“তুমি আগে এমন ছিলে না!”
— এই বাক্যটা হয়তো অনেক দম্পতিই একে অপরকে বলেন, অভিমান বা ঝগড়ার সময়। কিন্তু আপনি জানেন কি? বিজ্ঞানের মতে, এই অভিযোগ আসলে সত্যি। বিয়ে শুধু দুইটা মানুষকে সামাজিকভাবে যুক্ত করে না, বরং বদলে দেয় তাদের পুরো ব্যক্তিত্বও।
আমরা প্রায়ই শুনি—”বিয়ের পর সে অনেক বদলে গেছে!” কারো মুখে প্রশংসা, কারো মুখে অভিযোগ। কিন্তু এবার গবেষণাই বলছে—বিয়ে মানেই ব্যক্তিত্বের রি-সেট। এক নতুন ‘আমি’-র জন্ম।
📌 গবেষণার গল্পটা শুরু হোক…
আমেরিকার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৬৯টি নতুন বিয়ের (heterosexual) দম্পতিকে ১৮ মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করে। লক্ষ্য ছিল—বিয়ের পরে একজন মানুষের ব্যক্তিত্বে কী কী পরিবর্তন আসে, আর সেগুলো কতটা গভীর? গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘Developmental Psychology’ জার্নালে।
তারা যেসব ‘বিগ ফাইভ’ বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছে তা হলো:
- Openness (নতুন কিছুর প্রতি গ্রহণযোগ্যতা)
- Conscientiousness (দায়িত্ববোধ)
- Extraversion (বাহিরমুখিতা)
- Agreeableness (সহনশীলতা ও নম্রতা)
- Neuroticism (দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা)
❤️ স্ত্রীদের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন দেখা যায়?
গবেষণায় দেখা গেছে, বিয়ের পর স্ত্রীদের মানসিক অস্থিরতা অনেকটাই কমে যায়। anxiety, depression, এবং anger—এই তিনটি বিষয়েই তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এর মানে, একজন স্ত্রী যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং নিরাপদ একটি সম্পর্কে প্রবেশ করেন, তখন তিনি তার মানসিক ভারসাম্য অনেক ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
👨 বরদের দিকে তাকানো যাক…
বিয়ের পর পুরুষরাও পিছিয়ে নেই। তারা হয়ে ওঠেন আরও দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য। যাকে মনোবিজ্ঞানে বলে ‘more conscientious’— মানে, দায়িত্ব নেয়া, প্রতিশ্রুতি পালন করা, এবং সংসারের প্রতি যত্নবান হওয়া।
😕 কিন্তু খারাপ দিকও আছে…
গবেষণায় একটি বিষয় বেশ চমকে দেওয়ার মতো—দু’জনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কম “open” হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ, নতুন অভিজ্ঞতা, পরিবর্তন বা চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়।
এই পরিবর্তনটি বোঝায় যে, মানুষ বিয়ের পর ধীরে ধীরে একধরনের নিয়মিততা বা ‘রুটিন’-এ পড়ে যায়। আর এই রুটিন সহজে ভাঙে না।
এছাড়া, দুঃখজনকভাবে, দু’জনেই কম extraverted হন— মানে তারা আগের মতো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া বা সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা কমিয়ে দেন।
💔 আর একজায়গায় ধাক্কা লাগে বেশি
গবেষণা বলছে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ধীরে ধীরে কম agreeable হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ তারা একে অপরের প্রতি কম ধৈর্যশীল, বেশি বিরক্ত বা খিটখিটে হন।
প্রথমদিকে বিশেষ করে স্ত্রীদের মধ্যে এই গুণ বেশি থাকে—তারা নম্র, বোঝার চেষ্টা করেন, মেনে নেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। কারণটা পরিষ্কার—“হানিমুন পিরিয়ড” শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাস্তবতা নিজের জায়গা নেয়।
🤔 কিন্তু কেন হয় এমন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেম বা বিবাহপূর্ব সময়টায় আমরা নিজেদের ‘সেরা সংস্করণ’ দেখানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বিয়ের পর দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার ফলে আসল আমি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে।
তাছাড়া, বাড়তি দায়িত্ব, পারিবারিক চাপ, অর্থনৈতিক চাপ—সব মিলিয়ে মানুষ অনেক বেশি প্রভাবিত হন এবং আচরণে পরিবর্তন আসে।
📊 কী বিষয়গুলো এসব পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেনি?
গবেষণায় অবাক করার মতো তথ্য পাওয়া গেছে—
- বিয়ের আগে একসঙ্গে থাকা বা cohabitation
- বিয়ের আগে কতদিন সম্পর্ক ছিল
- বিয়ের সময় বয়স
- সন্তানের জন্ম
কোনোটাই এই ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনে আলাদা কোনো প্রভাব ফেলেনি।
অর্থাৎ, এই পরিবর্তনগুলো অন্তর্নিহিত, প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
🧠 তাহলে কী করা উচিত?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, self-control এবং forgiveness—এই দুই গুণ সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিয়ে মানে শুধু ভালোবাসা নয়, বরং পরিবর্তন মেনে নেওয়ার সাহস এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠার মানসিকতা।
বিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায়—যেখানে আপনি শুধু সঙ্গীই পান না, বরং নতুন একজন “আমি” হয়ে ওঠেন। এই পরিবর্তনকে ভয় নয়, বরং বুঝে নিন। আপনার এবং আপনার সঙ্গীর পরিবর্তনগুলোকে আলিঙ্গন করুন, কারণ তাতেই তৈরি হবে আরও গভীর সম্পর্কের বুনন।