রবিবার, জুলাই ২৭, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingঘুম না হলে মস্তিষ্কে জমে বিষ? বিজ্ঞান যা বলছে

ঘুম না হলে মস্তিষ্কে জমে বিষ? বিজ্ঞান যা বলছে

রাত ৩টা। চোখ বন্ধ করতে পারছেন না। ইনস্টাগ্রামের রিল একটার পর একটা দেখছেন, আর ভাবছেন—“আরেকটু দেখি, তারপরই ঘুমাব।”

সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙে ক্লান্ত মাথা নিয়ে। কফি খেয়ে অফিসে যান, কিন্তু মাথা ভার, মনোযোগ নেই, ছোট্ট কথাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ যেন আমাদের প্রতিদিনের গল্প।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এই রাতজাগা শুধু আপনার মুডই খারাপ করছে না, ধীরে ধীরে আপনার মস্তিষ্কেও বিষ জমিয়ে তুলছে? আজ আমরা জানব—ঘুম না হলে কীভাবে মস্তিষ্কে জমে বিষাক্ত উপাদান, আর বিজ্ঞান কী বলছে এর প্রতিকার সম্পর্কে।

মস্তিষ্কের নিজস্ব “পরিষ্কারক” দল: গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম

আমরা জানি, শরীরের বর্জ্য কিডনি ও লিভার দিয়ে বের হয়। কিন্তু ব্রেনের বর্জ্য কোথায় যায়? উত্তর: গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম।

এটি মস্তিষ্কের এক প্রাকৃতিক ড্রেনেজ সিস্টেম, যেটি শুধুমাত্র ঘুমের সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়। এই সিস্টেম মস্তিষ্কের কোষ থেকে বিষাক্ত প্রোটিন, মৃত কোষ এবং বর্জ্য পরিষ্কার করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো সংকুচিত হয়, যাতে “waste clearance” সহজ হয়। আর যখন আমরা জেগে থাকি, এই সিস্টেম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

ঘুম কম হলে বাড়ে ভয়ঙ্কর এক উপাদান: আমাইলয়েড বিটা

ঘুম না হলে কী হয়? সাধারণভাবে, রাতে ঘুমালে আমাদের ব্রেন থেকে বেরিয়ে যায় একটি প্রোটিন—Amyloid-β (β-Amyloid)। এটি স্বাভাবিক অবস্থায়ও তৈরি হয়, কিন্তু ঘুম না হলে এটি জমতে থাকে।

এটা জমে জমে কী হয়?

  •  Alzheimer’s রোগের একেবারে মূল কারণ।
  •  স্মৃতিভ্রান্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস এবং মানসিক বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১ রাত কম ঘুম হলেও এই প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ৫%—যা ভয়াবহ।

ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে ৩০%!

বিশ্বখ্যাত একটি নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে: মাত্র ১ রাত ৪ ঘণ্টা ঘুমালেই আমাদের ব্রেনের reaction time, decision making, problem-solving ability এবং attention span প্রায় ৩০% কমে যায়। অর্থাৎ, আপনি হয়তো অফিসে বসে আছেন ঠিকই, কিন্তু ব্রেন চলছে হাফ স্পিডে।

ঘুমের অভাবে কী কী হয়?

ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়—এটি হল ব্রেনের সারাদিনের ক্লিন-আপ শিডিউল। যদি আপনি ঘুম ঠিকভাবে না নেন, তাহলে—

  1. ডিপ্রেশন বেড়ে যায়
  2. স্মৃতিশক্তি কমে
  3. নির্দেশনা বা ইনস্ট্রাকশন বুঝতে সমস্যা হয়
  4. হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় (বিশেষ করে কোর্টিসল বাড়ে, যেটি স্ট্রেস হরমোন)
  5. ওজন বাড়ে (ঘুম কম হলে লেপটিন কমে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে)

ভালো ঘুমের ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল

১. স্লিপ স্কেডিউল ঠিক রাখুন:

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমান ও জাগুন—even weekends।

২. স্ক্রিন টাইম কমান:

ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে ফোন, টিভি, ল্যাপটপ বন্ধ করুন। নীল আলো (blue light) মেলাটোনিন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের হরমোন।

৩. ঘরের পরিবেশ শীতল ও অন্ধকার রাখুন:

২০–২২°C তাপমাত্রা, হালকা পর্দা, নীরবতা ঘুমে সহায়ক।

৪. ক্যাফেইন ও ভারী খাবার সন্ধ্যার পর বাদ দিন:

চা, কফি, চকলেট রাতের দিকে খেলে ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়।

৫. ঘুমের আগে রিল্যাক্সিং রুটিন চালু করুন:

ধীরে মিউজিক, বই পড়া, 4-7-8 ব্রিদিং।

ঘুম মানেই “মস্তিষ্কের পরিষ্কার অভিযান”

প্রতিদিনের মতো আপনার ব্রেনও নিজের কাজ শেষে পরিষ্কার হতে চায়। আর সেটা সম্ভব শুধু গভীর ঘুমেই। আপনি যদি ভাবেন, “এখন না, পরে ঘুমাব”—তাহলে এই “পরে” হয়তো আপনার ব্রেনের পরের দশ বছর ধ্বংস করে দেবে।

তাই আজ থেকেই ঘুমকে গুরুত্ব দিন। কারণ— “ঘুম মানেই বিশ্রাম না, ঘুম মানেই মস্তিষ্কের পরিষ্কার অভিযান।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular