মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingসারাদিন ডেস্কে বসে থেকেও সুস্থ থাকার গল্প: ব্যস্ত জীবনের সহজ ৭টি টিপস

সারাদিন ডেস্কে বসে থেকেও সুস্থ থাকার গল্প: ব্যস্ত জীবনের সহজ ৭টি টিপস

ভাবুন তো— সকাল ৯টায় অফিসে ঢুকলেন, বিকেল ৫টায় বের হলেন। দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে গেল একটানা চেয়ারে বসে। কাগজপত্র, ফাইল, মিটিং আর কম্পিউটার স্ক্রিনের মাঝে নিজের শরীরের কথা ভাবার সময়ই যেন নেই। বিকেলের ক্লান্ত শরীরটাকে সামলাতে কফি এক কাপ, দুপুরে হয়তো বাইরের খাবার, আবার রাতে ঘরে ফিরেও ক্লান্তির কারণে কোনো ব্যায়াম করা হয় না।

এটাই কি আপনার গল্প?

বাংলাদেশে বেশিরভাগ চাকরিজীবী এই সমস্যার ভেতরেই আছেন। অথচ সত্যি হলো—ফিট থাকা মানেই জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো নয়, বরং কিছু সচেতন অভ্যাস গড়ে তোলা।

চলুন দেখি কীভাবে ছোট্ট কিছু পরিবর্তনে অফিসের ব্যস্ত রুটিনেও নিজের শরীর ও মনকে ফিট রাখা সম্ভব।

১. একটানা বসে থাকা নয়—‘মুভমেন্ট’ চাই

ডা. জেরেমি লন্ডনের মতে, দীর্ঘ সময় বসে থাকা আমাদের শরীরের জন্য ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সমাধান কী?

  • প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর উঠে দাঁড়ান।
  • অফিসে ওয়াশরুম বা ক্যান্টিনে যাওয়ার সময় লিফট না নিয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
  • ফোনে কথা বলার সময় চেয়ারে না বসে হাঁটুন।

মনে রাখবেন—শরীরের প্রতিটি নড়াচড়া আপনার মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখে।

২. বাইরের খাবারের অভ্যাস বাদ দিন, বাসার খাবারই সেরা

অফিস শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা, রোল বা ফ্রাইড চিকেন খেতে হয়তো অনেক ভালো লাগে। কিন্তু এগুলোতেই থাকে অতিরিক্ত তেল, লবণ, প্রসেসড উপাদান আর ট্রান্স ফ্যাট। নিয়মিত খেলে শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি লিভারের সমস্যাও হতে পারে।

চেষ্টা করুন—

  • প্রতিদিন বাসা থেকে টিফিন নিয়ে যাওয়া।
  • ভাত, ডাল, সবজি বা মাছ—যা হজমে সহজ।
  • যদি বাইরে খেতেই হয়, তাহলে গ্রিলড বা সেদ্ধ খাবার বেছে নিন, ভাজাভুজি নয়।

একজন ব্যাংকের চাকরিজীবী সেলিনা আপার গল্প শেয়ার করা যায়—তিনি প্রতিদিন বাইরে খেয়ে বারবার অসুস্থ হতেন। এখন অফিসে নিজের টিফিন বক্স নেন এবং তিন মাসে ওজন কমেছে ৫ কেজি, সঙ্গে এনার্জিও বেড়েছে।

৩. পানির অভ্যাস

অফিসে কাজের চাপের কারণে অনেকে পানি খাওয়া ভুলে যান। তার পরিবর্তে দিনে ৪-৫ কাপ চা বা কফি খেয়ে ফেলেন। এতে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি বাড়ে।

সমাধান হলো—

  • টেবিলে সবসময় একটি পানির বোতল রাখুন।
  • প্রতিদিন অন্তত ২-২.৫ লিটার পানি পান করার লক্ষ্য রাখুন।
  • প্রতিবার কফি বা চা খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন।

৪. অফিসের মাঝেই ছোট এক্সারসাইজ

জিমে সময় দিতে না পারলেও অফিসেই করা যায় কিছু ছোট্ট এক্সারসাইজ।

  • চেয়ারেই বসে লেগ স্ট্রেচ করুন।
  • টেবিল ধরে কয়েকবার স্কোয়াট করুন।
  • লাঞ্চ ব্রেকে ১০ মিনিট হাঁটা দিন।

এসব ছোট ছোট এক্সারসাইজ রক্তসঞ্চালন বাড়াবে, ক্লান্তি দূর করবে এবং মনোযোগ বাড়াবে।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম—সাফল্যের গোপন শক্তি

অফিস শেষে সিরিজ দেখা বা ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে রাত ১-২টা বেজে যায়—এটা আমাদের প্রায় সবারই অভ্যাস। অথচ ঘুম কম হলে শরীর কখনোই সুস্থ থাকতে পারে না।

  • প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
  • শোবার আগে মোবাইল দূরে রাখুন, অন্তত আধা ঘণ্টা আগে স্ক্রিন অফ করুন।
  • চাইলে হালকা বই পড়া বা মৃদু গান শুনতে পারেন।

৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট—মনও চাই সুস্থতা

অফিসের ডেডলাইন, বসের চাপ বা টার্গেট পূরণের দুশ্চিন্তা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে অস্থির করে দেয়। এর ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

সমাধান—

  • প্রতিদিন কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করুন।
  • কাজের ফাঁকে জানালার বাইরে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মনকে ফ্রি করুন।
  • ছুটির দিনে নিজেকে সময় দিন—বই পড়া, গান শোনা বা ভ্রমণ।

৭. ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন

অনেকেই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেন—“কাল থেকে এক ঘণ্টা জিম করব, ডায়েট করব।” কিন্তু ব্যস্ত চাকরিজীবনে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাই ছোট ছোট পরিবর্তন আনুন—

  • প্রতিদিন ১০ মিনিট হাঁটা।
  • প্রতিদিন দুপুরে এক বেলার খাবার হেলদি করা।
  • সপ্তাহে ২ দিন ভাজাভুজি বাদ দেওয়া।

এই ছোট্ট পদক্ষেপগুলোই দীর্ঘমেয়াদে বড় পরিবর্তন আনবে।

৯টা-৫টা চাকরি মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। বরং এটি হতে পারে স্বাস্থ্যকর জীবনের নতুন সূচনা। শুধু একটু সচেতনতা, কয়েকটি ছোট্ট অভ্যাস এবং নিজেকে ভালো রাখার ইচ্ছা—এগুলোই আপনাকে ফিট, এনার্জেটিক এবং মানসিকভাবে শক্ত রাখবে।

মনে রাখুন, চাকরি ছেড়ে দেওয়া সমাধান নয়—বরং চাকরির মাঝেই ফিট থাকার উপায় খুঁজে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

আজ থেকে শুরু করুন—অফিস ডেস্কের পাশেই ছোট্ট নড়াচড়া, বাসা থেকে টিফিন, পর্যাপ্ত পানি আর যথেষ্ট ঘুম। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি নিজেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ফ্রেশ, মনোযোগী ও খুশি অনুভব করবেন।

কারণ—ফিট থাকা মানে শুধু শরীরকে নয়, মনকেও শক্ত রাখা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular