নেতৃত্ব মানে শুধু অন্যদের পথ দেখানো নয়, বরং নিজের অভ্যাসগুলোকে শানিয়ে তোলা, নিজের ভেতরের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করা। অনেকেই ট্যালেন্ট বা স্কিলের ঘাটতির জন্য নয়, বরং কিছু বিষাক্ত অভ্যাস না কাটাতে পারার জন্যই নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়ে।
চলুন আজ দেখে নেওয়া যাক এমন ৭টি ভয়ংকর অভ্যাস — যেগুলো না ছাঁটলে আপনি যতই চেষ্টাই করুন, সত্যিকারের লিডার হয়ে উঠতে পারবেন না।
১. সময় ব্যবস্থাপনায় গড়িমসি – “পরে করব” রোগ
আপনি হয়তো খুব মেধাবী। আইডিয়া আসে মাথায় বৃষ্টির মতো। কিন্তু কাজগুলো করতে গিয়ে যখন বলেন, “আচ্ছা, কাল করব”— তখনই লিডারশিপের জাহাজে প্রথম ফাটল ধরে। একজন প্রকৃত লিডার সময়কে কাজে লাগান অস্ত্রের মতো। টিমের সামনে তিনি হন সময়নিষ্ঠ এক উদাহরণ। জবাবদিহি করুন সময়ের কাছে, নয়তো সময় আপনাকে বাদ দেবে।
২. ভুল স্বীকার না করার অভ্যাস – “সব ঠিকই করেছিলাম!” মনোভাব
আপনি হয়তো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলেন, কিন্তু ফল হলো উল্টো। টিমের কেউ বলল, “ভুলটা এদিকে হয়েছিল”, আর আপনি বললেন, “না, ওরা ঠিকভাবে করেনি।” এভাবে লিডার হওয়া যায় না। ভুল স্বীকার করতে জানতে হয়— কারণ, যে শেখে না, সে শিখাতে পারে না। ভুল স্বীকার করা লিডারশিপের সাহসী প্রমাণ।
৩. সবকিছু নিজের হাতে রাখার প্রবণতা – “আমি ছাড়া হয় না” ভাব
আপনি যদি মনে করেন, সব কাজ আপনাকেই করতে হবে, তাহলে আপনি লিডার না, আপনি হোয়ার্কলোডের শিকার। লিডার শিখিয়ে দেয়, কাজ ভাগ করে দেয়, বিশ্বাস তৈরি করে। দল যখন নিজের মতো এগোয়, তখনই আসল নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কাজ ছেড়ে দিন, দায়িত্ব ছাড়বেন না — এটাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
৪. নতুন কিছু শেখায় অনীহা – “আমি জানি” মানসিকতা
আপনি যদি মনে করেন, “আমার যা শেখার ছিল, সব শিখে ফেলেছি” — তাহলে আপনার লিডারশিপ এখানেই থেমে গেছে। আধুনিক যুগের সফল লিডাররা lifelong learner। আজ AI, কাল climate tech, পরশু emotional intelligence — সব সময় শিখতে হবে, শিখাতে হবে। যে শেখে, সে টিকে থাকে। যে শেখাতে শেখে, সে নেতৃত্ব দেয়।
৫. নেগেটিভিটি এবং অভিযোগের অভ্যাস – “ওরা কাজই করে না” চিন্তা
সবসময় যদি বলেন, “দলটা কাজ করতে চায় না”, “বাংলাদেশে কিছু হয় না”, “আমি ছাড়া কেউ সিরিয়াস না”— তাহলে আপনি সমস্যা দেখছেন, সমাধান দিচ্ছেন না। লিডার সমস্যা দেখে হাসে না, কাঁদে না— সমাধান খোঁজে। সে মোটিভেট করে, দলকে উদ্বুদ্ধ করে। নেতা হওয়া মানে হলো আলো ছড়ানো, অন্ধকারে তর্জন-গর্জন নয়।
৬. নিজেকে সময় না দেওয়া – “টিমের কাজ শেষ না হলে আমি বিশ্রাম নেই না”
অনেকেই ভাবেন, নিজেকে সময় দিলে লিডারশিপে ঘাটতি আসে। কিন্তু বাস্তবে, নিজের যত্ন না নিলে আপনি জ্বলে উঠবেন না— বরং একদিন হঠাৎ নিভে যাবেন। শারীরিক, মানসিক বিশ্রাম, পছন্দের কিছু করার সময় না দিলে আপনার নেতৃত্ব শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। নিজের দিকে মন না দিলে, অন্যকে পথ দেখাতে পারবেন না।
৭. নেটওয়ার্ক তৈরি না করা – “আমি আমার কাজেই ব্যস্ত থাকি” ভাবনা
বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান তরুণ আছেন, যাদের অভাব কাজের নয়— যোগাযোগের। আপনি যতই ভালো কাজ করুন না কেন, মানুষ না জানলে নেতৃত্ব ছড়িয়ে পড়ে না। সফল লিডাররা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে— সহকর্মী, মেন্টর, সহযোদ্ধা, নতুন ট্যালেন্টদের সঙ্গে। যত বেশি কানেকশন, তত বেশি প্রভাব। একা পথ চলা লিডারশিপ নয়— সেটা হলো নিঃসঙ্গতা।
অভ্যাস বদলান, নেতৃত্ব জাগান
লিডারশিপ আসে না শুধু ডিগ্রি বা অভিজ্ঞতা থেকে। আসে প্রতিদিনের চর্চা, নিজেকে গড়ার ইচ্ছা, এবং ভুলগুলো কাটিয়ে ওঠার মানসিকতা থেকে। আজ যদি আপনি এই ৭টি অভ্যাসকে বিদায় জানান, তাহলে আগামীকাল হয়তো আপনি নিজেই হবেন অন্যদের অনুপ্রেরণার নাম।