back to top
বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩১, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingউপবাস করলে শুধু ওজন নয়, বদলায় আপনার মস্তিষ্কও!

উপবাস করলে শুধু ওজন নয়, বদলায় আপনার মস্তিষ্কও!

“রোজা রাখলেই মাথা ঝিমঝিম করে”—এই কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। কেউ বলেন মনোযোগ কমে যায়, কেউ বলেন কাজের এনার্জি থাকে না। কিন্তু, আপনি কি জানেন—নতুন গবেষণা বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা?

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, নিয়মিত উপবাস বা ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করলে শুধু ওজন কমে না—মস্তিষ্কেও হয় গভীর পরিবর্তন। এমনকি এটি আপনার মনোযোগ, স্মৃতি আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

আমাদের আজকের গল্প শুরু করি এক বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে।

“৩ সপ্তাহ পর আমি নিজেকে নতুন করে চিনলাম…”

ঢাকার মিরপুরের নাজমুল হোসেন, একজন আইটি প্রফেশনাল। সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করে চোখ, মাথা আর মন—সবকিছু যেন ধীরে ধীরে জ্যাম হয়ে যাচ্ছিল।

একদিন ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন—“ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং” করবেন।
প্রথম ৩ দিন খুব কঠিন গেল। কিন্তু এরপরই তিনি বুঝতে শুরু করলেন পার্থক্যটা:

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা আর ভার লাগছে না
  • মিটিংয়ে আগের চেয়ে বেশি ফোকাস করতে পারছেন
  • মুড ফ্রেশ থাকছে সারাদিন

৩ সপ্তাহ পর যখন তিনি বললেন, “আমার মস্তিষ্ক যেন আগে ঘুমিয়ে ছিল”—তখনই বোঝা গেল উপবাস যে কেবল শরীর নয়, মাথারও একটা মেডিটেশন।

কীভাবে উপবাস মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে?

আমাদের পেটে আছে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়া। এদের বলা হয় ‘গাট মাইক্রোবায়োম’। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে—

  • উপবাসের সময় কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া বেশি সক্রিয় হয়
  • তারা তৈরি করে শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড (SCFA) নামের একধরনের উপাদান
  • এই SCFA রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে গিয়ে নিউরনের (মস্তিষ্ক কোষ) কার্যকারিতা বাড়ায়
  • এর ফলে ফোকাস, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মানসিক স্থিতি ভালো হয়

Harvard University-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে “ব্রেইন ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর” (BDNF) বাড়ে—যা মস্তিষ্কে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

কীভাবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করবেন?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় ১৬:৮ পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর।

১৬:৮ পদ্ধতি মানে কী?

প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা উপবাসে থাকবেন (মানে পানি ছাড়া কিছু খাবেন না), বাকি ৮ ঘণ্টায় খাবার খাবেন।

উদাহরণ:

  • রাত ৮টায় ডিনার শেষ
  • পরের দিন দুপুর ১২টায় প্রথম খাবার
  • দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা—এটাই আপনার খাওয়ার সময়

এই সময়টায় আপনি খাবেন হালকা, স্বাস্থ্যকর খাবার—ফল, ভেজিটেবল, প্রোটিন আর প্রচুর পানি।

উপবাসে আরও কী কী উপকার?

স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়:

2015 সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উপবাস মস্তিষ্কে নিউরোনের সংযোগ বাড়ায়—যার ফলে স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা উন্নত হয়।

মন শান্ত হয়:

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস পায়। ফলে আপনার মন থাকে স্থির ও ফোকাসড।

মস্তিষ্কে ইনফ্লেমেশন কমে:

উপবাসের সময় সেলের মেরামত প্রক্রিয়া (Autophagy) সক্রিয় হয়। এতে পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ অপসারণ হয়—মস্তিষ্ক থাকে ক্লিন ও রিফ্রেশ।

ডিজিশন মেকিং ক্ষমতা বাড়ে:

ব্রেইনের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে উপবাসের প্রভাবে সক্রিয়তা বাড়ে—যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কে করবেন, কে করবেন না?

আপনার জন্য উপযোগী যদি:

  • ওজন কমাতে চান
  • ফোকাস ও মেমোরি বাড়াতে চান
  • পেটের গ্যাস্ট্রিক বা ইনফ্লেমেশন কমাতে চান
  • কাজের চাপ সামলাতে চান স্ট্রেস ছাড়া

না করা উচিত যদি:

  • আপনি ডায়াবেটিক ও ওষুধ নিচ্ছেন
  • গর্ভবতী বা ব্রেস্টফিডিং অবস্থায় আছেন
  • হরমোন বা থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা আছে

 অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন শুরু করার আগে।

কিছু বাস্তবসম্মত টিপস:

  • উপবাস ভাঙুন হালকা খাবারে: পানি, খেজুর, স্যুপ, ফল
  •  প্রথম দিকে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে ৩ দিন করুন
  • পানির পরিমাণ বাড়ান—ডিহাইড্রেশন হলে মাথা ব্যথা হতে পারে
  •  ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টও গুরুত্ব দিন
  •  উপবাস চলাকালীন ব্যায়াম কম কিন্তু সক্রিয় রাখুন—যেমন: হাঁটা, হালকা স্ট্রেচিং

উপবাস মানেই শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়

আমাদের দেশে উপবাস মানেই অনেকেই বোঝেন শুধু রমজানের রোজা। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে—নিয়মিত, বিজ্ঞানসম্মত উপবাসও হতে পারে আপনার ব্রেন হেলথের জন্য অলিখিত জাদু।

ঠিক যেমন আমরা মোবাইল রিস্টার্ট দিলে তা ভালো চলে, তেমনি উপবাস হলো আপনার শরীর-মন-মস্তিষ্কের জন্য একটা “ডিপ ক্লিন”।

আপনার দেহ যেমন খাবারে চলে, তেমনি কখন খাবেন—সেটাও ঠিক করে দেয় আপনার মস্তিষ্ক কেমন চলবে। উপবাস কোনো কষ্ট নয়, বরং হতে পারে এক নতুন অভ্যাস—যা আপনাকে আরও মনোযোগী, ফোকাসড ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular