একজন মানুষ—যিনি নিজের পোশাকের ডিজাইন নিয়ে প্রথম দিকেই শুনেছিলেন, “তুমি তো একজন র্যাপার, ফ্যাশনের কিছু বোঝো?”
একজন শিল্পী—যিনি একাধিকবার মিডিয়ার বিতর্কিত চরিত্র হয়েও নিজেকে গড়ে তুলেছেন বহু বিলিয়ন ডলারের ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে।
এই মানুষটি কানিয়ে ওয়েস্ট (Ye/Kanye West), এবং তার গড়া ফ্যাশন ব্র্যান্ড Yeezy—শুধু একটি জুতা বা কাপড়ের লোগো নয়, বরং একটি সাহসী চিন্তার প্রতীক।
আজকের লেখাটি শুধু কানিয়ের কথা নয়—এটা তাদের কথা, যারা নিজেদের ইউনিক আইডিয়া নিয়ে এগোতে চায়, কিন্তু বারবার শুনতে পায়:
“তুই পারবি না।”
প্রথম ‘না’—আর সেখান থেকেই শুরু
কানিয়ে ওয়েস্ট শুরু করেছিলেন র্যাপার হিসেবে। কিন্তু তার আগ্রহ ছিল ফ্যাশন ডিজাইনে। তিনি Adidas বা Nike-এ গিয়ে নিজের ডিজাইন প্রেজেন্ট করতেন। কিন্তু সবাই বলতো, “তুমি তো সেলিব্রিটি, ডিজাইনিং আমাদের জিনিস।”
কিন্তু তিনি থামেননি।
একসময় Adidas তাকে সুযোগ দেয়—সেখান থেকে শুরু হয় Yeezy ব্র্যান্ডের জন্ম।
Yeezy আজ শুধু একটি স্নিকারস না, বরং এটি বলার একটি উপায়—“আমি আলাদা, আর এতে আমার গর্ব আছে।”
তার ব্যবসার মূলমন্ত্র—
“আপনি ইউনিক হলে, বাজার আপনাকে খুঁজে নেবে”
Yeezy-এর ডিজাইন একেবারেই নিয়ম ভাঙা। বিশাল সোল, ডেস্যাচুরেটেড কালার, অদ্ভুত কাটিং—যা অনেকের কাছেই “আনফ্যাশনেবল”।
কিন্তু কানিয়ে বলেছিলেন—
“আমি বাজারের নিয়ম মানতে আসিনি। আমি বাজারটাই বদলাতে এসেছি।”
এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে ভিন্ন করে তোলে।
তিনি কখনো প্রথাগত ফ্যাশন স্কুলে যাননি। কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে গড়ে তুলেছেন এমন একটি ব্র্যান্ড, যার একেকটি শু বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকায়, আর রিলিজ হওয়ার ১০ মিনিটেই স্টক আউট হয়ে যায়!
বাংলাদেশি উদাহরণ: নিজেদের স্টাইল ও আইডিয়ায় ভরসা রাখা তরুণরা
আমাদের দেশেও এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছেন, যারা নিজেরা ইউনিক কিছু করতে চান। যেমন—
১. Bohu.store
একদল তরুণ নকশায় এক্সপেরিমেন্ট করে হ্যান্ডমেড জুয়েলারি বানায়। সব পিস ইউনিক। কেউ বলেছিল, “এই ডিজাইনে কেউ কিনবে না।”
কিন্তু এখন তারা ঢাকার বাইরে থেকেও অর্ডার পাচ্ছে।
২. Ekattor Streetwear
বাংলাদেশের লোকাল কালচার ও ভাষা দিয়ে ডিজাইন করা কাপড়। হুডিতে লেখা, “ভাইয়ের কষ্ট, ভাই জানে।”
এই রকম ইউনিক মেসেজ দিয়ে তারা তরুণদের মনে জায়গা করে নিচ্ছে।
নিজের ইউনিকনেসকে কীভাবে ব্র্যান্ড বানাবেন—কানিয়ের থেকে শেখা ৫টি পাঠ
১. “নিজের চেয়ে কেউ ভালো জানে না”—নিজের ইনস্টিংককে বিশ্বাস করুন
সবাই না বলতে পারে, কিন্তু আপনি জানেন—আপনার ভাবনা কোথা থেকে এসেছে।
২. “পারফেকশন না, এক্সপ্রেশন জরুরি”
ইউজি ডিজাইনের অনেক কাজ প্রথমে অপূর্ণ মনে হতো, কিন্তু সেগুলোই হয়ে গেছে ট্রেন্ড।
৩. “সবার জন্য নয়, ঠিক তাদের জন্য”—নিশ মার্কেট ধরুন
Yeezy কখনোও সব বয়সী মানুষের জন্য না। এটা তরুণদের জন্য, যারা ট্র্যাডিশন ভাঙতে চায়।
আপনিও শুরু করতে পারেন নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির জন্য—জেমন স্টুডেন্ট, জেনারেশন জেড বা লোকাল আর্ট লাভার।
৪. “আত্মবিশ্বাস মানেই দামি ক্যাম্পেইন না”—আপনি নিজেই সবচেয়ে বড় মার্কেটার
কানিয়ে নিজেই নিজের মুখপাত্র ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা বিশ্বাস করতেন, খোলাখুলি বলতেন।
আপনি নিজের গল্প, নিজের প্রোডাক্ট—নিজেই যতটা খোলামেলা করে বলতে পারেন, অন্য কেউ পারবে না।
৫. “নকল নয়, নিজস্বতা”—ভয় নয়, ভয়ডেকে বলা
Yeezy কখনো Nike-এর কপি ছিল না। সেটা ছিল নিজের চোখে দেখা এক ভবিষ্যৎ, যার পোশাক মানুষ পরবে।
আপনিও যদি শুধু “চলমান ট্রেন্ড” না দেখে নিজের চিন্তা থেকে কিছু বানান, তবেই তৈরি হবে সত্যিকারের ব্র্যান্ড।
স্বপ্নে একা থাকাটাই স্বাভাবিক
আপনি যদি আজ কিছু ভিন্ন ভাবেন, কেউ যদি সেটাকে হাস্যকর মনে করে, মনে রাখবেন—“যারা পৃথিবী বদলায়, তারা শুরুতে প্রায়ই একা থাকে।”
কানিয়ে ওয়েস্ট আমাদের দেখিয়েছেন—আপনি যতটা প্যাশনেট, ততটাই ভয়ডরহীন হতে হবে। ব্র্যান্ড গড়তে টাকা বা শিক্ষাগত সার্টিফিকেট নয়—আত্মবিশ্বাস আর সততার অভিব্যক্তিই আসল জিনিস।
তাই এখন প্রশ্ন—আপনিও কি এমন কিছু তৈরি করতে চান, যা আপনার মতনই ইউনিক?
তাহলে অপেক্ষা নয়, শুরু করুন।
কারণ কেউ যদি আপনার স্বপ্নে বিশ্বাস না করে, সেটাই তো প্রমাণ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ।