একটা সময় ছিল, যখন সকালটা শুরু হতো পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে। এখন? আমরা ঘুম থেকে উঠেই ‘সান্ডা’র মতো ট্রেন্ডিং কনটেন্টে স্ক্রল করে হারিয়ে যাই। এক মিনিট দেখতে গিয়ে কখন যে এক ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, সেটা বুঝতেই পারি না। অথচ এই সময়টুকুতে আমরা পারতাম একটা বইয়ের অধ্যায় শেষ করতে, নিজের কোনো স্কিল ঝালাই করতে, অথবা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। কিন্তু তাতে মন কোথায়? মন পড়ে থাকে ‘ট্রেন্ডিং’ শব্দটার পেছনে — যেটা মূলত অন্যের তৈরি করা এক মোহময় গোলকধাঁধা।
আমরা মেনে নিই — সান্ডা, ট্রেন্ডিং রিলস বা টিকটকের ভাইরাল কনটেন্টগুলো শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এখন আমাদের মনোযোগের সবচেয়ে বড় চোর। তাহলে প্রশ্ন হলো: কেমন করে আমরা এই মনোযোগ-চুরি ঠেকাবো?
চলুন জেনে নিই কিছু বাস্তব ও প্রমাণিত উপায়, যা আপনাকে এই ডিজিটাল ফাঁদ থেকে বের হতে এবং নিজের জীবনের মূল ফোকাসে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।
১. বুঝে নিন আপনার “মনোযোগ চোর” কে
প্রথম ধাপ হলো আত্মবিশ্লেষণ। আপনি কীভাবে ‘সান্ডা’র মতো ভিডিওতে আটকা পড়ে যাচ্ছেন? ফ্রি টাইমে না বোর ফিল করলে? না কি কোনো কাজের মাঝেও মোবাইলে একবার চোখ বুলাতে গিয়ে পুরো কাজটাই পিছিয়ে যায়?
আপনার ট্রিগার বুঝলে, প্রতিরোধ গড়াটা সহজ হয়।
🧠 Pro tip:
একটা “ডিজিটাল ডায়েরি” রাখুন, যেখানে আপনি লেখেন কখন কী দেখেছেন এবং কেমন লেগেছে।
২. রিয়েলিটি বনাম ভার্চুয়াল ফিল্টার
এই ভাইরাল কনটেন্টগুলো আমাদের এক ধরনের ভার্চুয়াল ‘হাই’ দেয়। আমরা হাসি, শেয়ার করি, মন্তব্য করি — কিন্তু আমাদের সময় ও মনোযোগ আসলে বিনিময়ে কী পাচ্ছে? বেশিরভাগ সময়ই — কিছু না।
একটা ভাইরাল ভিডিও ৩০ সেকেন্ডে হাসাবে, কিন্তু ৩ ঘণ্টার মনোযোগ নষ্ট করবে।
🧘🏻 ফোকাস টিপ:
দিনে ১ ঘণ্টা “no-content zone” রাখুন। এই সময়টায় শুধু বাস্তব জগতে থাকুন — বই পড়ুন, হাঁটুন, পরিবারের সঙ্গে গল্প করুন।
৩. নোটিফিকেশন ডিটক্স শুরু করুন
সান্ডা ভাইরাল হলো মানেই আপনাকে সেটা সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে — এই চাপটাই আমাদের আসল ফাঁদে ফেলে। নোটিফিকেশন মানেই ‘ডিজিটাল ডিসট্র্যাকশন’।
📵 ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ:
– সোশ্যাল মিডিয়ার সব নোটিফিকেশন বন্ধ করুন
– দিনের নির্দিষ্ট ২টা সময়ে শুধু স্ক্রল করার সময় রাখুন
৪. ডিজিটাল মিনিমালিজম চর্চা করুন
শুধু কম দেখা নয়, কম ফলো করুন, কম জানুন, বেশি করুন।
আপনার ফিডে যদি ১০টি পেজ এমন কনটেন্ট দেয়, যেগুলো আপনার সময় খায় — তাহলে ফলো করা বন্ধ করুন। নিজের সময়টা দিন এমন পেজকে যেগুলো আপনাকে শেখায়, অনুপ্রাণিত করে।
📌 ফলো করুণ: SpikeStory, BigThink, Ankur Warikoo – যাদের কনটেন্টে কিছু শিখবেন, শুধু দেখবেন না।
৫. আত্ম-প্রশ্ন করুন: ‘আমি কী পেতে চাই?’
দিনের শেষে প্রশ্ন করুন:
এই কনটেন্ট দেখে আমি কী পেলাম?
আমার জীবন কতটুকু বদলালো?
আমি কি এইভাবেই নিজের সময় কাটাতে চেয়েছিলাম?
এই প্রশ্নগুলোই আপনার ভেতরের ফোকাসকে জাগিয়ে তুলবে।
৬. নিজের লক্ষ্য দৃশ্যমান রাখুন
আপনার ডায়েরির প্রথম পাতায় বা মোবাইল ওয়ালপেপারে লিখে রাখুন:
👉 “আমি সময় নষ্ট করতে আসিনি, জীবন গড়তে এসেছি।”
আপনার লক্ষ্য প্রতিদিন চোখে পড়লে, আপনি স্যান্ডা’র ফাঁদে বারবার পড়বেন না।
উপসংহার:
‘সান্ডা’ বা ভাইরাল ভিডিও ট্রেন্ডের দোষ নেই, দোষ আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন স্ক্রলিংয়ের অভ্যাসে। কিন্তু সুসংবাদ হলো — আপনি চাইলে নিজেকেই এই ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন নিজের জীবনে, নিজেকে শেখার, গড়ার এবং বেড়ে ওঠার দিকে নিয়ে যান। ভাইরাল কনটেন্ট নয়, আপনি নিজেই হোন নিজের জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী “ট্রেন্ড”।
✅ আপনার জন্য ফোকাস চেকলিস্ট (Save করুন)
- দিনে ১ ঘণ্টা No Content Zone
- Notifcation Off
- ২টি নির্দিষ্ট Scroll Time
- মিনিমাম ৩টি শিক্ষামূলক পেজ ফলো
- নিজের লক্ষ্য কোথাও লিখে রাখুন