back to top
রবিবার, জুলাই ২৭, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Iconজ্যাক মা: স্কুলে ফেল, KFC-তেও রিজেক্ট—তবুও গড়লেন Alibaba’র সাম্রাজ্য

জ্যাক মা: স্কুলে ফেল, KFC-তেও রিজেক্ট—তবুও গড়লেন Alibaba’র সাম্রাজ্য

“১০ বার চাকরির জন্য আবেদন করলাম, কেউ নেয়নি। এমনকি KFC-তেও না।” এই কথাগুলো বলেছিলেন জ্যাক মা—যিনি আজ চীনের অন্যতম ধনী মানুষ, Alibaba Group-এর প্রতিষ্ঠাতা। অথচ একসময় তিনি ছিলেন একজন সাধারণ ইংরেজি শিক্ষক, যার জীবন জুড়ে ছিল ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা।

তাহলে তিনি কীভাবে পৌঁছালেন সফলতার চূড়ায়? আর, এই গল্প থেকে বাংলাদেশের তরুণরা কীভাবে অনুপ্রাণিত হতে পারে? চলুন শুরু করি একেবারে শুরু থেকে—যেখানে স্বপ্ন আছে, কিন্তু পথ অন্ধকার।

১. যাত্রার শুরু—“ফেল করা” ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার

জ্যাক মা তাঁর স্কুল লাইফে বহুবার ফেল করেছিলেন। ইউনিভার্সিটিতেও চান্স পাননি প্রথমবারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে মাত্র ১ নম্বর পেয়েছিলেন। তবুও তিনি চেষ্টা করে গেছেন।

তাঁর ভাষায়, “আমি জানতাম আমি বুদ্ধিমান না, কিন্তু আমি জানতাম আমি পরিশ্রম করতে পারি।”

বাংলাদেশে এরকম অনেক তরুণ আছেন, যারা HSC বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তারা ভেবে নেন—“আমার দিয়ে হবে না।” কিন্তু যদি জ্যাক মা হাল না ছাড়তেন, আপনি কেন ছাড়বেন?

২. চাকরির দরজায় একের পর এক না

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর, জ্যাক মা ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেন—পুলিশ, হোটেল, এমনকি KFC!

KFC-তে ২৪ জন আবেদন করেছিলেন, ২৩ জনকে নেয়া হয়—ছেঁটে ফেলা হয় শুধু জ্যাক মা-কে। এমন অপমান বারবার সহ্য করেও তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং এক সময় ঠিক করেন—“যদি কেউ আমাকে চাকরি না দেয়, আমি নিজেই কিছু বানাব।”

৩. ইন্টারনেটের সাথে প্রথম পরিচয়—বালির মধ্যে হীরার সন্ধান

১৯৯৫ সালে জ্যাক মা প্রথম আমেরিকা যান। সেখানে গিয়ে প্রথমবার ইন্টারনেট দেখেন। গুগলে গিয়ে লিখলেন “বিয়ার” (Beer)—কিন্তু চীনের কোনো তথ্যই নেই! তিনি তখনই বুঝলেন—এই ইন্টারনেটই হতে পারে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। চীন তখনো ডিজিটাল জগত থেকে অনেক দূরে। কিন্তু জ্যাক মা সেই শূন্যস্থান দেখতে পেলেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা: যেখানেই সমস্যা, সেখানেই সম্ভাবনা। যদি আপনি বাংলাদেশে কোনো জিনিসের ঘাটতি দেখেন, সেটা হতে পারে আপনার “Alibaba” তৈরি করার সুযোগ।

৪. আলিবাবার শুরু—অবিশ্বাস থেকে বিশ্বাসের দিকে

১৯৯৯ সালে জ্যাক মা ১৮ জন বন্ধুকে নিয়ে শুরু করেন “Alibaba” নামের এক অনলাইন মার্কেটপ্লেস। তাঁর বাসার ছোট্ট ঘরেই চলতো অফিস। প্রথম দিকে কেউ বিশ্বাসই করত না এই “চাইনিজ ই-কমার্স” আইডিয়ায়। অনেকে বলতেন, “ইন্টারনেটে কে কেনাকাটা করবে?”

কিন্তু জ্যাক মা বলতেন, “যারা আমার উপহাস করে, তারাই একদিন আমার সাফল্যে মুগ্ধ হবে।”

স্টার্টআপ ফাউন্ডারদের জন্য শিক্ষা: এক্সেল শিটে লাভ না দেখালেও—যদি আপনি সমস্যার মূল বুঝতে পারেন, সমাধান খুঁজে আনতে পারেন—তাহলেই ভবিষ্যতের পথ খুলে যাবে।

৫. ব্যর্থতার ফেনোমেনন—কেন জ্যাক মার গল্প আমাদের দরকার?

জ্যাক মার গল্প শুধু এক ধনী ব্যবসায়ীর গল্প নয়। বরং এটা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা হাজারো তরুণের গল্পের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশে আমরা প্রায়ই শুনি:

  • “ভর্তির পরীক্ষায় চান্স পাইনি, জীবন শেষ!”
  • “চাকরি পাচ্ছি না, হতাশ হয়ে গেছি।”
  • “বাড়ির লোকজন বলছে, কিছুই হতে পারবো না।”

জ্যাক মা-র জীবন প্রমাণ করে, “ব্যর্থতা = শেষ না”। বরং, সেটাই হতে পারে নতুন শুরুর সিঁড়ি।

৬. জ্যাক মা-র দৃষ্টিভঙ্গি—যা বদলে দিতে পারে আমাদের চিন্তা

  • “কোনো সমস্যা দেখলে ভয় না পেয়ে, সেটাকে সমাধানের সুযোগ হিসেবে দেখো”
  • “সবচেয়ে ভালো দল মানে বড় বড় ডিগ্রি নয়—যারা একসাথে কাজ করতে জানে, তারাই সেরা”
  • “অন্যরা যখন বিশ্রাম নেয়, তখন কাজ করো—তবেই তুমি আলাদা হবে”

বাংলাদেশের তরুণরা যদি এই দর্শনকে নিজের জীবনে আনতে পারে, তাহলে আমরা শুধু চাকরির খোঁজে নয়—চাকরি তৈরি করার দৌড়ে নেমে পড়তে পারি।

“জমিতে পড়ে থাকলে গাছ হয় না—উঠতে হয়, দাঁড়াতে হয়”

জ্যাক মা একবার বলেছিলেন:

“আজ কঠিন, আগামীকাল আরও কঠিন। কিন্তু পরশু দিন—পরশু দিনটা সুন্দর হবে।”

আপনার জীবনে আজ হয়তো হাজার সমস্যা। চাকরি নেই, পড়াশোনায় সমস্যা, পরিবারে চাপ।

কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে হবে না। আপনি জানেন না আপনার এই ব্যর্থতাই একদিন হাজারো মানুষের প্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, বিজনেস হয় শুধু মাথা থেকে না—পেট থেকেও উঠে আসতে হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular