রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫
HomeInspirationYouth Achieverবিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জবি শিক্ষার্থী শিফা

বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জবি শিক্ষার্থী শিফা

“একজন তরুণীর স্বপ্ন যদি দৃঢ় হয়, তবে সেটি শুধু নিজের জীবন নয়, গোটা জাতির জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।”

আজকের গল্পটি এমনই এক তরুণীর—সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী এখন গর্বের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায়।

শিফার যাত্রা: ঢাকা থেকে বিশ্বমঞ্চ

ঢাকার মেয়ে শিফা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগে পড়াশোনা করতে গিয়েই বুঝতে শুরু করেছিলেন—শুধু বইয়ের জ্ঞান দিয়ে হবে না, মানুষের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, বাস্তব সমস্যার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সঙ্গে। কখনও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, কখনও গবেষণা, আবার কখনও সমাজের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানো—এই বহুমুখী অভিজ্ঞতাই তাকে ধীরে ধীরে তৈরি করেছে এক বিশেষ নেতৃত্বগুণে।

বিশ্বমঞ্চে শিফার স্বীকৃতি

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটম এর অধীন অবনিন্সক টেক একাডেমি তাকে মনোনীত করেছে “ভিজিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিপ” ক্যাটাগরিতে।

সারা বিশ্বের আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কয়েক ধাপের বাছাই প্রক্রিয়া শেষে শিফাকে বেছে নেওয়া হয়। তার কর্মঅভিজ্ঞতা, গবেষণা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম এবং অর্জিত পুরস্কার-স্বীকৃতিগুলো বিচারকরা বিবেচনায় নেন।

এবার নির্বাচিত ৫০ নারী নেত্রী অংশ নেবেন World Atomic Week এবং আন্তর্জাতিক নারী নেতৃত্ব কর্মশালা Female Leadership Camp-এ, যেখানে ১০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন। ভাবুন তো, বাংলাদেশের এক তরুণী বিশ্বের এত বড় আয়োজনে নেতৃত্বের আসনে বসছেন!

বহুমুখী অভিজ্ঞতার গল্প

শিফার কাজের তালিকা পড়লে যে কারও বিস্ময় জাগবে।

  • তিনি World Vision International Bangladesh-এর অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কাজ করেছেন Grant Acquisition Management টিমের লিড প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে।

  • ভারতের মেঘালয়ের North-Eastern Hill University-তে গবেষণা করেছেন।

  • University of Information Technology and Sciences (UITS)-এ প্রভাষক হিসেবেও কাজ করেছেন।

  • সবচেয়ে বড় কথা, তরুণদের সফট স্কিল ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন Village Empowerment নামক একটি সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি নিজেই।

অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের তরুণদের জন্য

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ প্রায়ই ভাবে—আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক, সুযোগ কম। কিন্তু শিফা প্রমাণ করলেন, সুযোগ সৃষ্টি করতে হয় নিজের পরিশ্রম, প্রতিভা আর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে।

একজন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে তিনি এখন বিশ্ব নেতৃত্বের আলোচনায়। তার এই যাত্রা আমাদের শেখায়—

  • স্বপ্ন দেখতে হবে বড় করে।
  • নিজের আগ্রহকে কাজে লাগাতে হবে সমাজের কল্যাণে।
  • প্রতিকূলতা আসবে, কিন্তু শেখার আগ্রহ থাকলে সাফল্য ধরা দেবেই।

কেন এই অর্জন আমাদের সবার গর্ব

শিফার অর্জন কেবল তার ব্যক্তিগত স্বীকৃতি নয়; এটি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সক্ষমতার এক প্রতীক। তিনি দেখিয়েছেন, দক্ষতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, গবেষণা—সবকিছু মিলিয়েই তৈরি হয় প্রকৃত নেতৃত্ব।

আজকের শিফা আগামী দিনের বাংলাদেশকে নতুনভাবে ভাবতে শেখাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণী শিক্ষার্থীদের জন্য তার পথচলা এক দারুণ অনুপ্রেরণা।

একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জায়গা করে নেওয়া—শিফার এই অর্জন প্রমাণ করে দেয়, প্রতিভা আর অধ্যবসায়ের কোনো সীমানা নেই।

বাংলাদেশের তরুণদের জন্য তার এই যাত্রা শুধু এক অনুপ্রেরণা নয়, বরং একটি বার্তা—

  • স্বপ্নকে বড় করে ভাবতে হবে।
  • নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে মানুষের সেবায় ব্যবহার করতে হবে।
  • ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

শিফা দেখিয়েছেন, সুযোগ তৈরি হয় কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা আর মানুষের জন্য কাজ করার ভেতর দিয়েই। আজ তিনি বাংলাদেশের নামকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

তার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিটি তরুণীই সম্ভাবনার প্রতীক। সাহস থাকলে, মনোযোগ থাকলে এবং ইতিবাচক চিন্তা থাকলে, বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেওয়া কোনো স্বপ্ন নয়, একদিন বাস্তব হয়ে ওঠে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular