মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫
HomeInspirationYouth Achieverব্যবসা থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: ইমু'র সাহসী পথচলা

ব্যবসা থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: ইমু’র সাহসী পথচলা

“আমি কখনোই ভাবিনি, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়া একজন একদিন Software Engineer হবে!”

এই কথাটা বলেছিলেন জোবায়দা খানম ইমু নিজে, যখন দেখা হলো তাঁর পথ কেমন অপ্রত্যাশিতভাবে মোড় নেয়ে। ২০১৯ সালে মাত্র ৩ বছর ৪ মাসে North South University-তে Finance ও Economics-এ দারুণ সাফল্যে Magna Cum Laude ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। তখন কী জানতেন—জীবন তাকে এমন এক যাত্রায় নিয়ে যাবে, যা স্বপ্নেও ভাবা যায় নি। 

১. Applied Economics-এর পোস্টগ্রাদিউয়েট আখ্যান

পরবর্তী অন্যায় ছিল—University of Maryland-তে Applied Economics-এ ভর্তি হওয়া। এরপর Reston Hospital-এ CMA হিসেবে কাজ করলেন চার মাস। কিন্তু ভাবতে ভাবতে লক্ষ্য করলেন—IT সেক্টরে রয়েছে যেমন অপার সম্ভাবনা, সেখানে প্রবেশ করা তাঁর জন্য হতে পারে এক নতুন দিগন্ত। যেখানে ব্যবসা ত্যাগ না করেই প্রযুক্তির সাথে পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

২. QA Mini Course—এক পা প্রযুক্তির দিকে

ইমু-র প্রযুক্তি আকাশে প্রথম উড্ডয়ন তখন হয়, যখন তিনি একটি QA (Quality Assurance) মিনি কোর্স করে ফেলেন। এরপর দ্রুত ২০২১ সালে যোগ দেন Virgin Pulse-এ Software QA Engineer হিসেবে। সেখানেই তাঁর স্বপ্ন পালক ধরে বড় পথে চলতে থাকে। 

৩. PwC-তে আরও এক ধাপ উপরে

পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২, PwC-তে সুযোগ পেলেন Software QA Engineer হিসেবে। এখানে কাজ করেই বুঝতে পারলেন, তার মেধা এবং অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও বড় স্থানে নিয়ে যেতে পারে—এক অবস্থানে যিনি ছিলেন এতদিন BusinessGraduate, তিনি এখন প্রযুক্তির বিশ্বে নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন।

৪. SEC প্রজেক্টে নেতৃত্ব

সাফল্যের ধারা যেন ছন্দ পেল—২০২৩ সালে অভিনয় শুরু করলেন U.S. Securities and Exchange Commission (SEC)-এর একটি ফেডারেল প্রজেক্টে। সেখানে SoftwareQA Team Lead এবং Senior QA Engineer হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যেখানে শুধু কাজ নয়, নেতৃত্ব—দুটি সামলে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। 

৫. Navy Federal Credit Union-এ আজ তিনি SDET

অবশেষে আজ তিনি Software Development Engineer in Test (SDET) হিসেবে কাজ করছেন Navy Federal Credit Union-এ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল ক্রেডিট ইউনিয়ন। সেখানে কাজ করে তিনি প্রমাণ করেছেন—ব্যবসায় শুরু করেও প্রযুক্তি-জগতে শীর্ষে পৌঁছানো সম্ভব।

৬. দরজা কখনো বন্ধ নয়—প্রস্তুতি ও সাহস

ইমু’র এই যাত্রা আমাদের শেখায়:

  • শেখার মানসিকতা: Financial ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলেও, চাইলে প্রযুক্তিতে প্রবেশ করা যায় যদি নিরন্তর শেখার আগ্রহ থাকে।
  • সুযোগ খুঁজে নেয়া: Small QA course থেকে সাফল্যের রাস্তায় যাত্রা—এটা কেবল তাদের সাহসই যে পথ দেখিয়েছে।
  • নিজেকে বদলানোর মানসিকতা: route of comfort ছাড়িয়ে, নতুন পরিবেশে নিজেকে নিজেই প্রমাণ করে চলা—এটাই অব্যাহত সাফল্যের চাবিকাঠি।

আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

বাংলাদেশের তরুণদের জন্য Emu হচ্ছেন এক নতুন উদাহরণ—যে দেখালেন, BBA থেকে SDET, NSU থেকে Global Tech Role—সবই সম্ভব। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস, অধ্যবসায়, এবং একটুখানি সাহস।

আজ আপনার কাছে হয়তো টেক জগতে প্রবেশ করা অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু যদি আপনি চাইলেন, Emu’রা প্রমাণ করেন যে—“যদি ইচ্ছা থাকে, পথ নিজে তৈরি হয়।”

জোবায়দা খানম ইমু’র গল্প শোনার পর আপনার মনে প্রশ্ন উঠে—“আমি কি পারব?” উত্তরটা স্পষ্ট—“হ্যাঁ, আপনি পারতে পারেন।” তার পথ শুধু পার্থক্য তৈরি করেনি, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রযুক্তি প্রেমী শিক্ষার্থীর জন্য এক উৎসাহের দিশা বানিয়েছে।

  • প্রয়োজন নেই বিদেশী কোর্স—আপনার একটা ছোট ঐচ্ছিক কোর্সও শুরু হতে পারে SDET হয়ে Tech Leader হওয়ার যাত্রার শুরু।
  • নিজেকে আঘাত না দিয়ে, শেখার পথে এগিয়ে চলতে হবে—ইমুর মতো আপনি নিজের ক্যারিয়ার বদলে ফেলতে পারবেন।
  • তো ভবিষ্যত আপনার হাতেই—আজ থেকে যদি একটু একটু করে শেখেন, কয়েক বছরের মধ্যে আপনি নিজেই হতে পারেন পরবর্তী Tech Hero।

আপনার প্রতিদিনের ছোট বাস্তব ক্রিয়াকলাপ—যেমন QA শেখা, নিজের প্রকল্পে কাজ করা, নিজের দক্ষতা গড়ে তোলা—এই প্রতিটি চেষ্টাই একদিন আপনাকে নিয়ে যাবে সেই জায়গায়, যেখানে এখনো শুধু স্বপ্নেই থাকে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular