বর্তমানে প্রতিযোগিতার এই যুগে আমরা সবাই চাই কম পরিশ্রমে বেশি ফল পেতে। অনেক সময় সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কঠোর পরিশ্রম করলেও আমরা আমাদের প্রাপ্য ফলাফলটা পাই না। আর বর্তমানে প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের একই সাথে কাজের ধরণ যেমন পরিবর্তন হয়েছে, কাজের পরিমাণ বেড়েছে সেই সাথে সময় কম হয়ে গিয়েছে। তাই এসব দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কাজের সঠিক ফলাফল পেতে হলে আমার প্রতিটি কাজ বুঝে করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, চেষ্টা, কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই আমরা সেই ফলাফলটি পেতে পারি। এই জন্যে আমাদের জানতে হবে সেই কার্যকর পদ্ধতিগুলো যেগুলো ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে প্রচেষ্টা চালাতে কাজে দিবে আমাদের।
১. সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা :
অযথা বেশি পরিশ্রম করার চেয়ে কার্যকারী ভাবে কাজ করে বেশি ফলাফল পাওয়ার জন্যে সময়ের সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ বেশিরভাগ সময়ই আমাদের মূল্যবান সময় চলে যায় অপ্রয়োজনীয় কাজে যেগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে আমরা অল্প পরিশ্রমে কার্যকারী ফলাফল পেতে পারি।
এক্ষেত্রে আমাদের যা করা উচিত তা হল প্রত্যেকটা কাজের জন্যে সময় ঠিক করে দেওয়া। একটা নিদির্ষ্ট কাজের জন্যে নিদির্ষ্ট সময় থাকবে কেননা কাজের জন্যে ডেডলাইন ঠিক করে নেওয়া অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাহলে আমাদের কাজ শুরুর আগেই এই চিন্তা থাকবে যে এই সময়ের মধ্যে আমার কাজটা শেষ করতে হবে। তাহলে আমরা আসলেও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।
আবার একদিনের বা এক সপ্তাহের কাজের একটা সঠিক পরিকল্পনা করে নিলে সেটি আমাদের লক্ষ্য ঠিক রেখে সময় মত কাজ করতে অনেক বেশি কাজে দেয়। এটা এক ধরনের রিমাইন্ডার হিসাবে কাজ করে। এতে আমাদের বার বার কাজ গুছানোর পরিশ্রম কমে যায় এবং কাজও ভাল হয়।
২. ইতিবাচক মানসিকতা রাখা :
প্রতিটি কাজেরই পরিপূর্ণতা নির্ভর করে আমরা কি মানসিকতা নিয়ে কাজ করি তার উপর। একটি পজিটিভ মানসিকতার ওপর অনেকাংশে কাজের সফলতা নির্ভর করে। কাজ যতই কঠিন বা চ্যালেঞ্জিংই হোক, যদি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করা যায় তাহলে কাজের চাপ কমে যায় বা কাজ করার মনোবল শক্ত হয়।
এমনকি একটি ইতিবাচক মানসিকতা আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের কাজ করতে সাহায্য করে। কাজের মানকে উন্নত করে, কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়ায়।
“Your positive action combined with positive thinking results in success.” – Shiv khera
৩. প্রযুক্তির সঠিক এবং কার্যকরী ব্যবহারে কাজের গতি বৃদ্ধি:
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ কাজ প্রযুক্তি মুখী হওয়ায় বেশিরভাগ সময় আমাদের কম্পিউটার, ফোন, ট্যাব এবং বিভিন্ন ডিভাইস এসবের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। এজন্যে কম পরিশ্রমে বেশি ফল পেতে আমাদের প্রথমেই উচিত এসব ডিভাইসের ওপর দক্ষতা অর্জন করা। আর এজন্যে আমাদের উচিত কী-বোর্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিভাইসের বিভিন্ন ফাংশন এবং শর্ট-কাট জেনে রেখে সেগুলো ব্যবহার করলে সময় কম লাগে এবং কাজ ভালোও হয়। এতে আমাদের কম কষ্টে দ্রুত ভাল মানের কাজ করা যায়। এক্ষেত্রে typing.com এ বিভিন্ন টিউটরিয়াল থেকে সাহায্য নেওয়া যায়।
৪. কম পরিশ্রমে বেশি ফল পেতে সঠিকভাবে যোগাযোগ :
এমন অনেক কাজই থাকে যা আমাদের জানার বাহিরে হয়ে থাকে বা সেই কাজ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বা ধারণা নাই বা কমও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই বদ্ধমূল ধারণা থাকে যে, কোন রকম সাহায্য নিজে শিখে কাজ করব। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় যে সমস্যা হয় তা হল, সময় সংকুলান হয় না এবং অনেক সময় নিজে নিজে পড়তে বা শিখতে গিয়ে তা ঠিক মত বোঝাও হয়ে ওঠে না। এরচেয়ে বরং নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির কাছে থেকে কোন জ্ঞান, শিক্ষা, পরামর্শ নেই তাহলে কাজ বা পড়াটা আমরা সহজেই এবং দ্রুত সঠিকভাবে শিখে ও বুঝে ফেলতে পারব। এক্ষেত্রে কাজটা ডেডলাইনের মধ্যে শেষ করা যাবে এবং পরীক্ষা হলে তা সঠিকভাবে বুঝে আত্নবিশ্বাসের সাথে দেওয়া যাবে। অন্যথায়, কষ্ট বেশি হবে সময় বেশি লাগবে এবং কাজ ঠিকমত হওয়ার নিশ্চয়তাও নেই।
৫. বিরতি নিয়ে কাজ করুন :
আজকাল আমারা বেশি কাজ করার লোভে একটানা অনেক কাজ করতে চাই। কিন্তু একটি বিষয় বার বারই আমরা ভুলে যাই যে কাজ করতে করতে শরীরের পাশাপাশি মানসিকভাবেও আমাদের ক্লান্তি চলে আসে। আর এই ক্লান্তি আসলে আপনি কাজে ঠিক মত মনোযোগ দিতে পারবেন না। অনেক কষ্ট করে শ্রম দিতে থাকলে কাজে কিছু না কিছু ভুল দেখা দিবে। অনেকসময় দেখা যায় কাজটিতে শ্রম দিলেও কাজটি ভাল হওয়ার চেয়ে বরং খারাপই হতে থাকে।
এজন্যে, আমাদের কাজ যতই থাকুক কখনই মানসিক চাপ নিয়ে একটানা কাজ করা উচিত না। চাপ ও ক্লান্তি কাজের মানকে নষ্ট করে। এরচেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ শুরু করলে কাজে আবার উদ্দীপনা ফিরে আসে। সবচেয়ে ভালো হয় দৈনন্দিন কাজের সময়সূচী অনুযায়ী কাজ করলে।লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও এমন বিশ্রাম অনেক উপকারে আসে। পড়া মনে রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ সময়কে আপনার শক্তিতে পরিণত করুন: ১০টি কার্যকরী টাইম ম্যানেজমেন্ট হ্যাক
৬. মাল্টিটাস্কিং-কে নয় বরং কাজের মান এবং মনোযোগকে অগ্রাধিকার দিন:
আজকাল কাজ ভাল না হওয়ার বা কাজে দেরী হওয়ার অন্যতম কারণ হক মাল্টিটাস্কিং। নিজের দক্ষতা প্রকাশ করতে বা সময় বাঁচাতে বা কাজ দ্রুত করার জন্যে আমরা একই সাথে অনেক কাজ করা শুরু করি। এতে করে আমরা কোন কাজেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারিনা। বিভিন্ন কাজে আমাদের মনোযোগ ভাগ হয়ে যায়। এরফলে কাজে ঘন ঘন ভুল হতে থাকে, দেরী হয় এবং তার প্রভাব অন্যান্য কাজের ওপর ও পরে। কাজের মান খারাপ হয় আর মানসিকভাবে চাপ বেশি পরে। কাজে আনন্দ পাওয়া যায় না।
এর চেয়ে বরং একটি কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিলে এবং সেই মুহূর্তে শুধু সেই কাজই করলে কাজটি দ্রুত হয়। কষ্ট কম হয়। কাজ ভাল হয়। কাজে আনন্দ থাকে।
“The scarcity of time is the reason we have to concentrate on one thing at a time.” – Matt Perman
৭. নিজের সূচনা বক্তৃতা তৈরী রাখা :
আজকাল যে কোন আবেদনপত্রে, ক্লাবে নতুন জয়েন করলে, অফিসে, মিটিং এ নিজের দক্ষতা বা নিজের সম্পর্কে তুলে ধরতে হয়। এতে আমাদের একই জিনিস বার বার বলতে হয় বা লিখতে হয়। এক্ষেত্রে যদি আমাদের এই সূচনা বক্তৃতা একবারেই সুন্দর ও ঠিকভাবে তৈরী করা থাকে তাহলে বার বার স্পিচ তৈরী করতে সময় নষ্ট হবে না। আবার তাৎক্ষণিক স্পিচ এর চেয়ে আগে থেকে তৈরী করা বক্তৃতার মানের চেয়ে ভালও হয়। আবার অনেক মিটিং এ বা অফিসের কাজে কাকে কি বলতে হবে বা জানাতে হবে তা আগে থেকে জেনে রাখা উচিত। নিজের সেই বক্তব্য দিতে দক্ষতা অর্জন করা উচিত।
৮. কাজের মান দেখুন, সময় না :
কম পরিশ্রমে মানসম্মত কাজ করতে হলে আমাদের সব সময় খেয়াল রাখা উচিত যে কত কম সময়ে কতগুলো কাজ করলেন এটা লক্ষ্য না করে বরং একটু সময় নিয়ে হলেও কাজের মান কেমন হলো সেদিকে খেয়াল রাখা।
একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে দেখানো যায়, ধরুণ আপনি ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে ১০০০ শব্দের একটি আর্টিকেল লিখলেন। এখন তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আপনি বড় আর্টিকেল লিখে ফেললেও আপনার লেখায় যদি বেশি তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সৌন্দর্য না থাকে কিংবা বানান ভুল থাকে এক্ষেত্রে লেখা বড় হলেও ভাল মানের হবে না, পড়ে কারো ভাল লাগবে না। আপনার কাজ বিফলে যাবে। এরচেয়ে যদি আরেকটু বেশি সময় নিয়ে আরেকটু গবেষণা করে, আরো কিছু নতুন বিষয় নিয়ে এসে, বানানে খেয়াল করে, লেখার গুরুত্বপূর্ণ লাইনে এ দাগ দিয়ে বা পয়েন্ট দিয়ে কাজ করলে লেখার মান অনেক গুণে বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে লেখা ছোট হলেও সমস্যা হয় না।
৯. বেশি জানুন, জ্ঞান অর্জন করুণ :
আপনি যতই ভাল কাজ করুন আপনাকে নিত্যনতুন অনেক কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে। নিজেকে সময়ের সাথে সাথে, যুগের প্রয়োজনের সাথে মানিয়ে তৈরী করে নিতে হবে। আপনি কোন বিষয় কখনো শিখেননি, আপনার দরকার হয়নি কিন্তু তার মানে এই না যে আপনার কখনো দরকার হবে না।
এজন্যে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ব্যবহারকৃত বিভিন্ন বিষয়, সফটওয়্যার, কাজ, ডিভাইসের ব্যবহার শিখুন। সেগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠুন। কাজের ও পড়াশোনার পাশাপাশি পারিপার্শিক বিভিন্ন খবরাখবর এবং জ্ঞান রাখুন।
বর্তমানে সর্বাধিক কাজে লাগানো সফটওয়্যার যেমন, পাওয়ারপয়েন্ট, এক্সেল, ওয়ার্ড এসবে দক্ষতা আনুন, নতুন কোন ভাষা শিখুন।
এসব যেভাবে আপনার কাজের মান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে, সেই সাথে উপস্থিত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
“It is possible to fly without motors but not without knowledge and skills.” -Wilber Wright
১০. ব্যর্থতা মেনে নেওয়া :
প্রতিনিয়ত সব কাজে, লেখাপড়ায় বা কোন কম্পিটিশনের প্রতিবার সফলতা আসবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্য কম পরিশ্রমে বেশি ফল পেতে আমরা তখনই ভালো মতো সুন্দর করে কাজ করতে পারব যখন আমরা সব কিছু মেনে নিতে পারব। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারব। আর জীবনে সফল হতে হলে আমাদের বার বার উঠে দাঁড়ানোর মানসিকতা রাখতে হবে। মানসিক চাপ ছাড়া কাজ করার অভ্যাস করতে হবে। ভয়কে জয় করে, ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াতেই ভালো মান এবং পরিপূর্ণতা নির্ভর করে
“Working more efficiently doesn’t ever mean that you will have to work less.”
দক্ষতার সাথে কাজ করা মানে কাজের মানের পরিপক্বতা বজায় রাখা। সুন্দর, নির্ভুল, যথাযথ কাজ করা। এজন্য শুধু পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট পরিকল্পনা ও দক্ষতা ও জ্ঞানের সাথে কাজ করলে কম কষ্টেই ভাল কাজ করা সম্ভব।