প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত কত কাজই না আমরা সবাই করে থাকি। কতরকম পরিকল্পনা থাকে ভবিষ্যৎ নিয়ে তবে তা অবশ্য আমাদের সবারই থাকে। এবং আমরা সবাই একটি জিনিসের প্রতি আসক্ত আর তা হলো ”সফলতা”। আবার দেখা যায় পৃথিবীর ৮০% ভাগ মানুষের ”সফলতা অর্জনের পরিকল্পনা” শুধু স্বপ্ন বা মুখেই রয়ে যায় এর কারণ তারা কে? জীবনের উদ্দেশ্য কিংবা জীবনের গন্তব্য কোথায় এই সম্পর্কেই কোনো ধারণা ছাড়াই দিবা রাত্রি স্বপ্ন দেখে যায় প্রতিনিয়ত। জীবনে পথ চলার শুরুতেই এসব কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে, যা আমাদের কে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে আরো কয়েকগুনে। অনেকের মনে হতে পারে জীবনে সফলতা অর্জনের পিছে এই প্রশ্ন গুলোর কি ভূমিকা। বেশ! তবে চলো মিলিয়ে নেই আমাদের জীবনে প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানা কেনো এতটা আবশ্যক।
তুমি কে এবং তোমার মূল্য কতটুকু?
নিজেকে জানা শুধু যে আমাদের উচিৎ তাই নয়, এটা আমাদের দায়িত্ব। একটা মানুষ যখন নিজের সম্পর্কেই জানতে পারে না, পৃথিবী সম্পর্কে সে কি জানবে? শিক্ষা শুরুই হয় নিজেকে জানার মাধ্যমে। আর যখনই একটা মানুষ নিজের সম্পর্কে জানা শুরু করে সে তার নিজের গুরুত্বও বোঝা শুরু করে। আমরা কেউই এই পৃথিবীতে গুরুত্বহীন নই। ঠেলাগাড়ি যে চালায়, দিনশেষে সেও একটা পরিবারে ফিরে যায়, যেখানে সে কারো বাবা, ছেলে, স্বামী কিংবা ভাই। কাজেই নিজের মূল্য দেওয়া শিখতেই হবে। আর সেই শিক্ষাটা শুরুই হয় নিজেকে জানার মাধ্যমেই।
মনীষী গৌতম বুদ্ধ বলেছেন,
“You yourself, as much as anybody in the entire universe, deserve your love and affection”
আসলেই কি তাই নয়? আমাকে যদি আমিই ভালোবাসতে না পারি, অন্য কেউ কেনো বাসবে? যখন একটা মানুষ, সে সমাজের যেই পেশা বা যেই অবস্থানেরই হোক না কেনো, নিজেকে ভালোবাসতে পারে, অন্যরাও তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা শুরু করে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নিজের মূল্য বুঝতে না পারার কারনে ব্যক্তিজীবনে এদের অনেকেই চরম ব্যর্থ।
তুমি যদি নাই বুঝো তুমি আসলে কে, তোমার সামর্থ্য এবং দূর্বলতা কি, তাহলে কিভাবে তুমি জীবনের সুন্দর সময়ে এগিয়ে যাবে! ব্যাপারটা অনেকটা দিক না জেনে অন্ধের মত পথচলা। অথচ গন্তব্য কোথায় এবং সেখানে পৌঁছতে কি কি অস্ত্র তোমার আছে তা যদি জানো, সাফল্য কিন্তু সুনিশ্চিত।
তাই আজকে থেকেই প্রতিজ্ঞা কর, সবার আগে নিজেকে গুরুত্ব দিবে। ‘নিজে ঠিক তো জগৎ ঠিক’ -এই প্রবাদের মতই নিজের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে এগিয়ে যাবে স্বপ্ন পূরণের পথে।
তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি?
সামান্য একটা যে কলম- তারও কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে, যতদিন কালি থাকবে সেও লেখার সরঞ্জাম হয়ে থাকবে। সেখানে আমরা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে উদ্দেশ্য ছাড়া বেঁচে থাকব? নিজের মূল্য বোঝার পরেই আসে ব্যাপারটা, আমার এই মূল্যবান জীবনের উদ্দেশ্য কি? প্রতিদিন কিসের তাড়নায় আমি ঘুম থেকে উঠে একটা দিন শুরু করব? এই বিস্ময়কর পৃথিবীতে আমি কি শুধু শুধুই এসেছি?
সবার উত্তর যে একই থাকবে এমন টা ভাবার কোন কারণ নেই। তোমার উত্তর অন্য যেকোন মানুষের চেয়ে আলাদা হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা, সবার চিন্তা ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনে অবস্থানও আলাদা। কাজেই তোমার কাজ হবে খুঁজে বের করা, ঠিক কি উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি জীবনে এগিয়ে যাবে?
Ralph Waldo Emerson এর ভাষায় যদি বলতে হয়,
“The purpose of life is not to be happy. It is to be useful, to be honorable, to be compassionate, to have it make some difference that you have lived and lived well.“
তোমার জন্য কোনটা সত্য সেটা শুধুমাত্র তুমিই বলতে পারবে। কাজেই এখনি খুঁজে দেখো মনের গভীর থেকে কি হতে চাও তুমি? কোন কাজটা তোমাকে সত্যিকার আনন্দ দেয়, বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়? আশা করা যায়, অবশ্যই তুমি জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে মনে রাখবে নিজের প্রতিযোগিতায় নিজেকেই দৌড়াতে হয়। যখন তুমি কোনো করছো সে কাজটিকে যদি সত্যিকার অর্থেই উদ্দেশ্য ভালোবেসে করো তাহলে অবশ্যই আত্নতৃপ্তি অনুভব করবে ।
তোমার জীবনের গন্তব্য কি?
ধরো তুমি একটা রেলস্টেশনে বসে আছো। তোমার সাথে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় সব উপকরণ আছে, তুমি সুস্থ সবল এবং উৎসাহী একজন মানুষ। নিজের সব শক্তি সামর্থ্য নিয়ে তুমি ভ্রমণে যেতে চাও। কিন্তু তুমি জানো না কোন ট্রেনটি ধরতে হবে যেই ট্রেনটি তোমায় নিয়ে যাবে তোমার গন্তব্যে। একটা ভুল ট্রেন ধরলেই তুমি ভুল জায়গায় উপস্থিত হবে। যেহেতু কোথায় যাবে সেটাই জানো না কাজেই সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েও তুমি মন খারাপ করে স্টেশনে বসে থাকা ছাড়া আর কি উপায় কি দেখতে পাবে?
জীবনের সুস্পষ্ট কোন গন্তব্য না থাকাও ঠিক তেমনি একটা ব্যাপার। আত্মমূল্যায়ন, উদ্দেশ্য নির্ধারণ সবকিছুই ব্যর্থ হবে যদি তোমার জীবনের কোন গন্তব্য না থাকে। পদে পদে তুমি হোঁচট খাবে সবকিছু থাকার পরও।
Antonio Machado বলেছেন,
“Travelers, there is no path, paths are made by walking.”
হ্যাঁ, এটাই সত্য। জীবনে সবাই একই গন্তব্যে যায় না। প্রত্যেকেই চলার পথে তার নিজের গন্তব্য তৈরি করে নেয়। তোমাকে ও জানতে হবে সেটা কি? সফল ব্যক্তিরা প্রায়ই বলে থাকে, সাফল্য পাবার অনেক আগে থেকেই তারা তাদের সফলতা চোখের সামনে দেখতে পেতো। কারণ তাদের নিজেদের গন্তব্য সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা ছিলো। কাজেই সফল জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ নিজের গন্তব্যকে জানা। সাফল্য যে শুধু একটা সোজা রাস্তায় আসে সেটা ভাবারও কোন কারণ নেই। সবার সাফল্যের রাস্তা ভিন্ন। কিন্তু রাস্তা অবশ্যই একটা থাকতে হবে।
Clayton M. Christensen যেমন বলেছেন,
“There are direct paths to a successful career. But there are plenty of indirect paths, too.”
এখন থেকেই জেনে নাও তোমার পথটা কি। কোন গন্তব্যে তুমি প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছো সেটা যদি জানা থাকে, তাহলে সেই পথের সম্ভাব্য সকল প্রতিকূলতা জয় করার আত্মবিশ্বাসও তোমার মধ্যে নিজ থেকেই তৈরি হবে।
সবশেষে বলব, এটা সত্য আমাদের সবার জীবন আলাদা। মানুষ হিসেবে সবার শক্তি সামর্থ্যও আলাদা। তাই উত্তরগুলো সবার আলাদা হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু উত্তর না জেনে জীবনে এগিয়ে যাওয়া নেহায়েত বোকামি। নিজেকে জানার মত বড় গুণ আর নেই। তাই এখন থেকে যে যেই কাজে পারদর্শী হতে চাও, প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বের করে এগিয়ে যাও তোমার পছন্দের কাজটির পথ ধরে।