back to top
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Iconউদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ারেন বাফেটের ৯টি সেরা টিপস

উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ারেন বাফেটের ৯টি সেরা টিপস

বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের তালিকা করা হলে বিল গেটস, স্টিফ জবস, জেফ বিজোস ইত্যাদি ব্যক্তির নাম উঠে আসবে।  এই মানুষগুলোর প্রত্যেকের জীবনে সাফল্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এসেছে। তাই সাফল্যের সংজ্ঞাটা তাদের কাছে ভিন্ন রকম। এদের মধ্যে একজন হলেন ওয়ারেন বাফেট, যিনি নবীন উদ্যক্তাদের জন্য অনুপ্ররণা স্বরূপ। তিনি নবীনদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন। আজকে আমরা তাঁর সাফল্য অর্জনে ৯ টি পরামর্শ সম্পর্কে জানতে পারবো-

১. বড় দানে খেলুন:

ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, ব্যবসায় লাভের জন্য একজন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্য কেবল শেয়ার বিক্রি করে লাভবান হওয়াই না, পাশাপাশি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন কিনা সেটা জানাও গুরুত্বপূর্ন।

ওয়ারেন বাফেট সব সময় সেই সব কোম্পানির শেয়ারই কিনতেন যেগুলো সম্বন্ধে তিনি ভালো জানতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতেন। তিনি মনে করেন একজন বিনিয়োগকরীর  শেয়ার তখনই বিক্রি করা উচিৎ যখন হাতে মূলধন দরকার, তখন না যখন সবাই বিক্রি করছে এবং আপনারও তাদেরকে অনুসরণ করতে হবে।

তার ব্যবসার মূলনীতি হলো, দীর্ঘ সময় শেয়ার ধরে রাখা এবং প্রয়োজন মতো যখন টাকা দরকার অথবা অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে মনে হবে কেবল তখনই বাজারে শেয়ার বিক্রি করো।

বাফেট বলেছেন, “Our favorite holding period is forever.”

২. নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন এবং বিনয়ী থাকুন:

ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, সফলতা একদিনে আসা সম্ভব না। এজন্য প্রতিদিন নতুন কিছু জানা উচিৎ এবং ব্যবসায়ে তার প্রতিফলন করা উচিৎ। তবেই সাফল্য আসবে।

কিছুকাল আগে বাফেট একজন উদ্যোক্তাকে বলেছিলেন, প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে, ব্যবসায়ে নিজের সুযোগ খুঁজে বের করতে কোন পদক্ষেপটি সময়োপযোগী হবে তা বুঝে বিনিয়োগ করতে এবং তিনি আরো বলেছিলেন সবসময় অংশীদার কিংবা ক্রেতাদের সাথে বিনয়ী হতে। বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন কৌশল আপনার ক্রেতা এবং অংশীদারদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা।

বাফেট এখনো প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়েন এবং চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সিধান্ত নেন।

এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেছেন, 

“That’s how knowledge works. It builds up, like compound interest.”

৩. নিজের মূলধন বিনিয়োগ করুন:

বাফেট তার ২০১৮ এর বার্ষিক চিঠিতে ব্যাখ্যা করেছিলেন ধার করা অর্থে বিনিয়োগ করলে কী ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কিছুটা লাভের জন্য কেনা শেয়ারের জন্য একজন ব্যক্তিকে অহেতুক দুশ্চিতায় ভুগতে হয়। এছাড়া সঠিক সময়ে টাকা ফেরত দেয়ার বাড়তি একটা দুশ্চিন্তা তো থাকেই। পরবর্তী সময়ে সে অতিরিক্ত চাপে ভুল কিংবা দূর্বল সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা ব্যবসায়ে সুফল বয়ে আনবে না।

তিনি আরো মনে করেন, যখন ব্যবসায়িক মন্দা চলে তখন দায়মুক্ত এবং হাতে মূলধন আছে এমন বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় পড়তে হয় না এবং তাদের অধিক ক্ষতিরও সম্ভবনা থাকে না। ফলে এধরনের বিনিয়োগকারীরা খারাপ সময়েও টিকে থাকতে পারে। অধিক মুনাফা অর্জনের চেয়ে খারাপ সময়ও  টিকে থাকাটা অধিক গুরুত্বপূর্ন। 

৪. সু-সম্পর্ক স্থাপন করুন:

ওয়ারেন বাফেট একবার আমেরিকার  “Lowa State University” এর কিছু শিক্ষার্থীর সাথে জীবনে সফলতা অর্জনের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। তাদের ম্যধ্যে একজন জানান বাফেট মনে করেন ব্যবসায়ে পণ্য/সেবা অনুকরণ  বা  প্রতিস্থাপন করা যায় কিন্তুু সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করা যায় না। 
বাফেটের মতে, সফলতা অর্জন এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য ক্রেতা থেকে শুরু করে অংশীদার, যোগানদাতা সবার সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিশেষ একটি পয়েন্ট যোগ করবে। যা আপনার সাফল্যের দ্বারকে প্রশস্থ করবে।

৫. অতীতে পড়ে না থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন:

“অবশ্যই অতীতের উন্নতি থেকে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে মুনাফা পাবে না”  ১৯৫১ সালে বাফেট লিখেছিলেন। তাঁর বলা প্রত্যেকটি কথা এতো বছর পরও সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের তিনি বরাবরই সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতের অগ্রগতির কথা ভাবতে বলেছেন এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। স্থায়ী নয় এমন অতীতের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছেন। কেননা, ব্যবসায়ে যেকোনো সময়ে যেকোনো  পরিবর্তন  আসতে পারে, তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিৎ।

৬. অধিক দাম মানে উত্তম সেবা/পণ্য নয়:

বাফেট সেই সব ধনী ব্যক্তিদের সতর্ক করেছিলেন যারা অধিক দামে শেয়ার কিনে থাকেন। কোনো পণ্যের দাম বেশি হলেই যে সেটি ভালো হবে- বিষয়টা এমনটা না। তাই একজন বিনিয়োগকারীর উচিত পণ্যের গুণগত মান দেখে সেখানে বিনিয়োগ করা। উচ্চমূল্যকে পণ্যের মান নির্ধারণের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ না।

৭. পুষে রাখার মানসিকতা এড়িয়ে চলুন:

বাফেট মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী লাভের জন্য যখন বাজারে শেয়ারের মূল্য থাকবে, তখন বিক্রি করা উচিৎ। তবে যখন দাম পড়ে যাবে এবং সবাই ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি করার প্রতিযোগীতায় নামবে- তখন নয়!

তিনি বলেছেন, “সবাই যখন মুনাফা লাভের আশায় শেয়ার বিক্রি করবে তখন তুমি ভয় পাও কারণ বাজারে ঘাটতি হওয়ার আশংকা আছে এবং তুমি তখন মুনাফা লাভের চিন্তা কর যখন অন্যরা বেশি লাভের আশায় শেয়ার বিক্রি করবে না।”

৮. কখন লোকসান কমাতে হবে জানুন:

বাফেট তার জীবনের একেবারে শুরুর দিকে, বুঝতে শুরু করেছিলেন ব্যবসায় কখন লোকসান বা ক্ষতির পরিমাণ আর বাড়ানো যাবেনা। তিনি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় টাকা লাগিয়ে প্রথমবার হারেন এবং পরবর্তিতে আবার হেরে যান। সেসময়ে বুঝতে পারলেন আর হারা যাবে না, নাহলে এভাবে করেই সর্বস্ব হারিয়ে ফেলবেন। তাই স্থির না হয়ে, হাতে ন্যূনতম মূলধন না রেখে তিনি কখনো বিনিয়োগ করেননি। কোনো জায়গায় বিফল হলে একটা সীমা পর্যন্ত সে জায়গায় শ্রম দেয়া উচিৎ বলেই তিনি মনে করেন।

এটি তরুণদের জন্য তাঁর খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। অনেক সময়ই তরুণ ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষেত্রে হেরে গেলে জিদ থেকে বার বার সফল হবার চেষ্টা করে। এতে করে একটা সময় হাতে মূলধনই থাকে না, এমনকি ধার/ দেনা করেও অনেককে পথে বসতে হয়। তাই বাফেট মনে করেন, পরবর্তী পরিস্থতি কী হতে পারে এর উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

৯. আয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিও না:

বাফেট মনে করেন, একজন মানুষ কতো বেশি সে আয় করছে সে দিকে অধিক খেয়াল থাকা উচিৎ নয় বরঞ্চ এই পর্যন্ত পৌঁছাতে যারা তাঁকে সাহায্য করেছে সেদিকে খেয়াল রাখা অধিক প্রয়োজন। তাহলে সাফল্যের সময়সীমা দীর্ঘমেয়াদী হবে। তিনি বলেন, ধনী হওয়া অবশ্যই ভালো, কিন্তু গোড়া ভুলে গেলে চলবে না! নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে কীভাবে এই অবস্থানে এসেছেন, কারা পাশে ছিল সেটা মনে রাখতে হবে সবসময়!

ওয়ারেন বাফেট এমনই একজন ব্যক্তি যাঁর কর্মজীবনকে অনুসরণ করে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। তিনি নবীন উদ্যোক্তাদের জন্যে দারুণ কিছু পরামর্শ দিয়ে গেছেন যা নবীনদের সাফল্যের রূপরেখা স্বরূপ। সুতরাং কেবল ব্যবসা/ বিনিয়োগ করলেই হবে না, আরো কিছু ব্যাপার অবশ্যই একজন উদ্যোক্তার মাথায় রাখতে হবে যা তাঁর সাফল্য অর্জনের পথকে সুগম করবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular