সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫
HomeLifestyleRelationshipপিতামাতার ভালোবাসা: উপলব্ধি তখনই আসে, যখন নিজেই পিতা-মাতা হওয়া যায়

পিতামাতার ভালোবাসা: উপলব্ধি তখনই আসে, যখন নিজেই পিতা-মাতা হওয়া যায়

শৈশবে আমরা অনেক সময় ভেবে বসি, মা-বাবা যেন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু—তারা কেন এত বেশি শাসন করেন, কেন এত প্রশ্ন করেন, কেন ছোট ছোট বিষয়ে এত ভয় পান বা এত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আমাদের কৈশোরের চোখে তা একঘেয়েমি, অনর্থক কড়া নিয়ম, কিংবা স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা হিসেবে প্রতিভাত হয়। কিন্তু সময় যত এগোয়, বয়স যত বাড়ে—আর সবচেয়ে বেশি, যখন আমরা নিজেরাই পিতা বা মাতা হয়ে যাই—তখনই হঠাৎ যেন চোখ খুলে যায়। আমরা বুঝতে শুরু করি সেই ভালোবাসার প্রকৃত রূপ।

ভালোবাসার ছায়ায় গড়ে ওঠা শৈশব

একজন সন্তান জন্মের মুহূর্ত থেকে তার প্রতিটি নিঃশ্বাসের জন্য মা-বাবা এক অব্যক্ত উদ্বেগে থাকেন। তারা তাদের স্বপ্ন, আনন্দ, সময়, এমনকি নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দেন শুধু একটি ছোট মুখের হাসির জন্য। সন্তানের কষ্ট মানে তাদের হৃদয় ভেঙে যাওয়া, সন্তানের সাফল্য মানে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আমরা যখন হাঁটতে শিখি, তখন মা-বাবাই আমাদের প্রথম হাত ধরে। আমরা হয়তো ভুলে যাই সেই মুহূর্তগুলো, কিন্তু তারা মনে রাখেন প্রতিটি প্রথম—প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা, প্রথম স্কুলে যাওয়া। এই স্মৃতিগুলো তাদের কাছে কোনো ফেসবুক পোস্ট নয়, বরং জীবনের অমূল্য রত্ন।

ত্যাগের নীরব ইতিহাস

বাবা হয়তো দিনের পর দিন ক্লান্ত শরীরে অফিস করেন, কোনোদিন নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে দেখার সুযোগও পান না—শুধু এই আশায় যে তার সন্তান যেন কখনো অভাব অনুভব না করে। মা হয়তো নিজের পরিচিতি ভুলে সংসার সামলান, সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দেন, হোমওয়ার্ক করান, অসুস্থতায় রাত জেগে পাশে বসে থাকেন—কোনো স্বীকৃতি ছাড়া, কেবল ভালোবাসা থেকে।

এই ত্যাগগুলো বড় শব্দে বলা হয় না, চোখের সামনে প্রদর্শিত হয় না—কিন্তু তারা প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেদের বিলিয়ে দেন, সন্তানের জন্য।

নিজে পিতা-মাতা হওয়ার পর বদলে যায় দৃষ্টিভঙ্গি

যখন নিজের সন্তান কোলজুড়ে আসে, তখন একটি অদ্ভুত অনুভূতি জাগে—একটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, যেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। তখন আমরা বুঝতে পারি, কী ভয় নিয়ে মা প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার অপেক্ষায় থাকতেন, কী মনখারাপ নিয়ে বাবা নিজের প্রয়োজন ফেলতেন শুধু আমাদের কিছু কেনার জন্য।

সন্তানকে রাত জেগে দুধ খাওয়ানো, জ্বর হলে কাঁধে করে হাসপাতালে দৌড়ানো, প্রথম হাঁটার সময় পাশে থেকে হাত ধরে থাকা—এই সব অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে আমাদের শেখায়, মা-বাবার প্রতিটি কাজের পেছনে কী পরিমাণ ভালোবাসা ছিল।

ভালোবাসার গভীরতা: কোনো শর্তে নয়, শুধু সন্তানের জন্য

পিতামাতার ভালোবাসা একমাত্র ভালোবাসা, যা নিঃস্বার্থভাবে শুধু দিতে জানে। তারা বিনিময়ে কিছু চায় না—না ধন্যবাদ, না প্রতিদান। সন্তানের একটু হাসি, ভালো থাকা, এগিয়ে চলাই তাদের জীবনের পুরস্কার।

তারা সন্তানকে মানুষ করেন এমনভাবে যেন সে নিজে জীবন গড়তে পারে। এবং যখন সন্তান সেই জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনো তারা আড়াল থেকে প্রার্থনায় থাকেন, আশীর্বাদে থাকেন।

তাদের ভালোবাসা যেন এক সমুদ্র, যার কোনো সীমা নেই, যার কোনো প্রান্ত নেই—শুধু গভীরতা আছে।

সমাপ্তি: সময় থাকতে অনুভব করা জরুরি

জীবনের এক পর্যায়ে এসে আমরা যখন বুঝি, মা-বাবার ভালোবাসা কেমন ছিল, তখন অনেক সময় তারা হয়তো আমাদের পাশে থাকেন না। এই উপলব্ধি যেন দেরি না হয়, সেই চেষ্টাই হওয়া উচিত আমাদের।

আমরা যেদিন থেকে নিজেই পিতা-মাতা হই, সেদিন থেকে তাদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা যেন আরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু সেই অনুভব যদি আগেই আসে, তবে সম্পর্কটা হয় আরও সুন্দর, আরও পরিপূর্ণ।

চলুন, আজই একটা সময় নিই নিজের বাবা-মায়ের ভালোবাসাকে উপলব্ধি করার, তাদের বলা না বলা কথাগুলো শোনার চেষ্টা করি। আর যদি সুযোগ পাই, তাহলে সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দিই—একটা আলিঙ্গনে, একটা কৃতজ্ঞতার বাক্যে, একটা সঙ্গের সময় দিয়ে।

কারণ আমরা যতক্ষণ না নিজেরা পিতা-মাতা হই, ততক্ষণ সেই গভীর ভালোবাসা কেবল একটা ছায়া — আর একদিন, হঠাৎ করেই তা হয়ে ওঠে বাস্তব, জীবনের প্রতিচ্ছবি। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular