বিশ্ব অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ ও দেশের শ্রমিক অসন্তোষ সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্প স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়ে ১০.৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
পশ্চিমা বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিই মূল কারণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ক্রেতাদের কেনাকাটা বাড়ায় কার্যাদেশের পরিমাণও বেড়েছে।
তবে এ সময় দেশের পোশাক খাতকে বেশ কিছু সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ, সরবরাহ ব্যবস্থার বিঘ্নতা, জ্বালানির অস্থিতিশীল দাম ও বাড়তি পরিবহন খরচের মতো চ্যালেঞ্জ থাকার পরও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল।
নেতৃত্বের পরিবর্তনের পর চ্যালেঞ্জ ও পুনরুদ্ধার
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর দেশজুড়ে গণআন্দোলন ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাক খাত চাপে পড়ে। জুলাই-অক্টোবর মাসে পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হয় এবং বেশ কিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
তবে পশ্চিমা বাজারে পোশাকের চাহিদা বাড়ার ফলে শিল্প খাত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ফিরে আসে।
ওভেন ও নিটওয়্যার রপ্তানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,
- নিটওয়্যার রপ্তানি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
- ওভেন পোশাক রপ্তানি ১৭.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ পশ্চিমা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও খুচরা বিক্রির হার বৃদ্ধি।
মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) পোশাক খাতের অবদান
এই প্রান্তিকে জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ১১.৬৮ শতাংশ। পোশাক রপ্তানির প্রধান গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা ও বেলজিয়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসব দেশে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭০ শতাংশ গেছে।
কাঁচামালের আমদানি ও চ্যালেঞ্জ
সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে পোশাক খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তুলা, কৃত্রিম সুতা, তুলার সুতা ও কাপড়ের মতো কাঁচামালের আমদানি মূল্য ছিল ৪.০৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ৩৯ শতাংশ।
শক্তিশালী ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন দক্ষতার উন্নতির কারণে আগামী দিনগুলোতে পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কম শ্রম খরচ ও শক্তিশালী সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।