একবার এক সাক্ষাৎকারে এলন মাস্ককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনি কি ভয় পান না?”
তিনি বলেছিলেন, “ভয় পাই। কিন্তু ভয় থাকা মানেই থেমে যাওয়া নয়।”
এই একটি লাইনই বলে দেয়—সফল মানুষদের সঙ্গে বাকিদের মূল পার্থক্যটা কোথায়।
এলন মাস্ক—যিনি Tesla দিয়ে গাড়ির ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছেন, SpaceX দিয়ে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর খেলা বদলে দিয়েছেন, আর Neuralink দিয়ে মানুষের মস্তিষ্ক আর প্রযুক্তির মাঝে সেতুবন্ধন গড়ছেন। কিন্তু এই সফলতার পেছনে ছিল একটার পর একটা “অসম্ভব” রকমের ঝুঁকি।
চলুন, তার কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত দেখি—আর বুঝে নিই কীভাবে এ থেকে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তারা শিখতে পারেন।
১. Tesla: “একদিন সবাই ইলেকট্রিক গাড়ি চালাবে”—যখন কেউ বিশ্বাসই করতো না
২০০৪ সালে যখন এলন Tesla-তে ইনভেস্ট করেন, তখন পুরো ইন্ডাস্ট্রি তাকে পাগল ভাবছিল।
বড় বড় গাড়ি কোম্পানিগুলো ইলেকট্রিক গাড়িকে কল্পবিজ্ঞান ভাবতো। তার ওপরে এলন বললেন, “আমি এমন গাড়ি বানাবো যেটা স্পোর্টস কারের চেয়েও দ্রুত, কিন্তু পরিবেশবান্ধব।”
ঝুঁকি কোথায় ছিল?
- তিনি নিজের প্রায় সব টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
- প্রথম ২-৩ বছরে গাড়ি বানানোর লাইনই তৈরি করতে পারেননি।
- ব্যর্থ হলে তিনি দেউলিয়া হয়ে যেতেন।
কিন্তু আজ? Tesla বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি কোম্পানিগুলোর একটি। এবং এলন মাস্ক এখন শুধুমাত্র একজন উদ্যোক্তা নন—একটি প্রতীক।
২. SpaceX: “আমি রকেট বানাব”—বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশে যাওয়ার প্রথম সাহস
NASA যেখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করেও সময়মতো রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারত না, সেখানে এলন বললেন—“আমি নিজে রকেট বানাব।”
তিনবার পরপর ব্যর্থ উৎক্ষেপণ—তিনবারই কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ উড়ে গেল।
চতুর্থবার যদি ব্যর্থ হতো, SpaceX বন্ধ হয়ে যেত।
কিন্তু সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। সফল উৎক্ষেপণ, চুক্তি NASA-এর সাথে, আর এরপর থেকে ইতিহাস লেখা শুরু।
এটা দেখায়—যারা নিজের বিশ্বাসে অটল থাকে, তারা একদিন সময়কেও জয় করে।
৩. Neuralink: “মানুষ আর মেশিন এক হবে”—ভবিষ্যতের অসম্ভব ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা
Neuralink এখনো একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। কিন্তু এলনের বিশ্বাস—একদিন মানুষ মেশিনের সাথে সংযুক্ত হবে, এবং পারকিনসনস, পক্ষাঘাত কিংবা স্মৃতি হারানোর মতো রোগও সারিয়ে তোলা যাবে।
এটা শুধু পাগলামি নয়, এটা ভবিষ্যৎ দেখার সাহস।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর মানে কী?
বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের পথচলা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন। লগ্নি নেই, ইকোসিস্টেম দুর্বল, পরিবার/সমাজের সমর্থন কম। কিন্তু তবু কিছু সাহসী তরুণ এগিয়ে চলেছেন।
উদাহরণ ১: Pathao
যখন Ride-sharing কনসেপ্ট বাংলাদেশে নতুন, Pathao শুরু করেছিল সাহস নিয়ে। কেউ ভাবতেই পারেনি—বাংলাদেশে অ্যাপে রাইড ডাকা সম্ভব। আজ Pathao শুধু রাইড নয়—ফুড, পেমেন্ট, কুরিয়ার—একটা ইকোসিস্টেম।
উদাহরণ ২: 10 Minute School
অথবা দেখুন ১০ মিনিট স্কুলকে। একজন তরুণ শুধুমাত্র মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও বানিয়ে শুরু করেছিলেন, আর এখন দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম।
উদাহরণ ৩: Markopolo.ai
এআই নিয়ে কাজ করার সময় কেউ বলতো, “বাংলাদেশে কে এসব কিনবে?”
কিন্তু Markopolo.ai আজ বিদেশি বাজারেও প্রবেশ করছে, GCC পর্যন্ত এক্সপোর্ট করছে—কারণ তারা ভয় পায়নি।
সাহস + দূরদৃষ্টি = বড় কিছু
এলন মাস্ক, কিংবা বাংলাদেশের সাহসী উদ্যোক্তারা সবাই একটা জিনিস প্রমাণ করেছেন—যে জিনিসটা “অসম্ভব” মনে হয়, সেটাই হয় সবচেয়ে বড় সুযোগ।
আপনি যদি নতুন কিছু শুরু করতে চান—এই ৩টা জিনিস মনে রাখুন:
- ভয় পাবেন, কিন্তু থামবেন না
ভয় থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ভয়ই যদি আপনার চালক হয়, আপনি কোনোদিন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না। - সমালোচক থাকবে, কিন্তু নিজের বিশ্বাসে থাকুন
“এটা বাংলাদেশে হবে না”—এই বাক্যকে পাত্তা না দিয়ে কাজ করুন। - ছোট করে শুরু করুন, বড় স্বপ্ন দেখুন
এলনও কিন্তু প্রথমে Zip2 নামের একটি সফটওয়্যার দিয়ে শুরু করেছিলেন। আজ তিনি রকেট বানান।
সফলতার পেছনে শুধুই বুদ্ধিমত্তা নয়, প্রয়োজন সাহস।
সাহস মানে ভুল করার স্বাধীনতা, সাহস মানে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা, সাহস মানে ‘পাগলামি’ বললেও নিজের স্বপ্নে এগিয়ে চলা।
এলন মাস্কের গল্প আমাদের শেখায়—পৃথিবী বদলাতে গেলে আগে নিজের ভয়কে বদলাতে হবে। আর এই সাহসটাই হতে পারে একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় পুঁজি।