“ভাই, ভাবছিলাম—আপনাদের সার্ভিসটা আমার ছোট বিজনেসে দরকার নেই।” এই বাক্যটা শুনেই সেলস এক্সিকিউটিভ ফাহিম বুঝে গেলেন, আজও কিছু হবে না। তিনি হাল ছাড়লেন না। নম্রভাবে বললেন, “ভাই, একটা মিনিট দেন, আমি কিছু দেখাই… যদি না লাগে, আমিই ফোন কেটে দিব।”
এই এক মিনিটেই বদলে গেল সব।
এই গল্পটা শুধু ফাহিমের নয়—বাংলাদেশের হাজারো সেলস পারসনের গল্প, যারা প্রতিদিন “না” শুনেও “হ্যাঁ”-এর স্বপ্ন দেখে কাজ করে যাচ্ছে।
“না” শুনলে গলা শুকায়, কিন্তু সেখানেই শুরু সাহসের গল্প
সেলস মানেই কি পিচ, টার্গেট আর কনভার্সন? – না। সেলস মানে একটা যুদ্ধ। নিজের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, ক্লায়েন্টের অবিশ্বাসের সঙ্গে, আর পরিস্থিতির প্রতিকূলতার সঙ্গে। একজন সেলস পারসনের সবচেয়ে বড় শক্তি কি? “না” শুনে ভেঙে না পড়ার ক্ষমতা।
ধরুন, আপনি দিনে ১০টা কাস্টমারকে কল দিলেন, ৮ জন কথা শুনতেই চায় না। একজন বললো বাজে কথা। আর একমাত্র একজন একটু শুনলো। সেই একজনই হতে পারে আপনার মাসের সেরা ক্লোজড ডিল।
প্রত্যাখ্যান মানে বন্ধ দরজা না, একটা নতুন দরজার খোঁজ
আমরা যখন কোনো প্রোডাক্ট অফার করি, কাস্টমার তখন নিজের টাকা, সময় আর ভরসা—তিনটাকে বিবেচনায় নেয়। সে যদি “না” বলে, বুঝতে হবে—এটা প্রোডাক্টের না, হয়তো সময় বা প্রসেসের না।
একটা গল্প বলি। মিরপুরের শাহীন ভাই এক ছোট অনলাইন বিজনেস করেন। শুরুতে লোকজন বলত, “ভাই ফেসবুকে কেউ বিশ্বাস করে?” তিনি বলতেন, “ঠিক আছে ভাই, একবার প্রোডাক্ট নেন, পছন্দ না হলে টাকা লাগবে না।” আজ তিনি দিনে গড়ে ৫০টার বেশি অর্ডার পান। কারণ, শাহীন ভাই শিখে গেছেন—না মানে শেষ না, সেটা মানে ‘না এখনই না’।
নিজের বিশ্বাস = সবচেয়ে বড় অস্ত্র
আপনি যদি নিজের প্রোডাক্টে বিশ্বাস না করেন, তাহলে কেউ বিশ্বাস করবে কেন? একজন সেলসপারসনের চোখে আত্মবিশ্বাস থাকতে হয়, কথা বলায় জোর থাকতে হয়, এবং নিজের কথা বিশ্বাস করার স্পষ্টতা থাকতে হয়।
আমেরিকান লেখক জিগ জিগলার বলেছিলেন, “Every sale has five basic obstacles: no need, no money, no hurry, no desire, no trust.”
এই পাঁচটা বাধা আপনি কাটিয়ে উঠতে পারেন একটাই জিনিস দিয়ে—আপনার ভেতরের আগুন।
সেলস মানে খালি টার্গেট না, মানে মানুষ বোঝা
প্রতিটি কাস্টমারের জীবনে একটা গল্প আছে। তার ব্যবসা, তার দরকার, তার সমস্যাগুলো জানতে পারলে আপনি “সেলস পারসন” থেকে হয়ে যাবেন “সমাধানদাতা”। এই জার্নিটাই বদলে দেয় সব।
স্মরণীয় একটা কথা হলো— মানুষ প্রোডাক্ট কেনে না, মানুষ অনুভূতি কেনে। আপনি যদি কাস্টমারকে অনুভব করাতে পারেন, যে আপনি তার সমস্যা বুঝতে পারেন, তাহলে সেলস হবে। না হলে হাজার টেকনিকও ব্যর্থ।
ক্লান্তি আসবে, কিন্তু মনে রাখবেন—এই যুদ্ধ আপনার নিজের জন্য
সেলস করার সময় ক্লান্তি আসবেই। বারবার ফোন, না শোনা কথা, বাজে ব্যবহার, রিজেকশন… সবকিছুর মাঝেও একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে— আপনি কার জন্য লড়ছেন?
আপনার নিজের জন্য। আপনার স্বপ্নের জন্য। হয়তো বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়া সেই কাঙ্ক্ষিত ওমরাহ্, হয়তো সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়ানো, হয়তো নিজের বিজনেস দাঁড় করানো—এই সবকিছুই তো আপনার কারণ। আপনি একটা “না” শুনে যদি নিজেকে দোষ দেন, তাহলে সেই স্বপ্নকে ছোট করে ফেলছেন।
প্রতিদিন একটাও যদি শেখেন, আপনি আগাচ্ছেন
প্রতিটি রিজেকশন আপনাকে শেখায়—
- কীভাবে আরও ভালোভাবে কথা বলা যায়
- কোন সময় কাস্টমার বেশি রেসপন্স করে
- কোন অফার বেশি কাজ করে
- কোন কথা বলে মানুষ সহজে কানেক্ট করে
প্রতিদিন একটা ইনসাইট নিন, নোট করুন, শিখুন। এই অভ্যাস আপনাকে কালকের সেরা সেলসম্যান বানাবে।
সেলস মানে সাহসের গল্প
সেলস জগতে আপনি প্রতিদিন হেরে যাবেন। কিন্তু সেই হেরে যাওয়া মানেই শিখে ফেরা। প্রতিদিন “না” শুনে “হ্যাঁ”-এর দিকে যাওয়াই একটা মিশন। সেটা পারলেই আপনি জিতবেন।
মনে রাখবেন—আপনি সেলস করছেন শুধু প্রোডাক্ট না, বরং নিজের স্বপ্ন, নিজের আত্মবিশ্বাস, নিজের ভবিষ্যৎ। আপনি একদিন সফল হবেন—এই বিশ্বাসটা রাখলেই চলবে না, সেটা নিয়ে প্রতিদিন যুদ্ধ করতেই হবে। আজও যেকোনো একজন “না” বলবে। কিন্তু আপনি বলবেন: “এক মিনিট সময় দেন ভাই—আমি কিছু দেখাই…”