যখনই আমরা সুখে থাকার ব্যাপারে কথা বলি, আমাদের চিন্তায় আসে যে সব সময়ই সুখে থাকার কথা – প্রতিটা দিনে, প্রতিটা মুহূর্তে সুখে থাকতে চাই এবং আমরা চাই আমাদের জীবনে কখনোই এমন কিছু আসবে না যা আমাদের পছন্দ নয়। আমাদের চেষ্টা থাকে এমন একটা নির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করা যেখানে “সুখ” হচ্ছে একমাত্র লক্ষ্য, এবং এটা ছাড়া বাকি সবকিছুকে আমরা এড়িয়ে চলি।
কিন্তু, “সুখ” নামক বিষয়টির প্রকৃত অর্থ কি?
এটা তোমার প্রিয় খাবারের মতো। প্রিয় খাবার তুমি যতো বেশী খাবে, সবসময় সেটা তোমাকে একই রকম তৃপ্তি দিবে না। অপরদিকে, যখন তুমি এই প্রিয় খাবারটি অনেক দিন পর খাবার সুযোগ পাও, তখনই তার প্রতিটি কামড়ে তার স্বাদ উপভোগ করো। তাহলে, আসলে তোমার এই প্রিয় খাবারটি কি তোমাকে সুখ দিচ্ছে, নাকি যখন তুমি খাচ্ছো তখন এই খাবারটি তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই ঘটনাটি তোমাকে সুখী করছে?
আমাদের একটা কথা মনে রাখা উচিৎ যে, কেবলমাত্র দুঃখ বা বিষণ্ণতাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি যে সুখে থাকার প্রকৃত অর্থ কি।
অন্যেরা সব সময় সুখে আছে, এটা মনে করে থাকা হচ্ছে সুখ বিষয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা।
অধিকাংশ মানুষ তাদেরকেই অনুসরণ করে যাদের আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নির্ভুলভাবে জীবন যাপন করছে এবং ধারনা করা হয় যে তারা সবচেয়ে সুখে আছে। ছোটোবেলা থেকেই আমাদের এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে শেখানো হয় যে, “ সবকিছুর পর সুখে আছি ” – যা কেবলমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও সবাইকে তাদের সবচেয়ে ভালো মুহূর্ত গুলোকেই উপস্থাপন করতে দেখা যায়। তাই আমরা আমাদের আশে পাশে সুখের বিকৃত বহিঃপ্রকাশ দেখে ভুল করি।
বাস্তবে, আমাদের জীবনে কিছু অভাব, অপূর্ণতা আর কিছু অপ্রীতিকর বিষয় থাকেই
নিখুঁত জীবন কেউই পায় না। এমনকি সবচেয়ে মুগ্ধকর সেলিব্রেটি বা ধনাঢ্য মানুষগুলোরও নিজস্ব চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা থাকে।
যখন আমরা নিজের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে নেতিবাচক অনুভব করি, তখন আমরা হন্যে হয়ে সেখান থেকে মুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে পরি। আমাকেও প্রতিনিয়ত অগণিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় সমস্যাগুলো আমার দ্বারা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না এবং আমার এতো বছরের কষ্ট বিফলে যাবে। কিন্তু আমি এই সময়গুলো কাটিয়ে উঠার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করি এবং সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সপ্তাহ, মাস বা বছর কেটে যায় নানা চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে।
নিজের এই কঠিন সময়গুলো কাটিয়ে উঠতে আমি নিজেকে আরও ধৈর্যশীল করে তুলি। নিজের অতীতে পার করে আশা খারাপ সময়গুলোর কথা মনে করি যা আমাকে বর্তমান সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে সাহস যোগায়।
সুখী হবার জন্য চেষ্টা না করে, মনে প্রানে সুখী মানুষ হয়ে যাও
জীবনে যতটা বেশী সম্ভব সুখে থাকতে চাওয়ার চাহিদা খুবই স্বাভাবিক। তাহলে আমরা কি করতে পারি?
প্রথমত, এই বিশ্বাসকে ছুঁড়ে ফেলে দাও যে, সুখে থাকার মানে হচ্ছে নির্ভুল জীবন।
ব্যক্তিগতভাবে, বিনা প্রচেষ্টায় সবকিছু নিখুঁতভাবে হলে আমি একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবো। জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করার যন্ত্রনার সম্মুখীন হয়ে যা অভিজ্ঞতা হয় তা সবসময় আমাদের একই ধরনের সমস্যা থেকে অন্যকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে সাহায্য করে এবং এই অভ্যাস আমাদেরকে অন্যের উপর যত্নবান হতে শেখায়। জীবন যদি নির্ভুল হতো তবে অবশ্যই আমাদের মধ্যে সহমর্মিতার অভাব থাকতো এবং আমরা নিজেকে উন্নত করার কোন সুযোগ পেতাম না।
সত্যিকারের সুখী হবার জন্য, স্থায়ীভাবে সুখী হবার পেছনে ছোঁটা বন্ধ করো। এটা একটা বাজে অভ্যাস। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, সুখী থাকা মানে হলো আমার জীবনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক সময়গুলোকে আমি কিভাবে পাড় করছি এবং নিজেকে প্রস্তুত করছি তার উপর নির্ভর করে।
কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করো। জীবনে এখন কি পাচ্ছ না সেটায় গুরুত্ব না দিয়ে যখন তোমার কিছু ছিলনা সেই সময় থেকে এখনকার তুমি কি পাচ্ছ সেটায় গুরুত্ব দাও।
আমি যখন আমার কথা চিন্তা করি, একসময় আমার কোন পরিচয় বা ক্যারিয়ার ছিল না। কিভাবে নিজের জীবনকে গুছাবো সেটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতাম। একটা সময় দেখলাম নিজের বন্ধুরা সবাই যার যার মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে যা আমি করতে পারছিলাম না। হতাশ হতাম, কিন্তু নিজেকে নিয়ে হাল ছেড়ে দেইনি।
পরবর্তীতে আমি আমার নিজের অস্তিত্ব এবং লক্ষ্য খুঁজে পেলাম স্পাইক স্টোরি শুরু করে। সফলতা বিফলতা ভুলে আমি নিজের মনের মতো কাজ করতে পারছি সেটা ভেবেই আমি অনেক সুখী ছিলাম।
এই স্মৃতি সবসময় আমাকে জীবনের যেকোনো প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমি বিশ্বাস করি, আলোর পথে এগিয়ে যাওয়া শিখতে অন্ধকারের প্রয়োজন হয়।
সুখ এবং দুঃখ একই সাথে বিরাজমান
এই লেখাটি থেকে যা বোঝানো হয়েছে, তোমার জীবন পরিপূর্ণ হবে সুন্দর, সুখী এবং চমৎকার সব মুহূর্তের মাধ্যমে। আনন্দের অশ্রু, উন্মাদনার চিৎকার এবং মজাদার সব গল্পের মাধ্যমে। কিন্তু পাশাপাশি তোমার জীবনে ঝড় বৃষ্টি এবং প্রতিকূলতাও থাকবে যা তোমাকেই অতিক্রম করতে হবে।
কিন্তু যখনই তোমার মুখ আনন্দে উল্লসিত বা দুঃখে বিমর্ষ হবে, মনে রাখবে এটা জীবনেরই একটা অংশ। খুশীর মুহূর্তগুলোকে দুঃখের সময়ের হাতিয়ার বানাও, দুঃখকে এড়িয়ে চলার কোন অবকাশ নেই। তাই নিজেকে একজন সুখী মানুষ হিসেবে দেখতে চাইলে সুখের পেছনে না ছুটে তোমাকে সুখকে অনুভব করতে হবে।