নাম তার ইকরামুল হাসান শাকিল। কিন্তু আপনি তাকে চেনেন একজন সাহসী স্বপ্নবাজ হিসেবে—যিনি শুধু পাহাড় নয়, নিজেকে জয় করতে শিখেছেন। কেউ যখন বলে, “বাংলাদেশ থেকে হিমালয়ের চূড়া?” তখনই শাকিল প্রমাণ করেন—অসম্ভব বলে কিছু নেই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালু থেকে শুরু হয়েছিল তার যাত্রা, আর শেষটা? পৃথিবীর ছাদ—মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে।
কক্সবাজার থেকে শুরু হওয়া অদম্য যাত্রা
২০২৪ সালের শেষ দিকে, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে শাকিল ঘোষণা দেন—তিনি হেঁটে যাবেন কক্সবাজার থেকে হিমালয়ের শীর্ষে। এটি শুধু একটি শারীরিক অভিযান ছিল না, বরং এক মানসিক প্রস্তুতিরও গল্প। ৪৬ দিনে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি পৌঁছান নেপালের লুকলায়। পাহাড়ের জগতে তখনো তার মূল যাত্রা শুরুই হয়নি।
কাঠিন্যের চূড়া ছুঁয়ে দেখার গল্প
লুকলা থেকে শুরু হয় খাঁটি পর্বতারোহণ। ঠান্ডা হাওয়া, অক্সিজেনের অভাব, বরফের দেয়াল, ছিন্নভিন্ন খাগড়া পথ—প্রতিটি ধাপেই মৃত্যুর আশঙ্কা। কিন্তু শাকিলের চোখে ছিল একটাই লক্ষ্য—৮,৮৪৯ মিটার উঁচু সেই বিন্দুটি, যেখান থেকে গোটা পৃথিবীকে ক্ষুদ্র মনে হয়। তাঁর এই মিশন ছিল শুধু নিজের জন্য নয়, বরং তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের তরুণদের কাছে একটিই বার্তা পৌঁছে দিতে—”তুমি পারো!”
শাকিল কে?
ইকরামুল হাসান শাকিল, চট্টগ্রামের ছেলে, যিনি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু করার। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি ছিল পাহাড়ে ঘোরা, দৌড়ানো আর নিজেকে ভাঙার চেষ্টা। পর্বতারোহণে হাতেখড়ি নেপালের কিছু ছোট পাহাড় দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেন সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার—মাউন্ট এভারেস্ট।
কেন এই যাত্রা?
শাকিলের এই যাত্রা ছিল একটি প্রতীকী প্রতিবাদ—আধুনিক ডিজিটাল যুগে যখন আমরা স্যান্ডা, ট্রেন্ডিং গসিপ আর মুহূর্তের বিনোদনে ডুবে যাচ্ছি, তিনি হাঁটলেন আত্মজয়ের পথে। তিনি প্রমাণ করলেন, পর্দার পেছনে রিয়েল লাইফে যেসব গল্প তৈরি হয়, তা কতটা বেশি শক্তিশালী হতে পারে।
যেসব চ্যালেঞ্জকে হার মানিয়েছেন তিনি
- ৮,৮৪৯ মিটার উচ্চতায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সংকট
- ক্রমবর্ধমান ঠান্ডা ও বরফঝড়
- মানসিক দোটানা ও ক্লান্তি
- অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
- পরিবার-বন্ধুদের নিরাপত্তা-আশঙ্কা
তারপরও থামেননি। কারণ, তিনি জানতেন—যারা শিখরে পৌঁছাতে চায়, তাদের হাঁটা থামালে চলে না।
এভারেস্ট জয়: ইতিহাসের পাতায় শাকিল
২০২৫ সালের মে মাসে শাকিল পৌঁছান এভারেস্টের চূড়ায়। লাল-সবুজের পতাকা হাতে দাঁড়ানো সেই ছবিটি এখন দেশের অসংখ্য তরুণের অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাঁর জয় শুধু একজন ব্যক্তির নয়—এটি বাংলাদেশের সম্ভাবনার জয়।
শাকিলের বার্তা তরুণদের জন্য
“আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এমন তরুণ-তরুণী আছে, যারা শুধু সুযোগ পেলে বিশ্বমঞ্চে দেশকে তুলে ধরতে পারে। আমি একা নই, আমরা সবাই পারি।”
কী শিখলাম আমরা?
- শৃঙ্খলা, ধৈর্য ও প্রস্তুতির মাধ্যমে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
- ট্রেন্ডিং কনটেন্ট নয়, ট্রান্সফর্মিং চিন্তা দরকার।
- নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখলে পাহাড়ও নত হয়।
আপনারও কি আছে কোনো শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্ন?
তবে আজ থেকেই প্রস্তুতি নিন। কারণ, আপনার ভেতরের শাকিল শুধু একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে—”আমি পারব।”