“রাতেই শরীর কেমন কেমন লাগছিল, সকালে উঠে দেখি গা গরম আর মাথা ভার।”
ঢাকার মুগদার বাসিন্দা শামীম ভাই এই কথাগুলো বলছিলেন তার অফিসের সহকর্মীকে। ডাক্তার দেখিয়ে জানলেন, এটা ভাইরাল জ্বর—সাধারণত হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়া একধরনের জ্বর, যেটি ভাইরাসের কারণে হয়।
ভাইরাল জ্বর শুধু শীতকালে নয়, বর্ষা বা ঋতু পরিবর্তনের সময়ও খুব বেশি দেখা যায়। একবার আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, অফিস-স্কুলের রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। তাই আজকের লেখায় জানাবো—ভাইরাল জ্বরে করণীয়, কীভাবে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়, এবং কোন লক্ষণগুলোতে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যেতে হবে।
ভাইরাল জ্বর আসলে কী?
ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণজনিত জ্বরকেই ভাইরাল ফিভার বলা হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- গা ব্যথা, মাথা ব্যথা
- হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর
- গলা ব্যথা বা কাশি
- নাক দিয়ে পানি পড়া, সর্দি
- দুর্বলতা ও ক্ষুধামান্দ্য
সাধারণত এই জ্বর ৩-৭ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু সঠিক বিশ্রাম ও যত্ন না নিলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।আ
কেন ভাইরাল জ্বর ছড়ায়?
- ঋতু পরিবর্তনের সময় হঠাৎ আবহাওয়া বদল।
- জনবহুল জায়গায় ভাইরাস সংক্রমণ।
- দূষিত পানি বা খাবার।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টির অভাব।
উদাহরণস্বরূপ, মিরপুরের নুসরাত আপা অফিসে সহকর্মীর সর্দি-কাশির সংস্পর্শে আসার পর কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হন। কারণ ভাইরাস সাধারণত কাশি-হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়।
ভাইরাল জ্বরে করণীয় (ঘরে বসে যত্ন)
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় দিন। যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন।
২. প্রচুর পানি ও তরল খাবার খান:
শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। লেবুর শরবত, গরম স্যুপ বা ডাবের পানি উপকারী।
৩. হালকা ও পুষ্টিকর খাবার:
গরম খিচুড়ি, ডাল, সেদ্ধ সবজি, ডিম খেতে পারেন। তেল-ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. গরম পানির ভাপ:
নাক বন্ধ বা সর্দির সমস্যা হলে গরম পানির ভাপ নিন।
৫. প্যারাসিটামল সেবন করুন (প্রয়োজনে):
ডাক্তাররা সাধারণত হালকা জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে বলেন।
৬. লবণ পানির গার্গল:
গলা ব্যথা বা কাশির জন্য দিনে ২-৩ বার লবণ মিশ্রিত গরম পানির গার্গল উপকারী।
কোন লক্ষণে ডাক্তার দেখানো জরুরি?
- জ্বর ১০২°F-এর বেশি এবং ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
- শরীরের ব্যথা ও দুর্বলতা অস্বাভাবিক হলে।
- শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা বা অবিরাম কাশি থাকলে।
- শিশু, গর্ভবতী মহিলা বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর হলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দ্রুত সুস্থ হওয়ার টিপস
- পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) নিশ্চিত করুন।
- লেবু ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খান।
- ধুলোবালি বা জনবহুল জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উদাহরণ
ঢাকার গুলশানের অফিসকর্মী আরিফ ভাই ৫ দিন ধরে ভাইরাল জ্বরে ভুগছিলেন। ডাক্তার বলেন, সঠিক খাবার ও বিশ্রামই সবচেয়ে বড় ওষুধ। তিনি বলেন—
“আমি প্রথমে ভাবতাম অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই জ্বর সেরে যাবে। কিন্তু ডাক্তার জানালেন, ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।”
ভাইরাল জ্বরকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি সাধারণত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরকে দুর্বল করে দেয়। সঠিক বিশ্রাম, পানি পান, পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সুস্থ হয়ে ওঠা সহজ হয়।
যখন জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়, তখন দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন—ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বরং শরীরকে স্বাভাবিকভাবে ভাইরাস মোকাবিলার সুযোগ দেওয়াই মূল চিকিৎসা।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সামান্য সচেতনতা অনেক বড় সমস্যা এড়াতে পারে। যেমন—সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া।
নিজের শরীরের কথা শুনুন।
যখন শরীর ক্লান্ত বা অসুস্থ লাগে, তাকে বিশ্রাম দিন। কাজ বা ব্যস্ততা পরে করা যাবে, কিন্তু স্বাস্থ্য হারালে সবই অর্থহীন হয়ে যাবে।