back to top
রবিবার, জুন ১, ২০২৫
HomeWellbeingFitnessঘুমের অভাবে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে—নিউরোসায়েন্স বলছে ভয়ংকর কিছু!

ঘুমের অভাবে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে—নিউরোসায়েন্স বলছে ভয়ংকর কিছু!

ব্যস্ত জীবনযাত্রায় রাত জাগা যেন এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অফিসের কাজ, পড়াশোনা, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো—সবকিছুতেই ঘুমের সময় কমে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ঘুমের অভাব আপনার মস্তিষ্কের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? সাম্প্রতিক নিউরোসায়েন্স গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো নিজেরই অংশ খেয়ে ফেলতে শুরু করে। শুনতে ভয়ানক লাগলেও, এটি বাস্তবতা।

মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা কর্মী: অ্যাস্ট্রোসাইট ও মাইক্রোগ্লিয়া

আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে দুই ধরনের কোষ—অ্যাস্ট্রোসাইট (astrocytes) ও মাইক্রোগ্লিয়া (microglia)—যারা মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ মস্তিষ্কে অব্যবহৃত বা অকার্যকর সিন্যাপ্স (নিউরনগুলোর সংযোগস্থল) খেয়ে ফেলে, যা স্বাভাবিক।

  • মাইক্রোগ্লিয়া কোষ ব্রেইনের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে, যেমন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে।

ঘুমের সময় এই কোষগুলো ধীরগতিতে কাজ করে, কিন্তু দীর্ঘ সময় ঘুমের ঘাটতি হলে এরা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায় এবং তখন শুধু অপ্রয়োজনীয় অংশ নয়, বরং কার্যকর নিউরন সংযোগও ধ্বংস করতে শুরু করে।

গবেষণার চমকপ্রদ তথ্য

ইতালির Marche Polytechnic University-এর নিউরোসায়েন্টিস্ট মিশেলে বিঔরেল্লি এবং তাঁর দল ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন:

  • যারা নিয়মিত ঘুমায়, তাদের ব্রেইনে অ্যাস্ট্রোসাইট ৬% সিন্যাপ্স পরিষ্কার করে।
  • যারা ঘুমের ঘাটতিতে ভোগে, তাদের ব্রেইনে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩-১৪%!
  • এই কোষগুলো তখন বড়, কার্যকর সিন্যাপ্সও খেয়ে ফেলে—যা স্মৃতি গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এমনকি মাইক্রোগ্লিয়া কোষগুলোও অতিরিক্তভাবে সক্রিয় হয়ে নিউরোইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করতে পারে—যা আলঝেইমার ও অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ঘুমের ঘাটতির ফলাফল কী হতে পারে?

১. স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া

২. মনোযোগের ঘাটতি ও বিভ্রান্তি

৩. মুড সুইং ও মানসিক অস্থিরতা

৪. মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি

৫. আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি

কতটা ঘুম জরুরি?

  • প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
  • শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে ৯-১১ ঘণ্টা।
  • ঘুম যেন টানা ও গভীর হয়, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ ও ঘুম বাড়ানোর উপায়

  • নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন—ঘুম ও জাগরণের নির্দিষ্ট সময় ঠিক রাখুন।
  • স্ক্রিন টাইম কমান—শোবার আগে মোবাইল, ল্যাপটপ এড়িয়ে চলুন।
  • ক্যাফেইন ও অতিরিক্ত চিনিমুক্ত থাকুন রাতে।
  • রিল্যাক্সিং মিউজিক বা বই পড়া—ঘুমে সহায়ক হতে পারে।
  • ঘর অন্ধকার ও নিরব রাখুন—গভীর ঘুমের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন।
ঘুমকে আর অবহেলা নয়

ঘুমকে আর অবহেলা নয়। আজকের এই ব্যস্ত জীবনে আমরা সময় বাঁচাতে গিয়ে ঘুমকে বলি দেই—কিন্তু সেই বলি আমাদের ব্রেইনের অদৃশ্য ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিদিন। নিউরো সায়েন্স আমাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করছে—ঘুমের অভাব মানেই নিজের ব্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা!

তাই ঘুমান, সুস্থ থাকুন, নিজের ব্রেইনের বন্ধু হয়ে উঠুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular