এর পেছনে থাকে হাজারো কারণ।কিন্তু দুশ্চিন্তা কি তার সমাধান করে দেয়?উত্তরটি হবে ‘না’।তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন :
- কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি?
- এটা নিয়ে চিন্তা করে আমি কি করতে পারি?
উপলব্ধি করুন এভাবে।দেখবেন, আপনার দুশ্চিন্তার বোঝা কিছুটা হলেও কমছে।আর আপনি পাচ্ছেন মানসিক প্রশান্তি।
SHANTIDEVA বলেছিলেন,
“If you can solve your problem
Then what is the need of worrying,
If you can’t solve it
Then what is the use of worrying?“
৩. ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ: জীবনটা উপভোগ করতে হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতি আনন্দে উপলক্ষ্যে।কিন্তু অনেকেই যে কোন ঘটনা বা ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন।তাই দুশ্চিন্তার ধোঁয়াশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে গ্রহন করুন ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ।
যেমন:
- দুশ্চিন্তা দূর করতে চাইলে একটুকরো চকলেট মুখে পুড়ে নিন।কেননা,চকলেটের মাধ্যমে মস্তিষ্কে সেরিটেনিন নামক হরমোন উৎপন্ন হয় যা মস্তিষ্কে ভালোলাগার অনুভূতির সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্ক শিথিলে কাজ করে।
- নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- হয়ে উঠুন বাস্তববাদী ।
- ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিন।
পরিশেষে জীবনটা আপনার,একান্তই আপনার।নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রেখে হাস্যজ্বল জীবনযাপনের দায়িত্বটাও আপনার।তাই কৌশল গুলো অবলম্বন করে ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি নিয়ে আপনিও আপনার জীবন থেকে বিদায় করুন ‘দুশ্চিন্তাকে’।