সকাল ১০টা। ঢাকার রোকেয়া সরণিতে হেঁটে যাচ্ছেন সুমাইয়া, অফিসে পৌঁছাতে হবে সময়মতো। মাথায় রোদ, গায়ের ঘাম টপটপ করে পড়ছে, রাস্তার ধুলায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট। হঠাৎ মাথা ঘুরে গেল তাঁর—জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলেন, পানি ছিটালেন, কেউ বলল, “হিটস্ট্রোক!”
এটাই কি শুধু সুমাইয়ার গল্প? নাকি আমাদের অনেকেরই বাস্তবতা?
বাংলাদেশ এখন এক ভয়ংকর বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—অতিরিক্ত তাপদাহ, যেটা শুধু গরম নয়, জীবনঘাতীও হয়ে উঠছে। এই গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে অনেক জায়গায়, বারবার সরকার হিটওয়েভ সতর্কতা দিচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ, কৃষিকাজে বিঘ্ন, অফিসেও কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে শুধু কষ্ট না, হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা, ত্বকের জটিলতা এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। তাই প্রশ্ন জাগে—এই চরম গরমে আমরা নিজেরা এবং আমাদের পরিবারকে কীভাবে নিরাপদ রাখব?
চলুন জেনে নিই কিছু বাস্তব ও সহজ করণীয়, যা আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে এবং মনকে রাখবে ফোকাসড।
১. পানি, পানি, আরও পানি!
তাপমাত্রা বাড়লে শরীর ঘামের মাধ্যমে পানি হারায়। তাই প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস পানি পান করা বাধ্যতামূলক। শুধু পানি নয়—ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ওআরএস, ঠান্ডা ফলের রস—এসবও আপনার শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়ক।
টিপস: বাইরে বের হলে সঙ্গে ১ লিটার পানির বোতল রাখুন।
২. পোশাকে হোক সচেতনতা
গরমে কালো বা ঘন রঙের কাপড় রোদ শোষণ করে। তাই হালকা রঙের, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড় পরুন। মাথায় ছাতা বা ক্যাপ রাখুন, চোখে সানগ্লাস। বাচ্চাদের জন্যও এই নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন।
টিপস: গরমে জিন্স বা সিনথেটিক পোশাক একেবারে এড়িয়ে চলুন।
৩. দুপুর ১২টা থেকে ৪টা—রোদের সময় সাবধান!
এই সময়টা সবচেয়ে বেশি UV রশ্মি বহন করে। চেষ্টা করুন দুপুরের রোদে না বের হতে। যদি বাধ্য হন, ছাতা, সানগ্লাস এবং মুখ ঢেকে বের হোন।
টিপস: অফিস বা ক্লাসে যাওয়া লাগলেও এই সময়টায় এক্সট্রা সতর্ক হোন, সম্ভব হলে ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন।
৪. খাবারে হোক ঠান্ডা বুদ্ধি
গরমে ভাজাভুজি, অতিরিক্ত মসলা, মাংসজাত খাবার শরীরকে আরও গরম করে তোলে। বরং খান তরলসমৃদ্ধ ফল (তরমুজ, শসা, আনারস), স্যালাড, দই, লেবু, পুদিনা, দুধ বা ফলের স্মুদি।
টিপস: চা বা কফি কমিয়ে ঠান্ডা ঘরের তৈরি ঘরোয়া পানীয় খান—যেমন: বেলের শরবত বা ঘোল।
৫. ঘরের ভেতরে কৃত্রিম ঠান্ডা ছাড়াও থাকুক প্রাকৃতিক উপায়
সারাক্ষণ এসি চালালে শরীরের সঙ্গে খরচের ওপরও চাপ পড়ে। জানালা-দরজা দিয়ে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন। গাছপালা বাড়ান, ঘরে শীতল রং ব্যবহার করুন।
টিপস: ছাদে পানি ঢালা, জানালায় ভেজা পর্দা ব্যবহার করলে ঘরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়।
৬. শরীরচর্চা হ্যাঁ, কিন্তু সময় বুঝে!
গরমে শরীরচর্চা জরুরি, কিন্তু সময় ও ধরন বুঝে করতে হবে। সকাল খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় হালকা ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত কষ্টের মতো শরীরকে চাপে ফেলবেন না।
টিপস: ইয়োগা বা স্ট্রেচিং হতে পারে আদর্শ।
৭. লক্ষণ দেখলে অবহেলা নয়
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ: মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ত্বক গরম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, শ্বাস কষ্ট—এসব দেখা দিলে দ্রুত বিশ্রাম নিন, শরীরে ঠান্ডা পানি দিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যান।
টিপস: বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দিন।
সচেতন থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন
চরম আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতে হলে আমাদের শুধু শারীরিক প্রস্তুতি নয়, মানসিকভাবে সচেতনতাও দরকার। তাপদাহকে অবহেলা করবেন না। এটি একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যার জন্য সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে নিয়ম মানুন, জীবনকে ভালোবাসুন। আর সবসময় মনে রাখুন—নিজের যত্ন নেওয়াটাই সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমানের কাজ।
