“তোমার ব্যাপারে আজ এমন কিছু শুনলাম, বিশ্বাসই হচ্ছিল না…”
এমন কোনো বাক্য শুনে আপনি থমকে গেছেন কখনো? নিজেকে প্রশ্ন করেছেন—“আমি কী ভুল করেছি?” অথচ আপনি ভালো কিছু করছিলেন, নিজের মতো করে বাঁচছিলেন, সৎভাবে পথ চলছিলেন। তখনই হঠাৎ করে চারপাশে শুরু হয় চুপিচুপি কথা—ব্যঙ্গ, সন্দেহ, গসিপ।
আপনি একা নন। জীবনের কোনো না কোনো সময় আমরা সবাই এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। প্রশ্ন হলো—কেন মানুষ আমাদের নিয়ে বাজে কথা বলে? এবং আপনি কিভাবে এই মানসিক চাপ সামলাবেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে?
চলুন, গল্প আর বাস্তব উদাহরণে বুঝে নিই সেই কারণগুলো—যে কারণেই মানুষ আপনার পেছনে কথা বলে।
১. আপনি আলাদা কিছু করলে
বাংলাদেশে অনেকেই এখনো ভাবে, “সবার মতো না হলে নিশ্চয় কিছু একটা গড়বড়!”
যেমন:
- আপনি চাকরির বদলে নিজের স্টার্টআপ শুরু করলেন।
- মেয়ে হয়ে একা বিদেশে পড়তে গেলেন।
- পেশাগত জীবন বেছে নিলেন বিয়ের আগেই।
→ তখনই শুরু হয় সমালোচনা:
“নিজেকে বড় কিছু ভাবছে!” “অন্যরকম মেয়ে!” “সমাজের নিয়ম মানে না!”
কেন হয়?
অধিকাংশ মানুষ ভিন্ন কিছু দেখলে ভীত বা হিংসুটে হয়ে পড়ে, কারণ তারা নিজেরা সে সাহস দেখাতে পারেনি।
২. আপনি সফল হলে
যখনই আপনি একটু এগিয়ে যান, কেউ না কেউ সন্দেহ করবে—“এত কিছু এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব?”
একজন নারী উদ্যোক্তা যখন প্রথম আয় করেন, আত্মীয় প্রশ্ন তোলে—“টাকাটা ঠিক পথে এসেছে তো?”
কেন হয়?
অনেকেই নিজের সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করতে অন্যের সফলতা নিয়ে বাজে কথা বলে। আপনি যা করে দেখিয়েছেন, সেটা তারা ভাবতেও পারেনি।
৩. আপনি ‘না’ বলতে শিখলে
সময়, মানসিক স্বাস্থ্য বা আত্মসম্মান রক্ষায় আপনি যদি কিছু অনুরোধে ‘না’ বলেন, তখনই অনেকের মুখ ভার হয়ে যায়:
“আগে তো সব করত, এখন বোধহয় অহংকারী হয়ে গেছে!”
কেন হয়?
কারো কারো ভালোবাসা থাকে না, থাকে কেবল আপনার ওপর অধিকারবোধ। যখন আপনি সহজলভ্য থাকেন না, তখনই তারা খুশি থাকে না।
৪. আপনি নিজের মতো জীবন বেছে নিলে
বিয়ের বাইরে ক্যারিয়ার? একা ফ্ল্যাটে থাকা? প্রচলিত রীতির বাইরে জীবনযাপন?
→ আপনার চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
কেন হয়?
যারা নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচার সাহস রাখে না, তারা অন্যের সাহসিকতা হজম করতে পারে না।
৫. আপনি চুপ থাকলেও হবে সমালোচনা
আপনি যদি খুব শান্ত ও একা থাকেন, তাহলেও মানুষের কথা থেমে থাকবে না:
- “সবসময় একা থাকে, নিশ্চয় অহংকারী।”
- “ও চুপচাপ কেন? কিছু লুকায় নিশ্চয়।”
কেন হয়?
মানুষ অন্যের চরিত্র বিশ্লেষণ করে নিজের জীবনের শূন্যতা ভুলে থাকতে চায়।
তাহলে আপনি কী করবেন?
১. বুঝে নিন—চর্চার যোগ্য আপনি, এটাই আপনার শক্তি
ফলবান গাছেই পাথর ছোঁড়া হয়। আপনি আলো ছড়াচ্ছেন বলেই কিছু মানুষের চোখে জ্বালা।
২. ব্যাখ্যা দেওয়া বন্ধ করুন
সবাইকে আপনার পথ বোঝানোর দায় আপনার নয়। নিজের কাজ, মনের শান্তি ও লক্ষ্যেই মন দিন।
৩. মানসিকভাবে শক্ত হোন
- প্রতিদিন ৫ মিনিট মেডিটেশন করুন
- Journaling শুরু করুন
- প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন
৪. “সাপোর্ট সিস্টেম” তৈরি করুন
সেই মানুষদের খুঁজে নিন যাদের সঙ্গে কথা বললে আপনি নিজেকে মূল্যবান মনে করেন।
বন্ধু, ভাই, আপু, শিক্ষক—হোক না একজন, কিন্তু থাকুন পাশে।
৫. নিজেকে ছোট মনে করা বন্ধ করুন
আপনার জীবন আপনি চালাচ্ছেন। আপনি যা করছেন তাতে যদি কারও ক্ষতি না হয়, তাহলে আপনাকে ‘সবার মতো’ হতে হবে কেন?
একটি বাস্তব গল্প
তানভীর, চট্টগ্রামের ছেলে।
প্রথমে আউটসোর্সিং, পরে নিজের ডিজিটাল এজেন্সি। সফলতার মুখ দেখার পর পাড়ার লোকেরা বলতে লাগলো—
“এই বয়সে এত টাকা! কিছু একটা তো আছে!”
তানভীর প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলেন। পরে নিজেকে বুঝিয়েছেন—
“ওরা আমার ঘুমহীন রাত দেখেনি। বাজে কথা বলছে মানে আমি আলো ছড়াচ্ছি।”
মানুষ শুধু সেই নিয়েই কথা বলে যাকে তারা “নোটিশ” করে।
আপনি যত বড় হবেন, পেছনের ফিসফাস তত বাড়বে।
স্মরণে রাখুন—
“মানুষ যা বোঝে না, তা নিয়ে ভয় পায়। আর যা হজম করতে পারে না, তা নিয়ে গসিপ করে।”
তাই বাজে কথার নয়, নিজের লক্ষ্য ও মানসিক শান্তির দিকে নজর দিন।