মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingসকালে উঠে সবকিছু অসহ্য লাগে? জানুন কীভাবে কাটাবেন মর্নিং ব্লুজ

সকালে উঠে সবকিছু অসহ্য লাগে? জানুন কীভাবে কাটাবেন মর্নিং ব্লুজ

সকাল ৭টা বাজতেই অ্যালার্মের শব্দ। রুমের জানালা দিয়ে আলো ঢুকছে, কিন্তু আপনার শরীর যেন সাড়া দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে—“আজ কিছুই ভালো লাগছে না।” চারপাশের শব্দে বিরক্তি, সামান্য কথাতেই রাগ, এমনকি নিজের প্রতিচ্ছবিও যেন অচেনা লাগে। এই অবস্থাই হলো মর্নিং ব্লুজ।

এটা কিন্তু শুধু আপনার সাথেই ঘটছে না—অনেকেই প্রতিদিন সকাল শুরু করেন এই একই অনুভূতি নিয়ে। তবে সুখবর হলো, ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেই সকাল হয়ে উঠতে পারে দিনের সবচেয়ে সুন্দর সময়।

কেন মর্নিং ব্লুজ হয়?

১. সার্কেডিয়ান রিদমের গোলমাল: আমাদের শরীরে একটা “বায়োলজিক্যাল ক্লক” আছে, যেটা ঘুম ও জাগরণের সময় ঠিক রাখে। রাত জাগা বা অনিয়মিত ঘুম এই রিদম নষ্ট করে দেয়। ফলে সকালে উঠলেই মাথা ভারী লাগে।

২. হরমোনের পরিবর্তন: রাতে ঘুম ভাঙার পর কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বাড়ে। কিন্তু যাদের মানসিক চাপ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এটা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে বিরক্তি তৈরি করে।

৩. ঘুমের মান খারাপ হওয়া: শুধু সময়মতো ঘুমালেই হয় না, গভীর ঘুম (deep sleep) আর REM sleep না হলে সকালটা ক্লান্তিময় হয়।

মর্নিং ব্লুজ কাটানোর ৭টি সহজ উপায়:

১. ঘুমের নিয়ম মানুন

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর ঘুম থেকে ওঠা শরীরের রিদম ঠিক রাখে। ঘুমের আগে মোবাইল স্ক্রিন বাদ দিয়ে বই পড়া বা হালকা সুরের গান শুনুন।

২. সূর্যের আলোকে স্বাগত জানান 

সকালে জানালা খুলে সূর্যের আলো গায়ে লাগান। গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যালোক মেলাটোনিন হরমোন কমিয়ে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত সজাগ হয় আর মনও ভালো থাকে।

৩. হালকা ব্যায়াম করুন

মাত্র ১০ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম বা কিছু স্ট্রেচিং শরীরে এন্ডরফিন বাড়ায়। এন্ডরফিনকে বলা হয় “হ্যাপি হরমোন”—যা বিরক্তি কমিয়ে ভালো লাগা বাড়ায়।

৪. নাশতা বাদ দেবেন না

খালি পেটে থাকলে ব্লাড সুগার কমে যায়, যার ফলে মাথা ভারী ও খিটখিটে মেজাজ হয়। ওটস, ডিম, ফল বা ডাল স্যুপ দিয়ে দিন শুরু করলে শরীর ও মনের জ্বালানি পাওয়া যায়।

৫. মাইন্ডফুলনেস বা জার্নালিং 

দিনের শুরুতে কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। চাইলে একটি নোটবুকে লিখে ফেলুন—আজকে আপনি কোন তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ। এটা মনের ওপর দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৬. ছোট্ট আনন্দ খুঁজুন

সকালে প্রিয় গান শুনুন, এক কাপ গরম চা উপভোগ করুন বা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পাখির ডাক শুনুন। এসব ছোট আনন্দ মনের অস্থিরতা কমায়।

৭. মেডিটেশন

এটাই সবচেয়ে কার্যকর অভ্যাসগুলোর একটি। সকালে উঠে মাত্র ৫–১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন।

  • শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার দিকে মন দিন।
  • মাথায় আসা সব চিন্তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন।
  • চাইলে গাইডেড মেডিটেশন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে মেডিটেশন স্ট্রেস কমায়, কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মুড উন্নত করে। এর ফলে দিনের শুরু হয় শান্ত মন আর ইতিবাচক এনার্জি নিয়ে।

মর্নিং ব্লুজ মানেই যে আপনি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত, তা নয়। বরং এটা আপনার শরীর-মনের একটি সংকেত—“আমাকে একটু যত্ন দিন।” ছোট্ট ছোট্ট কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেই সকাল আর বিরক্তির সময় না হয়ে হয়ে উঠবে অনুপ্রেরণার সূচনা।

দিনের শুরুটা করছেন সূর্যের আলোতে, কয়েক মিনিটের মেডিটেশন আর গভীর শ্বাস নিয়ে। পাশে গরম এক কাপ চা, টেবিলে ছোট্ট নাশতা, আর ডায়েরিতে লিখে ফেলেছেন—“আজ আমি কৃতজ্ঞ।” এমনভাবে শুরু হলে কি সত্যিই সকালটা অসহ্য লাগতে পারে?

সকালই ঠিক করে দেয় আপনার সারাদিনের মুড। তাই আজ থেকে সিদ্ধান্ত নিন—

  • শরীরকে দেবেন ঘুমের বিশ্রাম
  • মনকে জাগাবেন সূর্যের আলোয়
  • চিন্তাকে শান্ত করবেন মেডিটেশনে
  • আর শক্তি পাবেন পুষ্টিকর নাশতায়

আপনার সকাল বদলালে বদলে যাবে আপনার প্রতিদিনের অনুভূতি, আপনার সম্পর্ক, এমনকি আপনার স্বপ্ন পূরণের পথও।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular