back to top
মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫
HomeProductivityWork Efficiencyপ্রত্যাখ্যান থেকে শক্তি নেওয়া: সেলসপারসনের অদেখা গল্প

প্রত্যাখ্যান থেকে শক্তি নেওয়া: সেলসপারসনের অদেখা গল্প

“ভাই, আজকেও একটা অর্ডার হলো না। মনে হচ্ছে আর পারব না…” এই লাইনটা কতজন সেলসপারসন দিনের শেষে বলেন, কে জানে! কিন্তু ঠিক এই জায়গা থেকেই শুরু হয় সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্পগুলো।

বাংলাদেশের অলিগলি থেকে শুরু করে কর্পোরেট টাওয়ার পর্যন্ত—সেলস এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে কেউই এক দিনে ‘স্টার’ হয়ে ওঠেন না। এখানে পরিশ্রম, প্রত্যাখ্যান, আর ঘামই একমাত্র বিনিয়োগ। আর এই লেখাটি তাদের জন্য, যারা হয়তো ক্লান্ত, হতাশ, কিন্তু থেমে যাননি।

চলুন, দেখি সেই অদেখা অনুপ্রেরণার গল্পগুলো, আর শিখে নেই কীভাবে আজ আপনি হয়তো ‘না’ শুনছেন, কিন্তু কাল বলবেন—“এই ‘না’-ই ছিল আমার পথচলার শক্তি।”

সেলস মানেই রিজেকশন মেনে নেওয়ার সাহস

মোহিত, ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি স্টার্টআপে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিন সকালে ২০টা ফোন করেন। গড়ে ১৫ জন ধরেনই না। যাঁরা ধরেন, তাদের মধ্যে ১০ জন বলেন, “না, আমাদের দরকার নেই।”

একদিন, অফিস শেষে বসকে বললেন, “আমার কি সেলসের কাজটা বাদ দেওয়া উচিত?”

বস শুধু বলেছিলেন, “তুমি হয়তো ১৫টা না শুনেছো, কিন্তু একটা ‘হ্যাঁ’ তোমার আগামী ১৫ দিনের কোটা পূরণ করতে পারে।”

এই কথাটাই মোহিতের সেলস লাইফ বদলে দিয়েছিল।

গবেষণা বলছে, একজন সফল সেলসপারসন গড়ে ৫-৭ বার প্রত্যাখ্যাত হন, তার আগে একজন কাস্টমার রাজি হন। কাজেই ‘না’ মানেই আপনি ফেল না, এটা আপনার সফলতার ঠিক আগের স্টপেজ।

কেন সেলস হচ্ছে সবচেয়ে বড় ‘লাইফ স্কিল’?

সেলস মানে শুধু পণ্য বিক্রি না, এটা আত্মবিশ্বাস বিক্রি। আপনি প্রতিদিন নিজের কথা, বিশ্বাস, পণ্যের উপকারিতা—সবকিছু কাস্টমারের সামনে তুলে ধরেন।

যদি আপনি ভালো সেলসপারসন হন—

  • আপনি যেকোনো জায়গায় নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারেন
  • আপনি মানুষ পড়তে শিখে যান
  • আপনি রিজেকশন সামলাতে শিখেন
  • আপনি নেটওয়ার্কিং আর কনভিন্স করার মাস্টারি পান

আর এই স্কিলগুলোই আজকের বিশ্বে সবচেয়ে দরকারি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেলস নিয়ে চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে সেলস মানে এখনো অনেকের কাছে “ডোর টু ডোর” বিক্রেতা, অথবা টার্গেট পাগলা লোক।

কিন্তু এখন সময় বদলেছে। সেলস মানে এখন—

  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ড কলিং
  • কনসালটেটিভ সেলস
  • SaaS সেলস

একজন তরুণ, যার হাতে মোবাইল আর ইন্টারনেট আছে, সে আজ বাংলাদেশের বাইরের ক্লায়েন্টদেরও প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারছে—এটাই সেলসের শক্তি।

সেলস পারফর্ম করতে চাইলে যা করতে হবে

১. রিজেকশনকে রিফুয়েল হিসেবে দেখুন: যতবার কেউ বলে “না”, ভাবুন—এই মানুষটা হয়তো ‘হ্যাঁ’ বলার সবচেয়ে কাছে।

২. নিজেকে আপডেট রাখুন: সেলস এখন আর শুধু “পিচ” নয়। আপনাকে জানতে হবে কাস্টমারের প্রয়োজন, মার্কেট ট্রেন্ড, এবং প্রযুক্তি।

৩. ডেটা রাখুন, ট্র্যাক করুন: আজ আপনি কত কল করেছেন, কতজন আগ্রহ দেখিয়েছে, কতজন ফলোআপে আছে—এসব না জানলে আপনি প্রতিদিন নতুন করে শুরু করবেন, আগানো সম্ভব হবে না।

৪. সফল সেলসপারসনের গল্প পড়ুন: আপনার অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। জিজ্ঞেস করুন—আপনার কোম্পানির সবচেয়ে বেশি সেলস কে করেন? তারা কীভাবে করেন?

বাস্তব গল্প: কাস্টমারই বদলে দিলো জীবন

রিয়াজ, একজন রেগুলার সেলসপারসন। ঢাকা শহরে এক সফটওয়্যার কোম্পানির হয়ে SME ক্লায়েন্টদের কাছে যান। একদিন এক ক্লায়েন্ট সরাসরি বললেন, “তোমাদের মতো ছেলেরা সব বাটপারি করে।”

রিয়াজ মুচকি হেসে বললেন, “আপনি আমাকে একবার বিশ্বাস করে দেখুন। যদি খুশি না হন, টাকা ফেরত।” ক্লায়েন্ট রাজি হলেন। সেই ক্লায়েন্ট এখন তাদের মাসে ৪টি সফটওয়্যারের সাবস্ক্রিপশন নেন, আর অন্যদের রেফার করেন।

এই হচ্ছে সেলস। বিশ্বাস তৈরি করতে পারলে, আপনি পণ্য নয়—সম্পর্ক বিক্রি করছেন।

সেলস মানেই সাহস

সেলস এমন একটা পেশা যেখানে প্রতিদিন আপনার “না” শোনার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু প্রতিদিন যদি আপনি চেষ্টা করে যান, একদিন আপনিও বলবেন— “আমি একসময় দিনে ১০টা ‘না’ শুনতাম। আজ আমি দিনে ১০টা ‘হ্যাঁ’ পাই।” যে কাজ আপনাকে ভয় শেখায়, সেটাই হয়তো আপনাকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। তাই ভয় নয়—সাহসে থাকুন।

সেলস মানে নিজের কথা বলার সাহস, কাস্টমারের কথা শোনার ধৈর্য, আর প্রতিদিন একটু করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। আপনিই হবেন সেই গল্প, যেটা অন্য কেউ পড়ে বলবে—“আমি পারবো।” আপনার সেলস যাত্রা কেমন? নিচে কমেন্টে জানান! অথবা, আপনার কোনো চ্যালেঞ্জ থাকলে আমাদের ইনবক্সে লিখুন—আমরা সেরা সেলস এক্সপার্টদের পরামর্শ এনে দেব।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular