কখনো কি মনে হয়েছে জীবন যেন হঠাৎ থমকে গেছে?
একটা ফোন কল, একটা খারাপ খবর, বা কোনো ব্যর্থতার আঘাত যেন বুকের ভেতর হিমেল বাতাস বইয়ে দেয়। ভয় তখন আমাদের অদৃশ্য শৃঙ্খলে বেঁধে রাখে—
“যদি আমি পারি না?”
“যদি প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলি?”
“যদি এই ব্যর্থতাই আমার জীবনের শেষ হয়ে যায়?”
এমন ভয় সবার জীবনেই আসে। কেউ তা লুকিয়ে রাখে, কেউ আবার ভেঙে পড়ে। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভয় আসলে শত্রু নয়—এটি আমাদের বাঁচার ইঙ্গিত দেয়। পার্থক্য হলো, আমরা ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করব, নাকি ভয় আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে।
ভয় কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে?
ভয় শুধু মানসিক অনুভূতি নয়, এটি শরীরের ভেতরের একধরনের অ্যালার্ম সিস্টেম। ভয় পেলে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন হয়—
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়,
- ঘাম হয়,
- মনোযোগ ছড়িয়ে পড়ে।
গবেষণা বলছে, ভয় দীর্ঘমেয়াদে আমাদের মানসিক শক্তি কমিয়ে দেয়। ব্যর্থতার ভয়ে আমরা চেষ্টা করি না, মৃত্যুভয়ে জীবন উপভোগ করতে পারি না।
ভয় জয়ের ৭টি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল
১. ভয়কে চেনা ও মেনে নেওয়া
প্রথমেই স্বীকার করুন—আপনি ভয় পাচ্ছেন। ভয়কে অস্বীকার করলে তা আরও বড় হয়ে ওঠে। বরং লিখে ফেলুন—“আমি কেন ভয় পাচ্ছি?” এটি ভয়কে স্পষ্ট করে, ছোট করে দেয়।
২. গভীর শ্বাস ও মেডিটেশন
প্রতিদিন ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন। ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া মস্তিষ্ককে শান্ত করে, কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমায়।
৩. ভয়ের বদলে ফোকাস বদলান
ভয় পাওয়ার সময় মস্তিষ্ক কেবল নেতিবাচক চিন্তায় আটকে যায়। বরং ভাবুন, “আমি যদি চেষ্টা করি, কী হতে পারে?” আপনার মনকে সম্ভাবনার দিকে ঘুরিয়ে নিন।
৪. ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ নিন
ব্যর্থতার ভয় জিততে চাইলে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন। যেমন—সবার সামনে কথা বলতে ভয় পেলে ছোট ২-৩ জনের সামনে প্র্যাকটিস করুন।
৫. ইতিবাচক সেলফ-টক
নিজেকে বলুন—
- “আমি পারবো।”
- “ভয়টা শুধু আমার মাথায়।”
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নিজেকে ইতিবাচক বাক্য বলা মস্তিষ্কে শক্তি জাগায়।
৬. ভয়কে জ্ঞান দিয়ে মোকাবিলা করুন
মৃত্যু বা ব্যর্থতার ভয় অনেক সময় ভুল ধারণা থেকে আসে। ভয়কে নিয়ে বই পড়ুন, শিখুন—জ্ঞান ভয় কমায়।
৭. প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন
যদি ভয় ও উদ্বেগ বেশি হয়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন। পেশাদার গাইডলাইন অনেক সময় অন্ধকার থেকে আলো দেখায়।
বাস্তব উদাহরণ: সায়মনের গল্প
মিরপুরের সায়মন একসময় ব্যর্থতার ভয়ে চাকরির ইন্টারভিউতে যেতেই ভয় পেত। প্রতিবার হতাশ হতো। একসময় সে নিজের ভয় লিখে ফেলতে শুরু করল—“কোন প্রশ্নে ভয় পাই, কেন ভয় পাই।”
এক মাসের মধ্যে সে দেখল, ভয়টা তার মাথাতেই ছিল। পরের ইন্টারভিউতেই সে সিলেক্টেড হলো।
ভয়কে বন্ধু বানান
ভয়কে আমরা সবসময় শত্রু মনে করি। কিন্তু ভয় আসলে সংকেত দেয়—“এখানে কিছু পরিবর্তন দরকার।”
মৃত্যুভয় আমাদের জীবনকে মূল্য দিতে শেখায়। ব্যর্থতার ভয় আমাদের প্রস্তুত হতে শেখায়।
মনে রাখবেন—
ভয় মানেই থেমে যাওয়া নয়, ভয় মানে সচেতন হয়ে এগিয়ে যাওয়া।
আপনার জীবনের প্রতিটি ভয়কে ছোট ছোট চ্যালেঞ্জে ভেঙে ফেলুন। প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিন—
- “আজ আমি ভয়কে জয় করব।”
- “আমার জীবন আমার নিয়ন্ত্রণে।”
একদিন দেখবেন, যে ভয় আপনাকে থামিয়ে দিত, সেই ভয়ই আপনাকে শক্তি দিয়েছে। কারণ, আসল জয় হলো নিজের ভেতরের ভয়কে হারানো।