back to top
বুধবার, জুন ৪, ২০২৫
HomeBusinessInsightsডিগ্রি আছে, কিন্তু চাকরি নেই: বাংলাদেশের যুব বেকারত্বের ভয়াবহ বাস্তবতা

ডিগ্রি আছে, কিন্তু চাকরি নেই: বাংলাদেশের যুব বেকারত্বের ভয়াবহ বাস্তবতা

“ডিগ্রি আছে, চাকরি নেই!”—এমন বাক্য এখন আমাদের চারপাশে নিত্য শুনতে পাওয়া যায়। নতুন শার্ট পরে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া ছেলেটা হয়ত তৃতীয়বারের মতো ফিরলো হতাশ হয়ে। হয়ত মেয়েটা চোখের জল চেপে ধরেছে, মা-বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না—কারণ অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করেও কোথাও চাকরি হচ্ছে না। বাংলাদেশে এই চিত্র এখন কেবল ব্যতিক্রম নয়, বরং নিয়ম।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) সম্প্রতি প্রকাশিত World Employment and Social Outlook (WESO) 2025 রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের যুব বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে জাতীয় বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪.৬৩ শতাংশে, সেখানে ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে এই হার ১০ শতাংশেরও বেশি।

🎓 শিক্ষিত, কিন্তু কর্মহীন কেন?

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু তার অনুপাতে যোগ্য চাকরির সুযোগ বাড়েনি।

একজন স্নাতক যুবক, যার নাম রায়হান, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রি নিয়েছেন। চাকরি খুঁজছেন প্রায় এক বছর ধরে। বললেন, “সব জায়গায় বলে—এক্সপেরিয়েন্স দরকার। কিন্তু আমার তো কেউ সেই সুযোগই দেয় না। তাহলে অভিজ্ঞতা কীভাবে হবে?”

এই কথাটাই মূল সমস্যা: স্কিল মিসম্যাচ। অনেক তরুণ ডিগ্রি পেলেও চাকরির বাজারে যেসব দক্ষতা প্রয়োজন, তার সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুতি মেলাতে পারছেন না।

📊 সমস্যার গভীরতা: কিছু তথ্যচিত্র

  • বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে জাতীয় বেকারত্বের হার ছিল ৩.৯৫%, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪.৬৩%-এ।
  • যুবকদের মধ্যে এই হার দ্বিগুণের বেশি।
  • উচ্চশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অনেকেই “অদক্ষ” ক্যাটাগরিতে পড়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র ডিজিটাল স্কিল বা সফট স্কিলের অভাবে।

🌍 বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

ILO-এর বাংলাদেশে সদ্য বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর Tuomo Poutiainen বলেছেন,

“বাংলাদেশ এখন একাধিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ুগত। এই সময়ে যুব ও নারীদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করা জরুরি।”

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো বড় পরিসরে তৈরি পোশাক শিল্প ও শ্রমনির্ভর খাতে নির্ভরশীল। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য দরকার উচ্চমানের প্রযুক্তি-ভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্কিল।

🧠 করণীয়: কীভাবে সমাধান সম্ভব?

✅ ১. ডিজিটাল স্কিল ট্রেইনিংকে বাধ্যতামূলক করা

বর্তমান যুগে প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, AI ও মেশিন লার্নিং সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর জন্য যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।

✅ ২. বিশ্ববিদ্যালয় কারিকুলাম আপডেট করা

শুধু থিওরি পড়িয়ে এখন আর চলবে না। বাস্তবমুখী শিক্ষা, ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপ, এবং চাকরি-প্রস্তুতি (Job readiness) কোর্স থাকতে হবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

✅ ৩. স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহ

যুবকদের শুধু চাকরি খোঁজার নয়, চাকরি তৈরির মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। সহজ ঋণ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে।

✅ ৪. নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো

নারীরা এখনো কর্মজগতে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে। প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সুযোগ দিলে একটি বড় অংশ কর্মক্ষম হয়ে উঠবে।

🌱 পরিবর্তন আসতে পারে

বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও এনজিও ইতোমধ্যে তরুণদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। কিন্তু এই উদ্যোগগুলোকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত ও সমন্বিত করতে হবে।

একজন তরুণের মধ্যে যে স্বপ্ন, কর্মক্ষমতা ও শক্তি আছে, তা দেশের জন্য বিশাল সম্পদ। কিন্তু সেই শক্তিকে কাজে না লাগাতে পারলে, সেটাই পরিণত হবে বিস্ফোরক এক বেকার জনসংখ্যায়। এখন সময়, এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দেওয়া।

আজকের বেকার তরুণই আগামী দিনের নেতা, উদ্যোক্তা, এবং সমাজ পরিবর্তনের কারিগর। ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান না পাওয়ার যে হতাশা, তা থেকে মুক্তির উপায় আছে—প্রয়োজন শুধু দৃষ্টিভঙ্গি বদল, এবং টার্গেটেড পদক্ষেপ। সময় এসেছে, বেকারত্বের এই অন্ধকার থেকে তরুণদের আলোর পথে এগিয়ে নেওয়ার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular