back to top
সোমবার, আগস্ট ২৫, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingসকালের নাশতা না করলে শরীরে কী ঘটে? জানুন হজম ও স্বাস্থ্যের প্রভাব

সকালের নাশতা না করলে শরীরে কী ঘটে? জানুন হজম ও স্বাস্থ্যের প্রভাব

শনিবার সকাল। রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে হাসান ভোরে ঘুমিয়েছে। সকালে ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে ওঠার পর, তড়িঘড়ি করে বের হতে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাস্তার টেবিলে বসার মতো সময় তার নেই। মা বললেন, “একটা কলা হলেও খেয়ে যাও।” কিন্তু হাসান মাথা নাড়িয়ে বলল, “সময় নেই মা, পরে খেয়ে নেব।”

ক্লাসে গিয়ে প্রথম এক ঘণ্টা সব ঠিকই চলল। কিন্তু বেলা গড়াতেই মাথা ভার হয়ে এলো, চোখ ঝাপসা লাগতে লাগল। পেটের ভেতর যেন এক অদৃশ্য চাপা গ্যাস, বুক ধড়ফড় করছে। দুপুরের দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যান্টিনে বসে মনে হলো, শরীরটা যেন কোনো শক্তি পাচ্ছে না। তখনই মনে হলো—সকালে যদি একটু নাশতা করতাম!

কেন নাশতা এত জরুরি?

আমাদের শরীর রাতভর বিশ্রামে থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হজমতন্ত্র যেন নতুন করে জেগে ওঠে, কাজ শুরু করার জন্য অপেক্ষা করে। তখনই দরকার জ্বালানি—যেটা আসে নাশতা থেকে। কিন্তু আমরা যদি সেটা না দিই, শরীরের ভেতরের ঘড়ি এলোমেলো হয়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে সকালে খাওয়া খাবার থেকে। ভাত-ডাল, রুটি-ডিম, কিংবা এক গ্লাস দুধ—এই ছোট ছোট জিনিসগুলো শরীরকে দিনের শুরুতে প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়। নাস্তা বাদ দিলে শরীর সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য পরে অতিরিক্ত খাবার চাইতে শুরু করে। তখন দুপুরে আমরা অজান্তেই বেশি খেয়ে ফেলি—যা আবার হজমে মারাত্মক চাপ ফেলে।

নাস্তা না করলে শরীরে কী ঘটে?

যখন সকালে খাওয়া হয় না, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে থাকে। এর ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া শুরু হয়। হজমতন্ত্রও ধীর হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, নাস্তা না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা অম্লতার সমস্যাও বেড়ে যায়।

দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত নাস্তা বাদ দিলে ঝুঁকি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। চিকিৎসকরা বলেন—টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। আর হজমতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটায় খাবার হজম ঠিকমতো না হয়ে গ্যাস, ফাঁপা ভাব ও বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা বারবার দেখা দেয়।

বাংলাদেশি বাস্তবতায় নাশতা বাদ দেওয়ার প্রবণতা

আমাদের দেশে বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী আর চাকরিজীবীদের মধ্যে নাশতা না করার প্রবণতা অনেক বেশি। হোস্টেলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বড় অংশ সকালে ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি ক্লাসে ছুটে যায়, নাশতার জন্য আলাদা সময়ই থাকে না। অনেক অফিসগামী মানুষও আবার “চা আর বিস্কুটেই হবে” ভেবে বেরিয়ে পড়েন।

কিন্তু এই সাময়িক অভ্যাস ধীরে ধীরে বড় সমস্যার জন্ম দেয়। ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না, অফিসে কাজের গতি কমে যায়, আর শরীরের ভেতর জমতে থাকে হজমের গোলযোগ।

হজম আর নাশতার সম্পর্ক

খালি পেটে বেশি সময় থাকলে পেটের অ্যাসিড জমতে থাকে। এ সময় যদি হঠাৎ ভারী খাবার খাওয়া হয়—যেমন ভাত বা বিরিয়ানি—তাহলে হজমতন্ত্রে বাড়তি চাপ পড়ে। এতে অস্বস্তি, গ্যাস, এমনকি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, সকালে অল্প হলেও কিছু খেলে হজমের যন্ত্র সঠিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। খাবারের রস নিঃসৃত হয়, পেট ধীরে ধীরে প্রস্তুত হয়, আর দুপুরের খাবার সহজে হজম হয়।

তাহলে কেমন নাশতা হওয়া উচিত?

নাশতা মানেই ভারী খিচুড়ি বা পরোটা খাওয়া নয়। সঠিক নাশতা হওয়া উচিত হালকা, পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য। যেমন—

  • সুজি বা ওটস সামান্য দুধ বা দই দিয়ে
  • সেদ্ধ ডিম আর এক টুকরো রুটি
  • কলা, আপেল বা যে কোনো মৌসুমি ফল
  • ডাল স্যুপ বা ভেজিটেবল স্যুপ

এই ধরনের খাবার শরীরকে দেয় শক্তি, আবার হজমেও ফেলে না অতিরিক্ত চাপ।

পরের দিন হাসান যখন সকালবেলায় ডিম-রুটি আর এক কাপ চা খেয়ে বের হলো, তখন সারাদিনই তার শরীর হালকা লাগল। ক্লাসে মনোযোগ বাড়ল, দুপুরে খাওয়ার পর আর কোনো অস্বস্তিও হলো না। ছোট্ট এক অভ্যাসই তার দিনের অভিজ্ঞতা বদলে দিল।

আমাদের অনেকের জীবনই আজ ব্যস্ততায় ভরা। তবুও সকালের নাশতাকে অবহেলা করা মানে দিনের শুরুতেই শরীরকে শাস্তি দেওয়া। মনে রাখুন—নাশতা শুধু পেট ভরানোর ব্যাপার নয়, এটা হলো আপনার হজম, শক্তি, মনোযোগ আর দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।

তাই আগামীকাল সকালে বের হওয়ার আগে একবার ভেবে দেখুন—মাত্র ১০ মিনিট সময় দিয়ে যদি একটা কলা, এক টুকরো রুটি আর এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন, তাহলে সারাদিন আপনার হজম ও মন ভালো থাকবে। আর শরীরও আপনাকে সেই বিনিয়োগের প্রতিদান দেবে সুস্থতায়, সতেজতায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular