back to top
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Iconস্টিভ জবসের সাফল্যের উপায়: তরুণদের জন্য ১০টি কার্যকর পরামর্শ

স্টিভ জবসের সাফল্যের উপায়: তরুণদের জন্য ১০টি কার্যকর পরামর্শ

অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের সাফল্যের কথা জানেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। আর এ কারণেই তার মৃত্যুর পরও প্রযুক্তি বিশ্ব তাকে আগের মতোই স্মরণ করে। অ্যাপেলের মতো একটি সফল প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো খুব একটি সহজ ব্যাপার কিন্তু নয়। কিন্তু স্টিভ জবস তার জীবদ্দশায় এই কাজটিকেই সম্ভব করে গিয়েছেন। প্রায় সব বিষয়ই তিনি দেখতেন গভীরভাবে। আর এই গভীর পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে গেছেন যা সবাইকেই যুগিয়েছে উৎসাহ। তরুণদের জন্য জবসের রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো তিনি সফলতার জন্য যে উপায়গুলো মেনে চলতেন। 

চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কী ছিল সেই উপায়গুলো। 

আপনি যা ভালোবাসেন তাই করুন 

আপনি যদি আপনার কাজকে ভালবাসতে না পারেন তাহলে সেই কাজে কোনোদিনই সফলতা আসবে না। যেমন- আপনার যদি পড়াশুনা করতে ভালো না লাগে, হাজার চেষ্টা করেও আপনাকে দিয়ে পড়াশুনা হবে না আর সেখানে রেজাল্ট ভালো করার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। আর যদি পড়তে ভালো লাগে আপনার বাসায় ১০জন মেহমান আসলেও আপনি পড়তে বসবেন, সেটা আপনার কাছে কোনো বাধাই মনে হবে না। একমাত্র কাজের প্রতি প্রচন্ড আবেগই পারে সফলতা নিয়ে আসতে। 

জবস একবার বলেছিলেন, প্রচন্ড আবেগ থেকে একজন মানুষ পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি কি উপদেশ দিয়ে গেছেন তা যদি বলতে বলা হয় তবে তিনি বলেছেন, ‘আমি হয় বাসে কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ নেব বা অন্যকিছু করবো, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সত্যিই কী করতে চাই তা খুঁজে বের করতে পারবো।’ বিষয়টি তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই এখন থেকে নিজের কাজকে ভালোবাসুন। 

ইতিবাচক চিন্তা করুন

‘ইতিবাচক চিন্তা সফলতার মেরুদন্ড’। জীবনের খারাপ সময়গুলোতে সাহসের সাথে মোকাবেলা করার প্রধান সহায়ক ব্যাপার হলো- ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আশা, উদ্যমতা জীবনের সবকিছুকেই সহজ করে তোলে। আমরা প্রতিদিন যা নিয়ে চিন্তা করি আমাদের Subconscious mind তাই গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। উদাহরণ দিয়ে যদি বলি তাহলে ব্যপারটা এমন যে, আপনি যদি ভাবেন আপনি “সুখী” তাহলে আপনার Subconscious mind সেটাই মনে করবে। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন ‘আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’ তাহলে আপনার Subconscious mind তাই কমান্ড হিসেবে গ্রহণ করবে এবং সেই অনুযায়ী ‘Reality’ বা বাস্তবতা তৈরি করবে। তাই সবসময়  Positive বা ইতিবাচক চিন্তা করুন। যখন আপনি আপনার পড়াশুনা, অফিস বা অন্য কোনো ব্যাপারে কর্মদক্ষতার ঘাটতি দেখবেন তখন ইতিবাচক মনোভাব আপনার মনে মোবাইলের ১০০% চার্জের মতো কাজ করবে।         

ব্যর্থতা মানেই পথের শেষ নয় বরং এটাই শুরু

একটা ছোট বাচ্চা যখন হাঁটতে শেখে সে বারবার পড়ে যায়, আবার উঠে দাঁড়ায়। এইভাবেই কিন্তু সে একটা পর্যায় গিয়ে হাঁটতে শেখে। কিন্তু সে যদি পড়ে যাবো এটা চিন্তা করে বসেই থাকতো তবে কখনোই হাঁটতে শিখতে পারতো না। পড়ে যাওয়া মানে শেষ হওয়া নয়পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোই হল ‘জীবন’। আমেরিকান লেখক ডেভিড শেংক একটি বই বের করেছিলেন, “দ্য জিনিয়াস ইন অল অব অ্যাস”। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আইনস্টাইন, পিকাসো, বেটোফেনের জিন আছে। আমরা সবাই জিনিয়াস, কিন্তু প্রকৃত জিনিয়াসরা একটা বিষয়ে এত মনযোগ দেন, এত সাধনা করেন, এত চেষ্টা করেন যে তার ওই জিনিসটা সক্রিয় হয়ে ওঠে। 

স্টিভ জবস একবার বলেছিলেন, জীবন মাঝে মধ্যে তোমাকে ইট পাটকেল মারবে, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলো না। স্টিভ জবস জীবনের প্রতিটি পথে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে সাফল্যের চূড়ায় আরোহন করেছেন। নিজের হাতে গড়ে তোলা অ্যাপেল কোম্পানি থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তবুও কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তার এই অদম্য মানসিকতাই তাকে করে তুলেছিল সবার থেকে আলাদা। স্টিভ জবস নিজের জীবনকে উপলব্ধি করেছিলেন। 

অ্যাপল থেকে চাকুরীচ্যুত হওয়ার ঘটনা ছিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া শ্রেষ্ঠ ঘটনা। আমার জীবনের সেরা একটি সময়ে প্রবেশের পথ করে দিয়েছিল এই ঘটনাটি।   – স্টিভ জবস

একসাথে হাজারটা জিনিসকে না বলুন

অ্যাপেল যা করেছে তা নিয়ে জবস যতটা গর্ববোধ করতেন ঠিক ততটাই গর্ববোধ করতেন অ্যাপেল যা যা এখনো করতে পারেনি। ১৯৯৭ সালে তিনি যখন অ্যাপেলে ফিরে আসেন তখন ৩৫০টি পণ্যসহ কোম্পানিটি গ্রহণ করেন এবং দুই বছরে পণ্যের সংখ্যা কমিয়ে ১০ এ নিয়ে আসেন। কিন্তু কেন করেছিলেন এমনটা? যাতে তিনি তার টিমকে দিয়ে সব পণ্যের উপর কাজ করাতে পারেন। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা  ঠিক এমনই। আমরা মনে করি যে একসাথে অনেক কাজ করতে পারাটা গর্বের। আসলে মোটেও তা নয়। মানুষের ব্রেন মাল্টিটাস্কিং উপযোগী নয়। মানুষের ব্রেন এক সময়ে একটা কাজেই ফোকাস করতে পারে। তাই এখন থেকে একটা সময় একটি কাজই করুন।  

অনেক কিছু করার জন্য যেমন আমি গর্বিত, তেমনি অনেক কিছু না করার জন্যও আমি গর্বিত। উদ্ভাবন মানেই হলো হাজারটা জিনিসকে ‘না’ বলা। – স্টিভ জবস 

বিশ্ব ভ্রমণ করুন

বিজ্ঞানীরা একবার গবেষণা করেছিলেন, ভ্রমণে মস্তিষ্কের পরিবর্তন কীভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। তারা একটি ভোলেন্টিয়ার টিমকে  শহরের বাইরে কিছুদিন অবস্থানের জন্য পাঠালেন। তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয় নিজেদের সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করে রাখার। ফিরে আসার পর তাদেরকে বেশ কিছু জটিল এবং সৃজনশীল কাজ করতে দেওয়া হয়। দেখা যায়, তাদের সৃজনশীল ভাবনার ক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কাজ শেখা কখনোই ক্লাসরুমের চার দেয়ালের মাঝে বা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক কিছু যা থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। আজকাল আমরা ঘুরতে যাই শুধু ফেইসবুকে ছবি শেয়ার করার জন্য বন্ধুরা দেখতে পাবে বলে।                 

ভ্রমণে বাড়ে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। একটু বেশি সময় ধরে একটানা পড়াশুনা করলে দেখা যায় আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে আসে অর্থাৎ মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন যতই চেষ্টা করা হোক না কেন মস্তিষ্ক যেন আর কথায় শুনতে চায় না। কারণ সে তখন চাইছে বিশ্রাম। তখন মস্তিষ্কের বিনোদনের জন্য কাছের কোনো জায়গা থেকে একটু বেড়িয়ে আসা উচিত। 

অন্যের কাছ থেকে শিখতে লজ্জা পাবেন না

ধরুন সামনে পরীক্ষা, আপনি একটা ম্যাথ পারছেন না কিন্তু আপনার বন্ধু আপনার থেকে ভালো ম্যাথ পারেন। এখন আপনি কি করবেন বন্ধুর থেকে ম্যাথ শিখে নিবেন নাকি ইগো দেখিয়ে বলবেন, আমি ওর থেকে কম নাকি? কখনোই এই ভুল করতে যাবেন না, এতে করে ক্ষতি আপনারই বেশি হবে। আমাদের একটা অভ্যাস হলো আমরা অন্যের কাজ থেকে শিখতে লজ্জা পাই,আমাদের ইগোতে লাগে। জীবনে সফল হতে চাইলে শেখার শেষ নেই। আপনি অন্যের কাছ থেকে যত পারেন নতুন কিছু  শিখতে থাকুন, যা আপনাকে সাফল্যের আরো কাছাকাছি পৌঁছে দেবে। 

স্টিভ জবস যখন ছাত্র ছিলেন তখন তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্লাসে সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। তিনি ২০ বছর বয়সে বিভিন্ন কোম্পানি যেমন এইচপিতে  কাজ শিখেছেন। 

সফল মানুষদের সাথে থাকুন 

স্টিভ জবস শুধু Steve Wozniak এর সাথেই  কাজ করতেন তা কিন্তু নয়। তিনি আরো অনেক সফল মানুষদের সাথে উঠা বসা করতেন। যেমন- পিক্সার সিইও, টিম কুক। ফলে তাঁর জীবনে সফলতার পথটা খুব একটা কঠিন হয়নি। মনবিজ্ঞানীদের মতে- আমরা প্রতিদিন যেমন মানুষের সাথে থাকবো আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক সেভাবেই কাজ করবে। আমাদের আশেপাশের মানুষের কথার প্রভাব আমাদের জীবনে পড়ে। আপনার চারপাশ যদি সফল মানুষের বা ইতিবাচক  চিন্তাভাবনা করে এমন মানুষের আনাগুনা বেশি থাকে তাহলে আপনি ভবিষ্যতে  সফল হতে সহযোগিতা পাবেন আর অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী, কৌশলী এবং সৃজনশীল হতে পারবেন। সেহেতু সফল এবং ইতিবাচক মানুষদের সাথে থাকুন যতো পারবেন।   

ঝুঁকি নিন 

আপনি চিন্তা করলেন আপনি একজন উদ্যোক্তা হবেন। তাহলে আপনাকে ঝুঁকি নিতেই হবে।  আত্মবিশ্বাসী মানুষজন খুব সহজেই ঝুঁকি নিতে পারেন, নিতে পারেন দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্তও কারণ তারা নিজের উপর অনেক আস্থা রাখেন। এবং এই গুনটিই তাদেরকে সফল করে তোলে।  স্টিভ জবস তাঁর নতুন প্রডাক্ট প্রসারের জন্য অনেক রিস্ক নিয়েছিলেন। তিনি আইফোন বের করার সময় অনেকে তাকে  নিষেধ করছিলেন কিন্তু তিনি রিস্ক নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। এবং তাতে তিনি সফলও হন।

আপনি যদি জীবনে সঠিক সময়ে ঝুঁকি না নিতে জানেন তবে আপনার সফলতা একটু দেরিতেই আসবে।  

> আরও পড়ুনঃ উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ারেন বাফেটের ৯টি সেরা টিপস

সংযোগ তৈরি করুন

স্টিভ জবস  ক্যালিগ্রাফি শিখেছিলেন।  কিন্তু তখনও তিনি জানতে না এটা তার কোনোদিন কাজে লাগবে কিনা। কারণ ম্যাকিনটশ (এক ধরনের ব্যক্তিগত কম্পিউটার) বানানোর আগ পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত জীবনে এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ ছিল না। অ্যাপেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সময়েএই ক্যালিগ্রাফি বাস্তব জীবনে তার কাজে এসেছিল।    

জবস একবার বলেছিলেন, “বিভিন্ন বিষয়কে যুক্ত করাই হচ্ছে সৃজনশীলতা”। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, জীবনে প্রচুর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি এমন অনেক কিছুই দেখেন এবং বুঝতে পারেন যা অন্যরা পারে না।  জবস ভারত এবং এশিয়া ভ্রমণ করেছেন। তিনি ডিজাইনিং এবং আতিথেয়তা শিখেছেন। আপনি যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তার বাইরের বিষয়গুলোও শিখুন। যেমন- ডিবেটিং, প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরি, ইত্যাদি। আপনার এই সমস্ত বিষয়ের পারদর্শিতাই আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। 

নেক্সটে কাজ করার সময় জবস্‌ বলেছিলেন, “আমি যখন বেঁচে থাকব না, তখন আমার সৃজনশীল কাজের জন্য সবাই বাহবা দেবে। কিন্তু কেউ জানবে না যে আমিও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারি।”

২০০৫ সালে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন- “আজ আমার পালা ফুরোল। তোমাদের সামনে আজ এক নতুন দিগন্ত। এগিয়ে যাও নবীন প্রাণের উচ্ছ্বাসে। তোমাদের কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া।” 

ক্ষুধার্ত থেকো। বোকা থেকো।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular