আমরা সবাই কমবেশি জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে মনে হয়েছে যে আমাদের জীবন থমকে গেছে,এই স্থবির অবস্থা থেকে মুক্তির কোন উপায় জানা নেই। কারো মনে হয় সর্ম্পকে আটকা পড়েছে, কেউবা চাকরিতে, আবার কারো কারো কাছে পুরো জীবনটাই থমকে গেছে বলে মনে হয়! আর এমতাবস্থায় বিষণ্ণতা, অসহায়ত্ব, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে ফেলে।
অনেকের ক্ষেত্রে এতই বাজে লাগা শুরু করে যে,তারা নিজেদেরর জীবন ও শেষ করে দেয়ার চিন্তা করেন কেউ কেউ।অন্য অনেকের জীবনের সব কিছুই গোছানো দেখে, নিজের কোন গতি করতে না পারার আক্ষেপ ভেতরে ভেতরে আমাদের কুরে কুরে খেতে থাকে। আমরা সবাই জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াই নিজের সাথে। আর এই অভিজ্ঞতাই ঠিক করে দেয় আমরা কোন পরিস্থিতিতে কি অনুভব করব এবং কিভাবে আচরণ করব। তাই আটকে থাকার এই বাজে অবস্থায়, আমাদের পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে-
১. আটকে পড়া হচ্ছে সাময়িক অনুভব, চিরন্তন বাস্তব নয়–
যখন আমরা বন্দিত্ব অনুভব করি তখন আমাদের প্রথম প্রবৃত্তি হয়ে দাঁড়ায় নিজেকে উপেক্ষা করে, অন্য কাউকে অথবা কোন পরিস্থিতিকে দোষারোপ করা। আমাদের উচিত তখন নিজের ভিতরে ডুব দিয়ে নিজের অনুভূতি,চিন্তার প্রতি নজর দেয়া। আমরা সবসময় বাইরের পরিস্থিতি পরিবর্তন না করতে পারলেও,ওই পরিস্থিতি সর্ম্পকে আমাদের উপলব্ধি ঠিকই বদলাতে পারি।মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা কোন বিষয় সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিকোণ বদলালে, পুরো পরিস্থিতি অটোমেটিক বদলে যায়।
“Feelings are just visitors, let them come and go.” – Mooji
২. থমকে থাকার অনুভূতি পরিবর্তন প্রয়োজনের বার্তা বহন করে–
এই পরিবর্তনের দরকার হতে পারে মানসিকতায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে অথবা অভ্যাসের। আপনি এতদিন ধরে যেভাবে নিজেকে পরিচালিত করেছেন তাতে এখন আর হবেনা,। আপনার যেই বিষয়টার কারনে মনে হচ্ছে যে আপনি থমকে আছেন তার অর্ন্তনিহিত কারন খুঁজে বের করে আপনার নির্দিষ্ট কিছু দিক
বদলিয়ে ফেলতে হবে। জীবন সংকুচিত হয়ে যায়,প্রসারিত হওয়ার ইংগিত দেয়ার জন্যই!
৩. অতীতের আবর্জনার বিশ্রী জোরজবরদস্তি–
আমরা সবাই লাইফে কমবেশি তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতার সম্নুখীন হই। নিজেদের জানা-অজানায় আমরা অনেক সময়, এই বাজে অভিজ্ঞতা গুলো নিজেদের ঘাড়ে বয়ে বেড়াই। ইচ্ছা-অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাইলেও এগুলো মুছে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠেনা,আর তখনই নিজের অভিজ্ঞতার কাছে নিজেকে বন্দী বলে মনে হয়। এইসব আভিজ্ঞতা হয়ত চিরতরে মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলা না গেলেও,আশার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের মাথায় এদের পাগল নাচন বন্ধ করা সম্ভব। এর জন্য নিজের চিন্তাকে সচেতনভাবে নজরদারিতে রেখে,যখনি এসব চিন্তা মাথায় ভর করতে চাইবে তখন নিজেই নিজের ব্রেইনকেকে সাজেশন দিতে হবেযে, এই চিন্তা আমারা বর্তমান পরিস্থিতেকে কোনভাবেই কাজে লাগাচ্ছে না,আর আমার এই মুহুর্ত ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই। তার চেয়ে চল বর্তমান মুহুর্তটাকেই কাজে লাগাই নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে। আপনি আপনার ব্রেইনকে যেই ন্যারেটিভ শোনাতে বাধ্য করবেন সে তাই করবে। তাই নিজেকে ক্রমাগতভাবে বর্তমানের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করাটাই হবে যুক্তিগত কাজ।
৪.অজুহাতের মিত্থ্যে বাহাদুরি-
আপনার যদি আসলেই কোন কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি কোন উপায় খুঁজে বের করবেন, আর না হয় কোন অজুহাতের পিছনে নিজের গা ঢাকা দিবেন। নিজের কাছে স্বীকার করাটা কঠিন হলেও কিন্তু এটাই বাস্তব। কেন কাজটি করা সম্ভব না তাতে নজর না দিয়ে,কেন কাজটি আপনার অবশ্যই করা উচিত তাতে পুর্ণ মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।
“The only person standing between you and your goal, is the bullshit story you keep telling yourself as to why you can’t achieve it”
আপনাকে আপনি ছাড়া ছাড়া আর কারো পক্ষে আটকানো সম্ভব না। তাই অজুহাতের দোহাই না দিয়ে,নিজের অজুহাতের উর্ধ্বে উঠে পরিবর্তনের চেষ্টায় লিপ্ত হই চলুন। অলসতা, হেরে যাওয়ার ভয়, দুশ্চিন্তা এই ব্যাপারগুলো আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এবং ঘুরেফিরে আমরা থমকে থাকার হতাশাজনক বৃত্তে আটকা পড়ি। কোন ম্যাজিকাল কিছুর আশা না করে,চলুন পরিস্থিতি আস্তে ধীরে চেইঞ্জ করার চেষ্টা করি এবং নিজেকে বলা নিজের ন্যারেটিভ বদলাই।
৫. নিজস্বতায় মুক্তি-
নিজেকে নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা দেয়ার মাধ্যমে, আমরা আশেপাশের অন্যদেরকেও তাদের স্বকীয়তা বজায় চলার সুযোগ দেই। আর নিজস্বতা বজায় রাখার মাধ্যমে মুক্ত অনুভব করা যায়। আপনি যখন নিজের চ্যালেঞ্জ গুলো নিয়ে খোলামেলাভাবে স্বীকার করবেন এবং নিজেকে সহায়তা করার সুযোগ দিবেন অন্য কাউকে,তখনএর ফলে একটি বিশ্বাসেঘেরা মুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হবে। আপনার সর্ম্পকে অন্যের তির্যক মন্তব্যকে প্রশ্রয় না দিয়ে,নিজের স্বকীয়তায় আস্থা রাখতে শিখুন। তাহলে দেখবেন নিজেকে মুক্ত অনুভব করছেন।
৬. লাইফ হচ্ছে জার্নি, গন্তব্য নয়-
আমরা যখন ‘কী ঘটা উচিত’,সেটা বাদ দিয়ে ‘কি ঘটতে পারে’ সেই সম্ভাবনায় মনোযোগ দেই, তখন জীবন আমাদের সামনে অনেক সু্যোগ এবং আনন্দের দরজা খুলে দেয়। তাই কোথায় যেয়ে পৌঁছাব সেটা না ভেবে,কেন এবং কিভাবে যাচ্ছি সেদিকে আলোকপাত করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লাইফ কঠিন হতে পারে,তাই বলে এটাকে বোঝার মত না দেখে, যত প্রকার রংয়ে রাঙানো যায় তত বেশি অর্থবহ মনে হবে।
৭. আপনি আপনার ভাবনার চেয়েও শক্তিশালী-
থমকে থাকার অনুভুতি নিসন্দেহে বাজে,কিন্তু এই অনুভুতিকে জোর করে দূর করার চেষ্টা না করে, আপনি আপনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন। আপনার চেষ্টার মাত্রা ছোট হতে পারে,কিন্তু যতক্ষণ আপনি সামনে এগোতে থাকবেন ততক্ষন পর্যন্ত এই ঠুনকো অনুভূতি আপনাকে অবশ করতে পারবে না। নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেন আপনার প্রচেষ্টা আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র মনে হলেও,এই মুহুর্তে আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিচ্ছেন আর এখনকার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
সাময়িক অনড় অবস্থাকে প্রাধান্য না দিয়ে,নিজের উপর আস্থা রেখে,মন খুলে শ্বাস নিন আর একে একে সমস্যাগুলো যা আপনাকে সামনে এগোতে দিচ্ছে না,সেগুলোকে ব্যাবচ্ছেদ করতে থাকুন। সমাধান আপনার কাছে ধরা দিতে বাধ্য।