“ভালো একটা আইডিয়া থাকলেই ব্যবসা সফল হবে”—এই ধারণাটাই হয়তো সবচেয়ে বড় ভুল।
এই ধারণা নিয়ে হাজার হাজার উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। কেন? কারণ একটা ব্যবসা শুরু করা মানেই শুধু একটা ভালো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তৈরি করা না, এর পেছনে লাগে সঠিক চিন্তাভাবনা, বাস্তবতা বোঝা, এবং মানসিক প্রস্তুতি।
আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করবো, ফাউন্ডারদের কোন ভুল ধারণাগুলো একদম শুরুতেই ব্যবসাকে শেষ করে দিতে পারে।
১. “আইডিয়াই সবকিছু” — ভুল ভাবনা
অনেক ফাউন্ডার ভাবেন, “আমার আইডিয়াটা ইউনিক, একবার এটা বানালেই সবাই ব্যবহার করবে।” কিন্তু বাস্তবতা হলো—আইডিয়া নয়, এক্সিকিউশনই রাজা। ফেসবুক, গুগল বা উবার—এই কোম্পানিগুলো ইউনিক আইডিয়ার জন্য বিখ্যাত না, বরং তারা যেভাবে সেই আইডিয়াকে বাস্তব করেছে, সেটার জন্যই সফল।
উদাহরণ: ঢাকার এক তরুণ উদ্যোক্তা “বাড়িতে গার্ডেনিং সার্ভিস” নিয়ে শুরু করেছিলেন। আইডিয়াটা ভালো ছিল, কিন্তু তিনি বাজার গবেষণা করেননি। ফলাফল—তিন মাসেই সব খরচ শেষ, কোনো রেভিনিউ নেই।
২. “আমার প্রোডাক্ট এত ভালো, মার্কেটিং লাগবে না”
ফাউন্ডাররা মাঝে মাঝে এতটা আত্মবিশ্বাসী থাকেন যে তারা ভাবেন, “আমার প্রোডাক্ট এমনিতেই ভাইরাল হয়ে যাবে।” কিন্তু আজকের ডিজিটাল জগতে, মার্কেটিং ছাড়া কোনো ভালো প্রোডাক্টও আলোচনায় আসে না।
প্রোডাক্ট যদি ভালো হয়, সেটা শুধু শুরু; কিন্তু মানুষকে সেটা জানানো, বোঝানো, এবং বিশ্বাস করানোই আসল চ্যালেঞ্জ।
৩. “সবার জন্য কিছু বানাবো”—আবারও ভুল!
সবাইকে টার্গেট করলে কেউ-ই টার্গেট হয় না। একটি সফল স্টার্টআপ সবসময় সুনির্দিষ্ট একটি সমস্যা এবং একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যবহারকারী নিয়ে শুরু করে। পরে স্কেল করে।
Tip: প্রথমে আপনার কাস্টমার কারা, তারা কোথায় থাকেন, তাদের জীবনের কোন সমস্যাটা আপনি সমাধান করছেন—এসব জানা জরুরি।
৪. “বন্ধু/আত্মীয় দিয়ে টিম বানানো, কারণ সস্তা বা সহজ”
শুরুতে অনেক ফাউন্ডার শুধু পরিচিতির ভিত্তিতে টিম গড়েন। কিন্তু ব্যবসা মানে হলো পারফরম্যান্স, ডেডিকেশন, এবং কমিটমেন্ট। আপনার বন্ধু যদি সময় দিতে না পারেন বা স্কিল না থাকে, তাহলে আপনি সম্পর্ক বাঁচাতে গিয়ে ব্যবসা হারাবেন।
৫. “অর্থনৈতিক প্রস্তুতির অভাব”
ধরুন আপনি ২ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন, কিন্তু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টেই খরচ হয়ে গেল। এখন মার্কেটিং করবেন কিভাবে? অপারেশন চালাবেন কীভাবে? অনেক ফাউন্ডার বাজেটিং না করে শুরু করেন এবং ২–৩ মাসেই টাকার অভাবে সব বন্ধ করে দিতে হয়।
৬. “ক্লোন করলেই চলবে”
অনেকে ভাবেন, “এই অ্যাপটা ইন্ডিয়াতে চলতেছে, আমিও বানিয়ে ফেলি।” বাজার, সংস্কৃতি, ব্যবহারকারীর অভ্যাস—সব আলাদা হতে পারে। তাই বিদেশি আইডিয়া কপি করলেও সেটা লোকালাইজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. “এক্সিট না থাকলে এন্টারি অর্থহীন”
অনেকেই এক্সিট বা লং-টার্ম ভিশন ছাড়া শুরু করেন। তারা জানেন না ৩ বছর পর ব্যবসাটা কোথায় যাবে, কীভাবে স্কেল হবে বা মুনাফা আসবে। ফলে মাঝপথে দিশেহারা হয়ে যান।
উপসংহার: ফাউন্ডাররা যদি শুরুতেই ভুল ধারণা নিয়ে নামেন, তাহলে চমৎকার একটি আইডিয়াও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
একজন ফাউন্ডারের উচিত—
✅ বাজার সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া
✅ রিসার্চ করা
✅ সঠিক টিম গড়া
✅ নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝা
✅ এবং নম্র মন নিয়ে শেখা
সফলতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ভুল আত্মবিশ্বাস, আর সবচেয়ে বড় শক্তি খোলা মন।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন—হয়তো কোনো নতুন ফাউন্ডার এই ভুলগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।
