back to top
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Iconবয়স কোনো বাঁধা নয় — কলনেল স্যান্ডারসের ৬৫ বছর বয়সে শুরু হওয়া...

বয়স কোনো বাঁধা নয় — কলনেল স্যান্ডারসের ৬৫ বছর বয়সে শুরু হওয়া বিজনেস কাহিনি

একটি ছোট্ট প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি—

আপনি যখন ৬৫ বছর বয়সে পৌঁছাবেন, তখন কি ভাববেন—“আমার জীবন শেষ”?

নাকি, বলবেন—“এখনো শুরু করা যায়!”

এই দ্বিতীয় কথাটি যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্যই এক জীবন্ত কিংবদন্তির গল্প—হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডারস, যিনি আমাদের পরিচিত KFC-র কলনেল স্যান্ডারস হিসেবে।

৬৫ বছর বয়সে শুরু! এটা কি সম্ভব?

স্যান্ডারসের জীবনে ব্যর্থতা ছিল যেন ছায়ার মতো। কখনো স্টিমবোট কোম্পানিতে চাকরি, কখনো ফার্মে কাজ, আবার কখনো আইনজীবী হবার চেষ্টা। কিন্তু সব জায়গাতেই এক পর্যায়ে থেমে গেছেন।

৬৫ বছর বয়সে তিনি শুধু একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষই ছিলেন না, বরং পকেটে ছিল মাত্র ১০৫ ডলার আর এক প্ল্যান—নিজের বানানো ফ্রায়েড চিকেনের রেসিপি দিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট চেইন বানাবেন।

কে বলেছে, সত্তরের পরে স্বপ্ন দেখা যায় না?

স্যান্ডারস নিজের পুরনো রেসিপি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রেস্টুরেন্টে রেস্টুরেন্টে। প্রায় ১,০০৯ বার না শুনেছেন, কেউ বলেনি, “হ্যাঁ, আমরা তোমার রেসিপি কিনবো।”

কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। একসময়, এক রেস্তোরাঁয় তার রেসিপি চলে। সেখান থেকে শুরু।

এরপর KFC-এর জন্ম। আজ ১৫০+ দেশে ২৫,০০০-এর বেশি আউটলেট।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট: শুরু করতে বয়স লাগে না, লাগে ইচ্ছা

আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা হলো—

“৪০ পেরোলে জীবনের বড় অধ্যায় শেষ, আর ৫০-৬০ মানেই শুধু বিশ্রাম।”

কিন্তু সত্যি কি তাই?

বরং এই সময়টাই সবচেয়ে অভিজ্ঞ, পরিণত আর আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সময়।

জীবন দেখেছেন অনেক, ব্যর্থতা বুঝেছেন, এখন ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।

এমনকি গ্রাম বা শহরের মাঝ বয়সী কেউ—যিনি হয়তো বেকার, অবসরপ্রাপ্ত, বা সংসারের দায়িত্ব শেষ করে নিজের জন্য কিছু করতে চান—তারাও পারেন নতুন কিছু শুরু করতে।

বাংলাদেশের বাস্তব উদাহরণ: সাহসী শুরু

১. রেহানা বেগম (৪৮), রাজশাহী

দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করে স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবনের মানে হারিয়ে ফেলেছিলেন।

পরে হ্যান্ডক্রাফট শিখে ইউটিউব দেখে নিজের “Rehana’s Craft” নামে ফেসবুক পেজ খুলেন। এখন অনলাইনে সেল করেন ব্যাগ, দেয়াল ঝুল, এবং জুয়েলারি। আয় করছেন মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা।

২. মাসুদ পারভেজ (৫৫), চট্টগ্রাম

বহুদিন চাকরির পর অবসর নিয়ে শুরু করেন ছোট একটি ক্যাফে।

নিজের স্পেশাল চিকেন রোল এখন আশেপাশের এলাকায় ট্রেন্ড!

স্যান্ডারসের থেকে শেখার মতো ৫টি বিষয়

১. বয়সের অভিজ্ঞতা, তরুণদের চেয়েও শক্তিশালী

তরুণেরা উৎসাহী, কিন্তু অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকে। বয়স হলে আপনি জানেন কী কাজ করে, কী কাজ করে না।

২. একবার ব্যর্থতা মানেই সব শেষ নয়

স্যান্ডারস জীবনে ১০ বার চাকরি হারিয়েছেন, ২ বার ব্যবসা ভেঙেছে। তবুও শেষ সময়ে সফল।

৩. ছোট্ট আইডিয়াও বড় হতে পারে

শুধু একটা ফ্রায়েড চিকেন রেসিপি ছিল তার—এটাই হয়েছে বহুজাতিক ব্র্যান্ড।

৪. ‘না’ শুনে হতাশ না হয়ে উন্নতির রাস্তা খুঁজুন

স্যান্ডারস ১,০০০ এর বেশি ‘না’ শুনেও থামেননি।

৫. কাজের কোনো বয়স নেই, শুধু ইচ্ছেটা চাই

চাকরি না থাকলেও, পুঁজি না থাকলেও ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়ে যায়।

আপনার জন্য কিছু সহজ শুরু করার আইডিয়া (বাংলাদেশি বাস্তবতায়)

  • ইউটিউব বা ফেসবুকে রান্না, সেলাই বা কৃষি বিষয়ক চ্যানেল খোলা
  • গ্রামে অর্গানিক খাবার উৎপাদন করে শহরে বিক্রি
  • অনলাইন বা হোম কিচেন থেকে ফুড ডেলিভারি
  • হস্তশিল্প বা মাটি-কাঠের পণ্য তৈরি করে বিক্রি
  • বাচ্চাদের হোম টিউশন বা ছোটখাটো কোচিং শুরু করা

যদি আজ আপনি ভাবেন—“আর কিছু করার সময় নেই,” তাহলে কলনেল স্যান্ডারসকে মনে করুন।

যদি আপনি ভাবেন—“বাজারে আমার জায়গা নেই,” তাহলে ভাবুন, একজন বৃদ্ধ মানুষ কিভাবে সারা পৃথিবীতে নিজের রেসিপি ছড়িয়ে দিয়েছেন।

বয়স আপনাকে আটকে রাখতে পারে না—আপনি যদি নিজেকে আটকে না রাখেন।

আজ থেকে শুরু হোক এক নতুন অধ্যায়।

হয়তো আপনার গল্পটাই হবে আগামী দিনের “বাংলাদেশি KFC”।

হয়তো আপনার আইডিয়াটাই বদলে দেবে কোনো একটি গ্রামের অর্থনীতি।

আর আপনি বলবেন—“৬০ বছর বয়সে? ওটাই ছিল আমার আসল শুরু!”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular