“রাতে ঘুম আসে না, একই চিন্তা ঘুরেফিরে মাথায় আসে—যদি ভুল করে থাকি? যদি আর ঠিক না হয়?” – এমন অনুভব আমাদের অনেকেরই হয়। একটা ছোট ঘটনা, একটা কথা, একটা টেক্সট—এমনকি একটা চুপ করেই থাকা আমাদের মাথায় হাজারটা চিন্তা তৈরি করে। আর শুরু হয় ওভারথিংকিং।
আপনি যদি এমন অবস্থায় থাকেন, তাহলে আজকের এই লেখাটা আপনার জন্য।
জাপানের লোকেরা কিন্তু খুব ব্যস্ত, প্রযুক্তিনির্ভর আর চাপের ভেতরেও তারা বেশ শান্তভাবে জীবন যাপন করে। কীভাবে? তারা ওভারথিংকিং বন্ধ করার জন্য কিছু দারুণ কৌশল ব্যবহার করে। চলুন, সেই জাপানি কৌশলগুলোর কিছু সহজ ভাষায় জানি—যা আপনি আজ থেকেই ব্যবহার করতে পারেন।
১. Shoganai – যা হয়, তা মেনে নেওয়া শিখুন
জাপানিরা বলে, “Shoganai” মানে, যেটা আমার হাতে নেই, সেটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।
যেমন: আপনি কাউকে মেসেজ করেছেন, সে রিপ্লাই দেয়নি।
→ আপনি ভাবছেন: “সে কি রেগে গেছে? আমি কিছু ভুল বলেছি?”
এক্ষেত্রে নিজেকে বলুন—Shoganai, এখন আপনি কিছু করতে পারবেন না। সময়কে সুযোগ দিন।
২. Ikigai – জীবনের কারণ খুঁজুন
“আমি কেন বেঁচে আছি?” এই প্রশ্নটা শুনতে বড় লাগলেও, উত্তরটা খুবই সাধারণ।
→ আপনি কী ভালোবাসেন?
→ কী করলে আপনি কাজে আনন্দ পান?
→ আপনি কী ভালো পারেন?
এই তিনটাকে মিলিয়ে আপনার Ikigai খুঁজে নিন। যখন আপনি লক্ষ্য বুঝে যান, অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মাথা থেকে সরে যায়।
৩. Kaizen – একটু একটু করে বদলান
জাপানিরা বিশ্বাস করে—প্রতিদিন একটু একটু ভালো হলে, একদিন বড় পরিবর্তন আসবেই।
যেমন:
- আজ ৫ মিনিট ধ্যান করলেন
- কাল ১০ মিনিট হাঁটলেন
- পরশু একটা চিন্তা লিখে ফেললেন
এভাবেই ওভারথিংকিং কমে আসবে।
৪. Kintsugi – নিজের ভাঙা জায়গাকেও সম্মান দিন
জাপানে যদি কারও পছন্দের মাটির কাপ ভেঙে যায়, তারা সেটা ফেলে দেয় না। বরং সোনার গুঁড়ো দিয়ে সেটা জোড়া লাগায়।
→ এই কৌশলের মানে: আপনি যদি কোথাও ভুল করেন, কষ্ট পান—সেটা লুকানোর কিছু না। বরং আপনি সেই ভাঙা জায়গা দিয়েই আরও সুন্দর হয়েছেন।
নিজেকে দোষ না দিয়ে, ভালোবাসা দিন।
৫. Shinrin-Yoku – প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান
“Forest Bathing”—মানে গাছের মধ্যে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটা, বসে থাকা, পাখির আওয়াজ শোনা।
→ ঢাকার মধ্যে এটা কঠিন মনে হলেও, কাছের কোনো পার্কে যান।
→ ১৫ মিনিট মোবাইল বন্ধ রেখে শুধু প্রকৃতিকে দেখুন।
বিশ্বাস করুন, চিন্তা অনেক হালকা লাগবে।
৬. Zazen – চুপচাপ বসে থাকা
প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট একদম চুপ করে বসুন।
→ না ফোন, না কথা, না গান—শুধু বসে থাকা।
→ মন অনেক কথা বলবে, কিন্তু আপনি শুধু দেখবেন।
এভাবে ধীরে ধীরে মনের ভেতরের জট খুলে যেতে থাকবে।
৭. Nenbutsu – একই কথা বারবার বলা
Nenbutsu একধরনের মন্ত্রপাঠ। আপনি চাইলে বাংলা শব্দ দিয়েই শুরু করতে পারেন।
যেমন:
- “আমি শান্ত”
- “আমি ঠিক আছি”
- “ভালো কিছু আসছে”
এই কথাগুলো বারবার বললে, মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকতে পারবে না।
৮. Naikan – নিজেকে জিজ্ঞেস করা
রাতে শোয়ার আগে নিজেকে তিনটা প্রশ্ন করুন:
১. আমি আজ কী পেয়েছি?
২. আমি আজ কাকে কী দিয়েছি?
৩. আমি কার জন্য কষ্ট দিয়েছি?
এই প্রশ্নগুলো আপনাকে নিজের ভিতরে ফিরিয়ে নেবে—বাহিরের হাজার চিন্তা নিজেই দূরে যাবে।
ওভারথিংকিং আমাদের সময়, ঘুম, সম্পর্ক—সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু সব চিন্তা খারাপ না, কিছু চিন্তা আমাদের সচেতনও করে। আসল কথা হলো, কোন চিন্তা আপনাকে এগিয়ে নিচ্ছে আর কোনটা পিছিয়ে দিচ্ছে, সেটা বুঝে ফেলা।
জাপানিরা এই জিনিসটা খুব ভালোভাবে জানে। তাই তারা শিখেছে—“শান্ত থাকা মানেই শক্ত থাকা।” আপনিও আজ থেকে অন্তত ১টা কৌশল চালু করুন।