বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
HomeBusinessInsightsফিনটেক বিপ্লব: বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে যে প্রযুক্তি

ফিনটেক বিপ্লব: বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে যে প্রযুক্তি

ফিনটেক বা আর্থিক প্রযুক্তি হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে প্রথাগত আর্থিক পরিষেবা এবং লেনদেনকে উন্নত ও দ্রুততর করার একটি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে দ্রুত ডিজিটালাইজিং অর্থনীতিতে ফিনটেকের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে এবং এটি দেশের আর্থিক খাতকে নতুন রূপ দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রসারের কারণে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা (ডিএফএস) খুব দ্রুত দেশের মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফিনটেক ব্যক্তি, ব্যবসা এবং দেশের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার এবং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকায় ফিনটেক শিল্পের বিকাশের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যা আর্থিক পরিষেবাগুলোর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশে ফিনটেক শিল্পের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং দ্রুত ডিজিটালাইজিং জনসংখ্যার দেশ, যা ফিনটেক শিল্পের উন্নয়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট বাজারের লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৮৪০ কোটি মার্কিন ডলারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) লেনদেন প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। ডিজিটাল ঋণ এবং ইনভয়েস ফ্যাক্টরিং শিল্পের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার আনুমানিক ৩০ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিনটেক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ এসেছে। বিভিন্ন ফিনটেক খাতের এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এবং উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ একটি শক্তিশালী গতিশীল শিল্পের ইঙ্গিত দেয়।

ফিনটেকের মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) অন্যতম। এমএফএস গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত দেশে ২৩ কোটি ৫৭ লক্ষেরও বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্ট নিবন্ধিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এমএফএস-এর মাধ্যমে ১৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমএফএস-এর মাধ্যমে ১০ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ৫৬ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি লেনদেন হয়েছে। মোবাইল আর্থিক পরিষেবা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহারও দ্রুত বাড়ছে। অনলাইন এবং কন্টাক্টলেস লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে ঢাকা ডিজিটাল লেনদেনের প্রধান কেন্দ্র ছিল, যেখানে মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ এবং লেনদেনের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। শহরটিতে ব্যয়ের ২০ শতাংশ বৃদ্ধিও দেখা গেছে, যেখানে ৬০ শতাংশ গ্রাহক অনলাইন পেমেন্ট পছন্দ করেন। প্রায় ৭ লক্ষ ব্যবসায়ী বর্তমানে কিউআর কোডভিত্তিক পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডিজিটাল লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। এমএফএস-এর পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্টও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, যার প্রধান কারণ ই-কমার্স এবং লেনদেনের সুবিধা।

ঋণদান প্ল্যাটফর্মের উত্থান ফিনটেক শিল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ডিজিটাল ঋণদান প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং ছোট আকারের ঋণের উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ডিজিটাল ঋণদান সম্প্রসারণের জন্য ফিনটেক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল ঋণদান এসএমই এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়নের ব্যবধান পূরণে একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী যেমন বিকাশ, নগদ এবং রকেট দেশের ফিনটেক বাজারে প্রধান খেলোয়াড়। বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, পেমেন্ট এগ্রিগেশন (যেমন এসএসএলকমার্জ, আমারপে), ডিজিটাল ঋণদান (যেমন স্বাধীন ফিনটেক) এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন নতুন ফিনটেক কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করছে। এমএফএস লেনদেন, ই-কমার্স এবং অন্যান্য লেনদেনের জন্য ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এসএমইগুলোও তাদের আর্থিক প্রয়োজনের জন্য ফিনটেক সমাধান গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভোক্তা এবং ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রেই ফিনটেক সমাধানের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর আস্থা ও নির্ভরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের উচ্চ হার ফিনটেক শিল্পের আরও বিকাশে সহায়তা করবে। প্রায় সর্বজনীন মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাগুলোকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি বিশাল এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো সরবরাহ করে।

ডিজিটাল ঋণদান ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে ক্রেডিট স্কোরিং উন্নত করে ঋণের সুবিধা আরও বাড়ানো সম্ভব । এসএমই-দের জন্য প্ল্যাটফর্ম-ভিত্তিক ই-লোনের সুযোগ তৈরি হয়েছে । বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নিওব্যাংকও ডিজিটাল ঋণদান বাজারে প্রবেশ করছে । ডিজিটাল ঋণদান উদ্ভাবনী ক্রেডিট স্কোরিং পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে এসএমই-দের আর্থিক চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইনসুরটেক বা বীমা প্রযুক্তি বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে একটি নতুন ক্ষেত্র, তবে এর বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল বীমা সমাধান গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে, দক্ষতা বাড়াতে এবং বীমা দাবি ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করতে পারে। ব্যাংকাসুরেন্স এবং মাইক্রোইন্সুরেন্স বীমার প্রসার বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশে ইনসুরটেক বাজারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, যা ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে তৈরি হওয়া নতুন গ্রাহকদের কাছে বীমা পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারে।

ওয়েলথটেক বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি আরেকটি উদীয়মান ক্ষেত্র। ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবা এবং ডিজিটাল বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনার সুযোগ বাড়ছে। ডিজিটাল অভিজ্ঞতার ক্রমবর্ধমান চাহিদা সম্পদ ব্যবস্থাপনাকেও প্রভাবিত করছে। একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং প্রযুক্তি-সচেতন জনসংখ্যার কারণে ওয়েলথটেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অত্যাধুনিক বিনিয়োগ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিষেবা প্রদানের একটি সুযোগ তৈরি করেছে।

ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট বা আন্তঃসীমান্ত অর্থ লেনদেন বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স দেশে আসে। ফিনটেক এই লেনদেন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করতে পারে। ক্রস-বর্ডার পেমেন্টের সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য ফিনটেক এবং পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম রেমিট্যান্স পাঠানো এবং গ্রহণ করাকে আরও দ্রুত এবং কম খরচে সম্পন্ন করতে পারে।

ফিনটেক শিল্পের একটানা বিবর্তন এবং নতুন সমাধানের উত্থান নতুন ব্যবসার মডেল তৈরি করছে। বাংলাদেশের ফিনটেক কোম্পানিগুলোর বিশ্বব্যাপী ফিনটেক সফটওয়্যার এবং পরিষেবা সরবরাহকারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভাবন কেন্দ্র এবং নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্স নতুন উন্নয়নের জন্য সহায়ক হতে পারে। ফিনটেকের গতিশীল প্রকৃতি এবং সহায়ক নিয়ন্ত্রক পরিবেশ বাংলাদেশের বাজার এবং এর বাইরেও তৈরি হওয়া বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী নতুন ব্যবসার মডেল তৈরি করার একটি শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।

ফিনটেক সমাধানগুলো আর্থিক লেনদেন স্বয়ংক্রিয় করে ব্যবসার পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সাহায্য করে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম লেনদেনের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। ফিনটেক এসএমই-দের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং অর্থ প্রদানের সময় কমাতে পারে। আর্থিক প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করার মাধ্যমে এবং ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে, ফিনটেক ব্যবসার কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে এবং যথেষ্ট পরিমাণে খরচ সাশ্রয় করতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ফিনটেক প্ল্যাটফর্মগুলো এসএমই-দের জন্য বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করে। ডিজিটাল ঋণদান প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষুদ্রঋণ এবং কার্যকরী মূলধন সরবরাহ করে। এআই-ভিত্তিক ক্রেডিট স্কোরিং ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক ক্রেডিট ইতিহাসবিহীন এসএমই-দের ঋণের সুবিধা উন্নত করতে পারে। ফিনটেক এসএমই-দের জন্য মূলধন প্রাপ্তিকে সহজ করে তোলে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফিনটেক ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসাগুলোকে বৃহত্তর গ্রাহক গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং অনলাইন লেনদেন সহজ করতে সহায়তা করে। পেমেন্ট গেটওয়েগুলো ই-কমার্স লেনদেনকে সহজ করে তোলে। ফিনটেক ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ব্যবসাগুলোকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। ফিনটেক বিশেষ করে এসএমই-দের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে ডিজিটাল বাণিজ্য এবং অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে তাদের বাজার প্রসারিত করতে সক্ষম করে।

ফিনটেক প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের জন্য নির্বিঘ্ন এবং সুবিধাজনক অর্থ প্রদানের বিকল্প সরবরাহ করে। ডিজিটাল ওয়ালেট এবং কিউআর কোড লেনদেনকে আরও সহজ করে তোলে। ফিনটেক দ্রুত এবং আরও কার্যকর অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি উন্নত করতে পারে। ফিনটেক দ্রুত, সুবিধাজনক এবং নিরাপদ অর্থ প্রদানের বিকল্প সরবরাহ করে সামগ্রিক গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করে, যা গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং আনুগত্য বৃদ্ধি করে।

ফিনটেক বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে আর্থিক পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমএফএস গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছেছে। ফিনটেক নারীসহ সমাজের প্রান্তিক অংশকে ক্ষমতায়িত করার সম্ভাবনা রাখে। ফিনটেক বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা লক্ষ লক্ষ পূর্বে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় এনে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখে।

ফিনটেক আর্থিক পরিষেবাগুলোর সুবিধা বৃদ্ধি, লেনদেন খরচ হ্রাস এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা তৈরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে। ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিনটেক খাতের প্রবৃদ্ধি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি এবং উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম একটি ডিজিটাল ট্রেইল তৈরি করে, যা কর ট্র্যাকিং এবং সংগ্রহে সহায়তা করে এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করে। নগদ নির্ভরতা কমাতে বাংলা কিউআর-এর মতো উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। ফিনটেক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে সহায়ক হতে পারে। ফিনটেকের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে ধাবিত হওয়া অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে এবং নগদ অর্থের উপর নির্ভরতা কমায়, যা সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার দিকে ধাবিত করে।

ফিনটেক শিল্প প্রযুক্তি, অর্থ এবং গ্রাহক পরিষেবা খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখে। উদীয়মান ফিনটেক খাত বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে, যা বেকারত্ব হ্রাস এবং একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী গঠনে অবদান রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর ভূমিকা

উদ্যোগের নাম উদ্দেশ্য বর্তমান অবস্থা
নিয়ন্ত্রক ফিনটেক ফ্যাসিলিটেশন অফিস (আরএফএফও) আর্থিক খাতের উদ্ভাবকদের আকৃষ্ট করা এবং জনসাধারণের জন্য আর্থিক পরিষেবাগুলোর সুবিধা বৃদ্ধি করা চালু আছে
ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) “বিনিময়” বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তর সক্ষম করা চালু আছে
বাংলা কিউআর একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড কিউআর পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং নগদ নির্ভরতা হ্রাস করা চালু আছে
টাকা পে আন্তর্জাতিক কার্ডের উপর নির্ভরতা কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা বহিঃপ্রবাহ হ্রাস করা চালু আছে
নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্স ফিনটেক কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের পণ্য ও পরিষেবা পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া পরীক্ষামূলক পর্যায়ে
ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে অ্যাকাউন্ট এবং কার্ড-ভিত্তিক লেনদেনের আন্তঃকার্যক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা চালু আছে

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের পথ

ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডিজিটাল জ্ঞানের অভাবের কারণে তৈরি হওয়া ডিজিটাল বিভাজন একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। স্মার্ট ডিভাইস ভর্তুকি, লেনদেন খরচ কমানো এবং গ্রামীণ অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। ফিনটেকের সুবিধাগুলো যাতে সকলে পায়, তার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ডিজিটাল জ্ঞান বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

ডিজিটাল জগতে সাইবার হুমকি এবং আর্থিক প্রতারণার ঝুঁকি বাড়ছে। শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডেটা সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঝুঁকি মোকাবিলা করা প্রয়োজন। ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাগুলোর নিরাপত্তা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা ফিনটেকের অগ্রগতি এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে জ্ঞান এবং সচেতনতার অভাব রয়েছে। ডিজিটাল অর্থায়নের সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাদের শিক্ষিত করার জন্য আর্থিক জ্ঞান বিষয়ক কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। আর্থিক জ্ঞান বৃদ্ধি করা ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং কার্যকরভাবে উপলব্ধ ফিনটেক পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম করে তুলবে।

একটি আরও শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ফিনটেক ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য কিছু সুপারিশ:

  • বিভিন্ন ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম এবং ঐতিহ্যবাহী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা জোরদার করা   
  • ডেটা সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা সুরক্ষার কাঠামো উন্নত করা।
  • ফিনটেক স্টার্টআপ, ব্যাংক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
  • নতুন সমাধানগুলোর পরীক্ষা এবং বিকাশের জন্য উদ্ভাবন কেন্দ্র এবং নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্স প্রতিষ্ঠা করা।
  • ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা তৈরি করা।
  • ব্লকচেইন এবং এআই-এর মতো উদীয়মান ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দেওয়া।
  • এসএমই এবং ব্যক্তিদের জন্য ঋণের সুবিধা উন্নত করতে ডিজিটাল ঋণদান উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
  • ইনসুরটেক এবং ওয়েলথটেক খাতের প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করা।
  • কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী আন্তঃসীমান্ত অর্থ লেনদেন সমাধানের বিকাশকে সহজতর করা।
  • জিডিপিআর-এর মতো আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে ডেটা গোপনীয়তা বিধিমালা প্রণয়ন করা।   

একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ফিনটেকের সম্ভাবনা উন্মোচন

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” এবং “স্মার্ট বাংলাদেশ” এর স্বপ্ন পূরণে ফিনটেক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ফিনটেক দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে ফিনটেকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং লক্ষ লক্ষ নাগরিকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular