আত্মবিশ্বাস মানুষের ভেতরকার এমন এক ক্ষমতা, যা দিয়ে মানুষ কঠিন কাজ সহজেই করে ফেলতে পারে, অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা যায়। আমি পারব এই একটি কথা মনেপ্রানে বিশ্বাস করার নামই আত্মবিশ্বাস। একটা গল্প মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত আছে যে, একদা এক লোক একটা বিশাল হাতিকে ছোট এক দড়ি দিয়ে বাঁধতে দেখে আরেকজন তাকে কারন জিজ্ঞেস করলে হাতির মালিক যা বললেন শুনলে আপনি অবাকই হয়ে যাবেন। হাতির মালিক বললেন, ছোটবেলা থেকেই হাতির পায়ে এমন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতাম, তখন তো হাতি ছোট ছিল তার এই দড়ি ছেঁড়ার ক্ষমতা ছিল না, আস্তে আস্তে হাতি বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়নি যে সে এখন এই দড়ি ছেঁড়ার মত শক্তিশালী! এটাই আত্মবিশ্বাসের ক্ষমতা। আত্মবিশ্বাস নয় নিজের মধ্যকার ক্ষমতার কারনেই পৃথিবীতে এতো এতো ভালো কাজের উদাহরন রয়েছে।
এই পৃথিবীতে সব মানুষ কিন্তু আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহন করে না। এই আত্মবিশ্বাস জন্মানোর জন্য মানুষকে কিছু কাজ বা অনুশীলন করতে হয়। আত্মবিশ্বাস জন্মানোর বা বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখন নিশ্চয় ভাবছেন, সবইতো বুঝলাম কিন্তু আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কি উপায় তাতো জানি না?? আসুন তবে জেনে নেয়া যাক আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কিছু সহজ উপায়।
নিজের ক্ষমতাকে চিনুন
সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো বিশেষ গুন দিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে নিয়ে সবসময় হীনমন্যতায় না ভুগে নিজের ভেতরকার ক্ষমতাকে চিনুন। কোনো মানুষই পরিপূর্ণ না সেটা মেনে নিন। আবার একটা মানুষ সব কাজ পারবে না সেটাও মাথায় রাখুন। তাই নিজেকে চিনুন ও নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করুন সফলতা আসবেই।
নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলুন
মানুষের জীবনে চলার পথে আমরা অনেক রকম মানুষের সঙ্গ পেয়ে থাকি। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে ইতিবাচকতা থাকবে তেমন কোনো কথা নেই। আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা প্রায় সবকিছুকেই নেতিবাচকভাবে ভাবতে ভালোবাসে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে ঠিক রাখতে হলে এমন নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে।
সেই সাথে প্রায় সময়ই মানুষ আপনাকে বা আপনার কাজ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকবে তাতে কিছুতেই প্রভাবিত হওয়া চলবে না, সেটাকেও পজিটিভভাবে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের সমালোচনা আছে বলেই আমরা আমাদের ভুল/ ত্রুটিকে সংশোধন করার সুযোগ পাই।
ছোট ও সহজ লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
যেকোনো কাজ করার আগে তার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হয়। এতে করে কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে একদম কাজের শুরুতেই বড় কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শুরু না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মানে হলো আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে কাজ শুরু করুন। এর ফলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যেমন সহজ হবে তেমন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
নিজের পছন্দের কিছু শিখুন
বর্তমান সময়ে মানুষকে পড়াশুনার পাশাপাশি আরো কিছু বাড়তি গুনের অধিকারী হতে হয়। যেমনঃ কম্পিউটার চালনায় দক্ষ, গ্রাফিক্সের কাজ বা লেখালেখি ইত্যাদি নানাধরনের টেকনিক্যাল কাজ জানাটা সবার মধ্যে আপনাকে আলাদা করে তুলবে। সেই জন্য আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে সেটা নিয়ে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় দিন, কাজটা শিখে ফেলুন। তারপর দেখুন আপনার মধ্যে কতখানি আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
পরিষ্কার ও পরিপাটি থাকুন
সবসময় পরিষ্কার ও পরিপাটি থাকাটা আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার জন্য জরুরী। দামি জামা-কাপড় পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই, আপনার যা আছে সেগুলোই পরিস্কার রাখাটাই মুখ্য বিষয়। আমরা অনেক সময় আমাদের শারীরিক গঠন নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি, যেটা মোটেই করা যাবে না। কারন আপনার শারীরিক গঠন তো আর আপনার হাতে নেই। সেটা একান্তই সৃষ্টিকর্তার হাতে, সুতরাং সৃষ্টিকর্তা যা দিয়েছেন তাই নিয়ে কৃতজ্ঞ ও খুশি থাকতে হবে। মনে রাখবেন, মানুষের আকার, আকৃতি, চেহারার চেয়ে তার কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবীর কাছে। আত্মবিশ্বাসী মানুষরা কাজ নিয়েই বেশি ভাবে।
নিজেকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন
অনেক সময় ছোট-খাটো ভুল আমাদের দ্বারা হয়েই থাকে, তাই বলে কি সারাদিন আপনি সেই ভুল ধরে বসে থাকবেন?? সেই আক্ষেপ নিয়ে পরে থাকবেন? আপনার দ্বারা ভুল কেন হল সেই জন্য নিজেকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন।
তার পাশাপাশি অন্য মানুষের সামনে নিজের ভুলত্রুটি নিয়ে খুব বেশি কথা না বলাই ভালো। এর ফলে মানুষ আপনার দুর্বলতা যেমন জেনে যাবে আবার দরকারে আপনার দুর্বলতাকে পুঁজি করে আপনারই বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা ও বিশ্রাম করা জরুরি
শরীর ও মন ঠিক থাকলে মনযোগ দিয়ে কাজ করা যায়, যার ফলাফল হয় কাজে সফলতা। কিছুদিন কাজের পরে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন, এতে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি করুন।
সামাজিক হতে শিখুন
মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সামাজিক জীব। কিন্তু আমরা অনেকেই বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিশতে চাই না, নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাবে। এভাবে আমাদের মধ্যকার আত্মবিশ্বাস আরও কমতে থাকে। তাই মানুষের সাথে মিশতে হবে এতে আশেপাশের জগৎ সম্পর্কে যেমন আপনার ধারনা হবে তেমন নিজের মধ্যের বিশ্বাসও বাড়বে। কোনো কাছের মানুষের কাছে নিজের মনের কথা বললে চাপ-দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।
উত্থান-পতনকে স্বাভাবিকভাবে নিন
কোনো মানুষের জীবনই একদম সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে যাবে না। জীবনে উত্থান-পতন থাকাটাই বরং খুব স্বাভাবিক এক নিয়ম। জীবনের উত্থান-পতনকে মেনে নিতে হবে, সেটা মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। কোন পতন কিন্তু জীবনের শেষ না, কোন ভুল করলে ভেঙ্গে না পরে বরং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে। আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না।
নিজের প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তিগুলোকে লিপিবদ্ধ করুন
একটা ডায়েরিতে নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিগুলোকে লিখে রাখুন। সেটা হতে পারে কোন ছোট প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি। অনেক সময় আমাদের কোন অপ্রাপ্তিতে আমাদের আত্মবিশ্বাস একদম কমে শূন্যের কোঠায় চলে যায়। তখন আপনি ডায়েরি খুলে দেখতে পারবেন আপনার আগের প্রাপ্তিগুলোকে, যা আপনার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।
আত্মবিশ্বাস বাড়ানো একদিনের কাজ নয়। ধৈর্য ধরে নিয়মিত আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অনুশীলন করে যেতে হবে।আবার এমনও না যে, একবার আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলে তা আর কমে যেতে পারবে না। আমাদের জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসতে পারে যার ফলে আমাদের আত্মবিশ্বাস একদম শূন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে। সেইসব কঠিন অবস্থায় দিশেহারা না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে নিজের উপর বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাস যতটা সম্ভব ধরে রাখতে হবে।