“নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই জয় সম্ভব”—এই কথাটা শুধু কোটেশন নয়, এটা জীবনের সত্য।
রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন। মাথায় চাপা টেনশন, ঘুম আসছে না। হঠাৎ মনে হলো—“আমি আর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছি না!”
এই কথাটা শুধু আপনি নন—আমরা অনেকেই নিজেদের ভিতরে প্রতিনিয়ত লড়াই করি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জীবনে সফল, আত্মবিশ্বাসী ও শান্ত মানুষরা এমনই ৫টি জায়গায় কন্ট্রোল রাখতে পারেন, যেগুলো আমাদের অধিকাংশের নজরেই পড়ে না।
আজকের এই লেখায় জানব, কী সেই ৫টি জায়গা—যেখানে নিয়ন্ত্রণ রাখলে আপনি শুধু জীবনেই এগিয়ে যাবেন না, বরং নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বলে মনে করাও যুক্তিযুক্ত হবে।
১. নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ (Control Over Emotions)
আপনার রাগ কি হুটহাট উঠে যায়? মন খারাপ হলে আপনি কী করেন?
প্রকৃতপক্ষে, আবেগ—বিশেষ করে রাগ, হতাশা, ভয়, হীনমন্যতা—যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে তা ধীরে ধীরে সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যও নষ্ট করে দেয়।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- “Pause before you react”—অর্থাৎ কিছু বলার আগে একটু থেমে ভাবুন।
- সকালে ৫ মিনিট নিঃশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।
- নিজের রাগ, কষ্ট বা হতাশা লিখে ফেলুন জার্নালে।
বাংলাদেশি উদাহরণ:
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া নাসিমা, যিনি প্রতি ক্লাস প্রেজেন্টেশনে নার্ভাস হতেন। পরে তিনি প্রতি সপ্তাহে নিজের অনুভূতি জার্নাল করতেন। ৬ মাস পর তিনি ক্লাসের সেরা প্রেজেন্টার হন।
২. নিজের সময়ের উপর নিয়ন্ত্রণ (Time Management)
একদিনে ২৪ ঘণ্টা—আপনারও, বিল গেটসেরও। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কে কতটা বুদ্ধিমানে সময় ব্যবহার করছে?
সময়ের উপর কন্ট্রোল না থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বপ্ন ও সামর্থ্য। কারণ আলসেমি ও প্রোক্রাস্টিনেশন আমাদের সব ক্ষমতা মুছে দেয়।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- আগের রাতেই পরদিনের প্ল্যান লিখে রাখুন।
- টাইম ব্লকিং করুন—যেমন সকাল ৮টা–১০টা পড়াশোনা, ১০টা–১১টা রিফ্রেশমেন্ট ইত্যাদি।
- Distraction (যেমন: ফোন, অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া) নিয়ন্ত্রণ করুন।
একটা বাস্তব কথা:
আপনি যদি আপনার সময় নিয়ন্ত্রণ না করেন, তাহলে আপনার সময় আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
৩. নিজের কথার উপর নিয়ন্ত্রণ (Control Over Words)
“ভালো কথা মধুর, আর তিক্ত কথা বিষের মতো”—এই প্রবাদটা আপনি হয়তো শুনেছেন। কিন্তু জীবনে কজন এটা বাস্তবে রপ্ত করতে পারেন?
অনেক সময় সম্পর্ক, বন্ধুতা, এমনকি চাকরির সুযোগও হারিয়ে যায় শুধু একটি ভুল কথার জন্য।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- রাগের সময় কিছু না বলাই ভালো।
- অন্যকে কিছু বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—“এটা শুনলে সে কেমন অনুভব করবে?”
- কথার মধ্যে সম্মান রাখুন—even when you disagree.
জীবনের উদাহরণ:
একজন প্রফেসর বলতেন—“তুমি যদি কথায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারো, তুমি জীবনেও অনেক কিছু পাবে।”
৪. নিজের অভ্যাসের উপর নিয়ন্ত্রণ (Control Over Habits)
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা গুছান, পানি খান, হালকা ব্যায়াম করেন—তাহলে আপনি সারা দিনই অনেক বেশি ফোকাসড থাকবেন।
অন্যদিকে, আলসেমি, অতিরিক্ত খাবার, সারাদিন ঘুম—এইসব অভ্যাস গড়ে তোলে ‘একটা আটকে পড়া জীবন’।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- ২১ দিনের জন্য একটা ভালো অভ্যাস শুরু করুন।
- খারাপ অভ্যাস প্রতিদিন একটু কমিয়ে আনুন।
- নিজের প্রতিটি কাজ ট্র্যাক করুন—একটা ছোট নোটবুকে বা অ্যাপে।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে:
গাজীপুরের মেহেদি, যিনি ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিং শিখেছিলেন—শুধু সকালে সময় ধরে অভ্যাস তৈরি করেই তিনি এখন মাসে ৫০,০০০ টাকা আয় করেন।
৫. নিজের চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ (Control Over Thoughts)
আপনি যেভাবে ভাবেন, সেভাবেই জীবন গড়ে ওঠে। নেতিবাচক চিন্তা আপনার মনকে বিষিয়ে তোলে, আর ইতিবাচক চিন্তা—একটা সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- নেতিবাচক চিন্তা এলে ভাবুন—“এটার পজেটিভ দিক কী হতে পারে?”
- প্রতিদিন অন্তত ৩টা ধন্যবাদযোগ্য বিষয় লিখুন (Gratitude Practice)।
- “আমি পারবো না”–এর বদলে বলুন—“আমি শিখে নেবো।”
সিলেটের রুহুল আমিন, যিনি বারবার চাকরিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। পরে তিনি মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে ‘গ্রেটিটিউড জার্নালিং’ শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি চাকরি পান এবং নিজের ক্ষুদ্র বিজয়কে উদযাপন করতে শিখেন।
“জীবনের নিয়ন্ত্রণ মানেই অন্যকে নিয়ন্ত্রণ নয়—নিজেকে নিয়ন্ত্রণ।”
এই ৫টি জায়গা—আবেগ, সময়, কথা, অভ্যাস, ও চিন্তা—যদি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে আপনি শুধু সফল হবেন না, আত্মতৃপ্তিও পাবেন।
আজ থেকে মাত্র ১টি জায়গা বেছে নিন—যেমন সময়। এবং পরের ৭ দিনে শুধু সেটাতেই ফোকাস করুন। এরপর একে একে বাকি জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনুন।
একদিন হয়তো আপনাকেই কেউ বলবে—
“আপনি কেমন করে নিজেকে এত ভালোভাবে গুছিয়ে রাখেন?”
আপনি শুধু হাসবেন। কারণ আপনি জানবেন—আপনি নিজেকে জয় করেছেন।