“প্রতিবার ব্যথাটা শুরু হলে মনে হয়, মাথার ভেতর কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে!”
এই কথাটি রিমি বলেছিল, যেদিন ও অফিস থেকে ফিরেই বিছানায় শুয়ে পড়ল—চোখের ওপর আলোর এক ফোঁটা পড়লেই যেন কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
মাইগ্রেন কেবল এক ধরনের মাথাব্যথা নয়—এটি এক জটিল নিউরোলজিক্যাল কন্ডিশন, যার সাথে চোখে ঝাপসা, বমি ভাব, শব্দ ও আলোতে অস্বস্তির মতো লক্ষণ থাকে। বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, অথচ বেশিরভাগ মানুষ একে সাধারণ মাথাব্যথা ভেবে অবহেলা করেন।
ভাগ্য ভালো, কিছু নিয়মিত অভ্যাস ও সচেতনতা অবলম্বন করে মাইগ্রেন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব—ওষুধ ছাড়াও। চলুন জেনে নিই এমনই ৭টি কার্যকর ও ঘরোয়া সমাধান।
১. ঘুমই প্রথম ওষুধ
ঘুমের অভাব বা অনিয়মই মাইগ্রেনের অন্যতম বড় কারণ।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা
- অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম
- মোবাইল, ল্যাপটপ স্ক্রিনে ঘুমানোর আগে বেশি সময় কাটানো এড়িয়ে চলা
আপনার ঘুম ঠিক থাকলে মস্তিষ্কও থাকবে প্রশান্ত।
২. শরীরে পানির ঘাটতি নয়
সারাদিনে আমরা অনেকেই পানি খেতে ভুলে যাই।
কিন্তু মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫% গঠিত হয় পানির দ্বারা।
- প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন
- লেবু পানি বা ডাবের পানিও উপকারী
- অতিরিক্ত কফি বা কোমল পানীয় পরিহার করুন
শরীরে পানির ঘাটতি মানেই মাথাব্যথার নিমন্ত্রণপত্র।
৩. খাদ্যাভ্যাস বদলান, মুক্তি পান
কিছু খাবার মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে, যেমন—চকলেট, চিজ, প্রসেসড ফুড, গ্যাসযুক্ত পানীয়।
- এড়িয়ে চলুন: চকলেট, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত ক্যাফেইন
- বেশি খান: তাজা ফল, সবজি, বাদাম, ওটস, ব্রাউন রাইস
পুষ্টিকর খাবার মানেই মাইগ্রেনকে দূরে রাখার এক চমৎকার উপায়।
৪. স্ট্রেস কমান, মাথা বাঁচান
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশা মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়ায়।
- প্রতিদিন ১০ মিনিট মেডিটেশন বা নিঃশ্বাসের ব্যায়াম
- সকালে খালি পেটে প্রকৃতির মাঝে হাঁটা
- বিকেলে বই পড়ে বা গান শুনে মন শান্ত রাখুন
মন শান্ত তো মাথাও শান্ত।
৫. স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনার চোখ যদি ১০ ঘন্টা স্ক্রিনের দিকে থাকে, তাহলে মাথা তো প্রতিবাদ করবেই!
- Anti-glare চশমা ব্যবহার করুন
- ২০-২০-২০ রুল মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরে তাকান
- কাজের মাঝে চোখ ও ঘাড়কে বিরতি দিন
স্ক্রিন একটু কমালে মাইগ্রেনও কমবে।
৬. ঠান্ডা সেঁক ও ঘরোয়া সমাধান
মাইগ্রেন শুরু হতেই দ্রুত ব্যবস্থা নিন:
- কপালে ঠান্ডা পানি বা বরফ প্যাক দিন
- আদা চা, তুলসি চা বা পিপারমিন্ট চা পান করুন
- অন্ধকার ও শান্ত ঘরে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন
প্রাথমিক প্রতিরোধেই উপশম।
৭. মাইগ্রেন ডায়েরি রাখুন
আপনার মাইগ্রেন কখন হয়, কী খেলে বা কেমন আবহাওয়ায় হয়—তা বুঝতে হলে ট্র্যাক রাখা জরুরি।
- প্রতিটি অ্যাটাকের সময়, খাবার, ঘুমের ঘণ্টা, মানসিক অবস্থা লিখে রাখুন
- এটি আপনার চিকিৎসককে সঠিক গাইড করতে সাহায্য করবে
নিজেকে জানলেই প্রতিরোধের পথ সুগম হয়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- সপ্তাহে একাধিকবার মাইগ্রেন হচ্ছে
- দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে
- ওষুধেও কাজ হচ্ছে না
তাহলে দেরি না করে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
মাইগ্রেন একদিনে যাবে না, কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন ছোট ছোট সচেতন সিদ্ধান্ত নেন—তাহলে মাথাব্যথাহীন জীবন খুব একটা দূরে নয়।
ঘুম, পানি, স্বাস্থ্যকর খাবার, স্ট্রেস-মুক্ত জীবন, আর নিজেকে জানার এই অভ্যাসগুলোই আপনার সেরা চিকিৎসা।
আজ থেকেই শুরু করুন—নিজের মাথার যত্ন। কারণ আপনি ভালো থাকলেই, আপনার স্বপ্নগুলোও বাঁচবে।