গরমে রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন: কোনটি বেছে নেবেন, কেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন
“এই রোদে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবলেই গা জ্বলে যায়!” — এমনটা অনেকেই বলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে রোদের তীব্রতা যেমন হয়, তাতে শুধু ছাতা দিয়ে বাঁচা যায় না। ত্বক পুড়ে যায়, দাগ পড়ে, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। কিন্তু সমাধানও আছে — সানস্ক্রিন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সানস্ক্রিনের এত রকম, কোনটা নেবো? SPF মানে কী? লোশন ভালো, নাকি স্প্রে? আর এসব পণ্যের ভেতরে ক্ষতিকর কিছু উপাদান লুকিয়ে আছে না তো? চলুন, একসাথে সব পরিষ্কার করে নেই।
SPF: এই সংখ্যাগুলোর মানে কী?
SPF বা Sun Protection Factor হলো এমন একটি সংখ্যা যা বলে দেয় আপনি কতটা UVB রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। UVB রশ্মিই আপনার ত্বকে সানবার্ন, কালো দাগ এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- SPF 30: প্রায় ৯৭% UVB রশ্মি ব্লক করে
- SPF 50: প্রায় ৯৮%
- SPF 100: প্রায় ৯৯%
এই সংখ্যার পার্থক্য খুব বেশি না হলেও, যারা রোদে বেশি সময় থাকেন বা যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা SPF 50 বা তার ওপরে বেছে নিতে পারেন। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য SPF 30-ই যথেষ্ট, তবে নিয়মিত পুনঃপ্রয়োগ জরুরি।
দুই ধরনের সানস্ক্রিন: কেমিক্যাল বনাম মিনারেল
সানস্ক্রিন মূলত দু’ধরনের হয়:
কেমিক্যাল সানস্ক্রিন
- UV রশ্মিকে শোষণ করে, পরে তা তাপে পরিণত করে নিরপদভাবে মুক্ত করে।
- পাতলা টেক্সচারের কারণে সহজে ত্বকে মিশে যায়।
- অনেকের জন্য জ্বালাপোড়ার অনুভূতি দিতে পারে।
মিনারেল সানস্ক্রিন
- জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড দিয়ে তৈরি।
- UV রশ্মিকে ত্বকে ঢুকতেই দেয় না, সরাসরি রিফ্লেক্ট করে দেয়।
- সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আদর্শ (যেমন একজিমা বা রোসাসিয়া থাকলে)।
- একটু সাদা ভাব রেখে যেতে পারে, বিশেষত গা dark complexion হলে।
বাংলাদেশের উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ায় যাদের ত্বকে ঘাম বেশি হয়, তারা gel-based mineral sunscreen খুঁজে দেখতে পারেন।
ব্রড-স্পেকট্রাম: শুধু UVB নয়, UVA-ও রক্ষা দরকার
অনেকেই জানেন না, সূর্যের UVA রশ্মিও ত্বকের জন্য ভয়ংকর — এটি বয়সের ছাপ, রিঙ্কল এবং ডার্ক স্পটের জন্য দায়ী। তাই Broad Spectrum লেখা আছে এমন সানস্ক্রিনই বেছে নিন, যেটি UVB ও UVA দুই ধরনের রশ্মি থেকেই রক্ষা করে।
ওয়াটার-রেসিস্ট্যান্ট সানস্ক্রিন: সাঁতার বা ঘাম ঝরানোর সময়
আপনি যদি সাঁতার কাটেন বা বাইরের খেলাধুলায় সময় দেন, তাহলে Water-resistant সানস্ক্রিন দরকার। তবে মনে রাখবেন — waterproof মানেই সারাদিন চলবে না। প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর আবার সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
স্প্রে বনাম লোশন: কোনটা বেশি নিরাপদ?
অনেকেই আজকাল স্প্রে সানস্ক্রিন পছন্দ করেন কারণ এটি সহজে লাগানো যায়। কিন্তু সমস্যা হলো:
- বাতাসে ওড়ে গিয়ে ত্বকে ঠিকঠাক লাগে না
- নাকে-মুখে ঢুকে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে
- কিছু স্প্রে প্রোডাক্টে benzene নামক ক্ষতিকর ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী কেমিক্যাল পাওয়া গেছে
তাই লিকুইড বা লোশন-ভিত্তিক সানস্ক্রিনই নিরাপদ ও কার্যকর।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের নিয়ম:
১. বাইরে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
২. মুখ, ঘাড়, হাত-পা, কানের পেছনে — সব উন্মুক্ত জায়গায় দিন
৩. প্রতি ২ ঘণ্টা পর আবার লাগান (ঘামলে বা ধুলে অবশ্যই)
৪. শিশুরা ও বয়স্কদের জন্য আলাদা, মাইল্ড সানস্ক্রিন বেছে নিন
৫. মেকআপের নিচেও সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন (ম্যাট ফিনিশ চাইলে গেল বা ফ্লুইড টাইপ বেছে নিন)
অতিরিক্ত সুরক্ষা কীভাবে পাবেন?
সানস্ক্রিনের সঙ্গে নিচের অভ্যাসগুলো আপনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেবে:
- সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদে কম বের হওয়া
- হ্যাট, সানগ্লাস ও ফুলহাতা জামা পরা
- ছাতা ব্যবহার
- ছায়ায় দাঁড়ানো চেষ্টা করা
- গরমকালে বেশি করে পানি পান করা
বাংলাদেশে ভালো কিছু সানস্ক্রিন ব্র্যান্ড (রেফারেন্স হিসেবে)
- La Roche-Posay Anthelios SPF 50 (sensitive skin)
- Neutrogena Ultra Sheer SPF 50
- Bioderma Photoderm
- ISDIN Fusion Water SPF 50
- Anessa Perfect UV Sunscreen (Shiseido)
- Minimalist Sunscreen (India-based, budget-friendly)
সানস্ক্রিন কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয়তা — যেমনটা আমরা ব্রাশ করি, সাবান দিয়ে মুখ ধুই। রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বক রক্ষা করতে চাইলে সঠিক SPF, সঠিক ফর্মুলা এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করাটা জরুরি।
আজ থেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার শুরু করুন, কারণ আপনার ত্বক তার সুরক্ষার জন্য আপনার যত্নের অপেক্ষায়।