সাবলীল দক্ষতা এবং চরিত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাগুলো সবসময়ই অসীম। আপনি যদি নিজের মধ্যকার গুণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে যেমন নতুন কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, একই সাথে শিখতেও পারবেন। ব্যক্তিত্বের বিকাশ আপনার ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করবে। এমন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে, প্রতিটি মানুষের স্বভাব চরিত্র স্থায়ী এবং সেটা কোনোভাবেই বদলানো সম্ভব না। এটি পুরোপুরি সত্য না। ব্যক্তিত্ব হচ্ছে আচার-আচরণ ও চিন্তাভাবনার একটি অনন্য মিশ্রণ। দৃঢ় প্রচেষ্টার সাথে নিজের স্বভাব এবং চিন্তাভাবনার উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার ব্যক্তিত্বের উন্নতি সাধন করতে পারেন খুব সহজেই।
১) হয়ে উঠুন একজন চমৎকার শ্রোতা:
সুন্দর করে কথা বলা যেমন একটি গুণ, ঠিক তেমনি অন্যদের কথা শোনাও একটি বিশেষ দক্ষতা। একজন শ্রোতা নিজের আশপাশ থেকে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। আপনি যখন গুরুত্ব সহকারে অন্যদের কথা শুনছেন, তখন অন্যরাও আপনার প্রতি সমান গুরুত্ব দেবে এবং যেকোনো বিষয়ে মন খুলে আপনার সাথে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করবে না। কেউ যদি মনোযোগ দিয়ে আপনার কথাগুলো শোনে, এর মানে হচ্ছে তাঁর কাছে আপনি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের এই অনুভূতিটা অপরকে উপলব্ধি করাতে হয়ে উঠুন একজন চমৎকার শ্রোতা। আপনার ব্যক্তিত্বে এই বিশেষ গুণটি যুক্ত করে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন খুব সহজেই।
২) জানার পরিধি বাড়িয়ে তুলুন :
ব্যক্তিত্বের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আগ্রহের দিকগুলো বিস্তৃত করতে পারেন। এটি আপনার মনকে তাজা রাখবে এবং নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে। এছাড়াও এটি আপনাকে অন্যদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। কারণ অন্যরা তখন আপনার কাছ থেকে নতুন কিছু জানার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে আপনার আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যাবে এবং নিজের আগ্রহের বিষয়ে অন্যদের সাথে কথা বলার সুযোগটাও পেয়ে যাবেন। এই ক্ষেত্রে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারেন। অভিজ্ঞতা বাড়াতে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল সংগঠন অথবা প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
৩) আলাপচারিতা বাড়িয়ে তুলুন :
যখন নিজের এবং অন্যদের আগ্রহের কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারবেন তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে আরো অনেকগুণে। কোনো আলাপচারিতার বিষয় সম্পর্কে আপনার যত বেশি জ্ঞান থাকবে কথপোকথনে আপনি তত বেশিই অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে খুব ভালো একজন বক্তা হতে পারলে অন্যদের আকর্ষণের বিন্দু হয়ে যেতে পারেন খুব সহজেই। তবে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, সব বিষয়ে জ্ঞান রাখা পৃথিবীর কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপনার অভিজ্ঞতা যেমন শেয়ার করতে পারবেন তেমনি অন্যদের কাছ থেকেও শিখতেও পারবেন অনেককিছু।
৪) নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া :
সবসময় নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন। নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হলে তাদের সংস্কৃতি, ধারণা, মতামত সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তা আপনার মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে অন্যান্য লোকদের প্রতি আপনার সহনশীলতার মাত্রা বেড়ে যাবে। মোটকথা, এটি আপনার মনের দিগন্তকে আরো বিস্তৃত করবে।
৫) Interpersonal Skill বাড়িয়ে তোলা :
জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারপার্সোনাল স্কিলগুলোর কোনো তুলনা নেই। এই স্কিলগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ এবং আলাপচারিতার জন্য অনেক দরকারি। এটি যে শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে প্রয়োজনীয়, তা নয়; ব্যক্তিগত জীবনে এর মূল্য অপরিসীম। অন্যদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা, যোগাযোগ সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে পজেটিভিটি ছড়ানোর মাধ্যমেই আমরা আমাদের ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতাগুলোকে বাড়াতে পারি।
৬) নেতৃত্ব দানের দক্ষতা বাড়ানো :
‘নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা আসে জন্ম থেকেই’- এই কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। আপনি যদি পেশাগত জীবনে সফল হতে চান, তাহলে নেতৃত্ব দানের দক্ষতাগুলোর বিকাশ করা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চাকুরিজীবীরা সবসময়ই এই দক্ষতাটি বাড়ানোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন, কেননা এর মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং অনুপ্রেরণা দেওয়া সহজ হয়।
৭) উপস্থাপনার কৌশলগুলোকে আয়ত্ব করা :
আপনি যদি আপনার কথাগুলোকে অন্যদের সামনে তুলে ধরতে চান, তবে উপস্থাপনার কৌশলগুলোকে আয়ত্ব করার কোনো জুড়ি নেই! যেকোনো বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করলে আপনার প্রতি সবার আকর্ষণ অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। এই দক্ষতাটি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়। আপনার বাচনভঙ্গি এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে যেতে পারেন দক্ষ একজন উপস্থাপক।
৮) অন্যকে সম্মান দিয়ে কথা বলা :
সম্মান এবং প্রশংসা অর্জন করা যায় ঠিক তখনি, যখন আপনি নিজে অন্যকে সম্মান দিবেন এবং প্রশংসা করবেন। কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘সততা’ এবং ‘সত্যতা’ একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের জন্য অপরিহার্য গুণাবলী। মনে রাখবেন, সততা এবং সম্মান থাকলে আপনার ব্যক্তিত্ব অন্যদের চোখে আকর্ষণীয় দেখাবে। কাজেই অন্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই আপনি নিজে একটি সম্মানজনক জীবন লাভ করতে পারেন।