বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫
HomeProductivityProductivity Tools‘Eat That Frog’: গড়িমসি থেকে মুক্তি পেতে ৫টি উপায় অনুসরণ করুন

‘Eat That Frog’: গড়িমসি থেকে মুক্তি পেতে ৫টি উপায় অনুসরণ করুন

মানুষের সবচেয়ে বাজে অভ্যাস হচ্ছে বড় কাজ পাশ কাটিয়ে সহজ কাজ দিয়ে দিনের শুরুটা করা। এতে করে পরবর্তী সময় আর সেই কাজটা করাই হয়ে উঠে না। হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও এখন না ৫ মিনিট পরে, তারপর আরো ৫ মিনিট পরে করতে করতে সময় পার করে দেই। কাজের কাজ কিছুই হয় না। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে কি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে? না, কখনোই না। এ ব্যাপারটাকেই কাজে  procrastination বা গড়িমসি করা বলে। গড়িমসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, কর্মক্ষমতা বাড়াতে হলে, দীর্ঘসূত্রিতাকে  ডিলিট করতে হবে। এই  গড়িমসিকে কীভাবে চিরতরে বিদায় দেয়া যায় তা লিখেছেন  Brian Tracy তাঁর বিখ্যাত বই   Eat That Frog- এ।  

চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক উপায়গুলো। 

“Everyone procrastinates. The difference between high performers and low performers is largely determined by what they choose to procrastinate on.” ― Brian Tracy

কঠিন কাজ দিনের শুরুতেই করে ফেলুন:  

মনে করুন, আপনাকে বলা হলো প্রতিদিন আস্ত একটা ব্যাঙ আপনাকে খেতে হবে। খেতেই হবে, কোন উপায় নেই। তাহলে সেটা আপনি দিনের কোন সময়টাতে করবেন? আপনি হয়তো ভাবছেন, ইশ! ব্যাঙ খেতে বলছে, এইটা আবার খাওয়া যায় নাকি! ভয় পাবার কিছু নেই! এখানে ব্যাঙ খাওয়া মানে বোঝানো হয়েছে কঠিন কাজকে। 

Brian Tracy এর মতে, ব্যাঙ খাওয়া বা সবচেয়ে কঠিন কাজটি দিনের শুরুতেই করে ফেলা উচিত। কেননা দিনের শুরুতেই আমাদের এনার্জি লেভেল যখন সর্বোচ্চ থাকে, তাই তখন কাজটা করা আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ হয়। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কাজটি করুন। পর্যায়ক্রমে সহজ এবং সহজতর। দিনের শুরুতেই কঠিন কাজটি সেরে ফেলতে পারলে আপনি থাকবেন টেনশনমুক্ত এবং পরের কাজগুলো করা সহজ হবে। সহজ কাজগুলো আগে করে ফেললে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। কঠিন কাজ করা আরো কঠিন হয়ে উঠবে।     

কাজের তালিকা লেখার অভ্যাস করুন : 

আপনি যদি না জানেন আপনার কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে, তাহলে কিন্তু মুশকিল। আমরা বাঙালিরা কিছু পারি আর না পারি ভুলে যেতে বেশ ওস্তাদ। তাই এই ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে মুক্তি পেতে
প্রতিদিন কী কী কাজ করবেন, তা একটি ডায়েরিতে টুকে রাখার অভ্যাস করুন। ডায়েরী না থাকলে হাতে তো স্মার্টফোন আছেই! প্লে-লিস্ট থেকে To-Do-List অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন, মনে রাখা অনেকটাই সহজ হবে। প্রতিদিন সকালে অফিসে বা ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় যাত্রাপথে সেই তালিকা দেখে কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী লিস্ট করে নিতে পারেন। এভাবে গুছিয়ে চললে একসাথে অনেকগুলো কাজ থাকলেও সময়মতো শেষ করা সম্ভব হয়। 

পরবর্তী দিনের কাজগুলোর লিস্ট তৈরি করুন :  

আমরা যখন পরীক্ষার হলে প্রশ্ন-উত্তর লিখি তখন কি করি সবচেয়ে ভালো যেটা পারি সেটাই আগে লিখি ঠিক সেভাবেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার শুরুতে রাখুন।  

একজন সফল মানুষ সবসময় পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত রাখেন। এই তালিকা তিনি দিনভর যুক্ত হওয়া নতুন নতুন কাজ নোট করে বা দিনের কাজ শেষ করার আগ মুহুর্তে তৈরি করে নেন। তারপর রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যদি আরও  কিছু মনে পড়ে তো সেটাও তালিকায় যুক্ত করে নেন। এভাবে আলাদা করে সময় না ব্যয় করেও পরবর্তী দিনের চমৎকার কর্মতালিকা প্রস্তুত হয়ে যায়। শুধু পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত করলেই হবে না। সেসব কাজগুলোর থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হবে কোনটা আগে করবেন আর কোনটা পরে। একটা করে কাজ শেষ হলে কেটে দিতে হবে,এতে করে আপনি মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন।  

‘না’ বলতে শিখুন : 

‘না’  বলতে পারাটা অনেক বড় একটা গুন। অনেক সময় আমরা না বলতে পারি না বলে অনুরোধে ঢেঁকি গিলে নিজেরাই ফেঁসে যাই। আমরা মনে করি অপর পাশের মানুষটিকে বললে সে না জানি কি মনে করবে। ধরুন, আগামীকাল আপনার একটা মিড আছে, একটা অ্যাসাইনমেন্ট ডেডলাইন আছে এরমধ্যেই  আপনার বন্ধু ফোন দিয়ে বলল দোস্ত চল আজকে ঘুরে আসি? কি করবেন? সব বাদ দিয়ে বন্ধুর সাথে যাবেন নাকি আপনার কাজগুলো করবেন? অবশ্যই আপনার কাজগুলো আগে শেষ করবেন। অনেক সময় আমরা ভাবি বন্ধু কি মনে করবে না গেলে, সেহ্মেত্রে ভালোভাবে বন্ধুকে বুঝিয়ে বলুন। জীবনে না বলতে শেখাটা অনেক বেশি জরুরী, সবাইকে খুশি করে চলতে আপনি পারবেন না। আপনার ব্যক্তিগত জীবনে হ্মতি হবে সবাইকে খুশি করে চলতে গেলে। তাই কারো অনুরোধ রাখতে  না পারলে সরাসরি সুন্দর করে না বলে দিন ।  

সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে শিখুন 

সফল আর অসফল ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য একটাই সময়ের সঠিক ব্যবহার। Oprah Winfrey, Bill Gates, Elon mask, warren buffett- এর মতো সফল ব্যক্তিরা এসব নিয়ম মেনে চলেন।

সফল হওয়ার একটাই সূত্র, সময়ের সঠিক ব্যবহার। হাজারো বিষয় আছে কাজ করার জন্য আর একদিনে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। আইনস্টাইনের সময়ও ছিলো এই চব্বিশ ঘন্টাই, তার বেশি নয়। সঠিকভাবে সময়ের ব্যবহারই হতে পারে সফলতার মূল চাবিকাঠি।  বিজনেস ইনসাইডারে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ব্রায়ান ডি. ইভান্স।  ইভান্স সময়ের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা বলেছেন। লক্ষ্য ছাড়া সময়ের সঠিক ব্যবহার কিংবা সফলতাকে ধরা সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘‘২৫টি লক্ষ্যের একটি তালিকা তৈরি করুন। সেখান থেকে ২০টি লক্ষ্য বাদ দিয়ে ৫টিকে গুরুত্ব দিন।ইভান্স লিখেছেন, ‘‘ সময়ের সঠিক ব্যবহারে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে। কারণ মানুষের  চেয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি সহজ।” কোথায় কতটুকু সময় ব্যয় হচ্ছে সেটা খেয়াল করুন, সেই অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি করে রাখুন দেখবেন আপনার সময় আর অযথা ব্যয় হচ্ছে না। 

এই পাঁচটি ধাপ  বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। উপরের এই পাঁচটি ধাপ  সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কাজে আর গড়িমসি থাকবে না। আপনার সময়ের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকবে।

আরও পড়ুনঃ নিজের উপর আস্থা রাখুন: আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ১২টি কার্যকর উপায়

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular