“ছেলেটা এত ফিট ছিল, হঠাৎ জিমে হার্ট অ্যাটাক হলো—বিশ্বাসই হয় না!” এমন খবর এখন প্রায়ই দেখা যায়। অনেকেই ভাবেন, জিমে গেলে তো ফিট থাকার কথা, তাহলে হার্ট অ্যাটাক কেন?
বাস্তবতা হলো—জিম মানে শুধু পেশি বানানো নয়, বরং সঠিক নিয়ম না মেনে করলে তা শরীরের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। বিশেষ করে হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ দিলে, না জেনে ভারী ওয়ার্কআউট করলে, বা পূর্ববর্তী সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
কোন ভুলগুলো করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে?
১. অতিরিক্ত ওজন তোলা (Overexertion)
অনেকেই মনে করেন, যত বেশি ভার তুলবেন, তত বেশি মাংসপেশি বাড়বে।
কিন্তু শরীরের সক্ষমতার বাইরে গিয়ে এক্সারসাইজ করলে হার্ট অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে।
- উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হয়
- অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়
- হার্টবিট অস্বাভাবিক হয়ে যায়
এমন অবস্থায় যদি আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে, তাহলে হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে।
২. শরীর না গরম করেই শুরু করা (Skipping Warm-Up)
জিমে ঢুকেই ভারি সেটে ঝাঁপিয়ে পড়া বিপজ্জনক।
ওয়ার্ম আপ না করলে হার্ট, পেশি, ও রক্তনালির জন্য হঠাৎ চাপ তৈরি হয়।
- রক্তপ্রবাহ ঠিকভাবে তৈরি না হলে হঠাৎ ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়
- হার্টের ছন্দ ও লোড ব্যালেন্স হারিয়ে যায়
- অন্তত ১০ মিনিট হালকা কার্ডিও বা স্ট্রেচিং দিয়ে শরীর প্রস্তুত করা উচিত।
৩. খালি পেটে ওয়ার্কআউট
অনেকে মনে করেন—“খালি পেটে ব্যায়াম করলে দ্রুত ফ্যাট কমে।” কিন্তু এটা হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- খালি পেটে গ্লুকোজ লেভেল কমে যায়
- হার্টে পর্যাপ্ত শক্তি না পৌঁছালে স্নায়ু ও পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে
- অতিরিক্ত স্ট্রেনে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
হালকা কিছু খেয়ে (যেমন কলা, ওটস বা বাদাম) জিমে যাওয়া নিরাপদ।
৪. পূর্বের হৃদরোগ উপেক্ষা করা
- অনেকেই জানেন না যে, তাদের হাই ব্লাড প্রেসার, উচ্চ কোলেস্টেরল, বা ফ্যামিলি হিস্টরিতে হার্ট প্রবলেম রয়েছে।
- এমন ব্যক্তিদের জন্য ভারী ব্যায়াম চরম বিপদজনক।কিছুক্ষেত্রে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব না করলেও ভেতরে হার্ট ড্যামেজ হতে থাকে
- স্ট্রেন ইনডিউসড কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে
- আগে থেকেই হার্ট চেকআপ করা, ECG বা ECHO করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
৫. হঠাৎ হাই ইন্টেন্সিটি ট্রেনিং শুরু করা
HIIT বা হাই ইন্টেন্সিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং বর্তমানে খুব জনপ্রিয়।
কিন্তু যারা নতুন জিম শুরু করেছেন বা ৪০-এর উপরে, তাদের জন্য এটা রিস্কি।
- হঠাৎ হৃদযন্ত্রের উপরে চাপ বাড়ে
- শরীর ঠিকমতো অক্সিজেন নিতে পারে না
- রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা থাকলে, তা খুলে ব্লক তৈরি করে
ধীরে ধীরে ট্রেনিং বাড়াতে হবে। প্রথমে লো ইন্টেন্সিটি থেকে শুরু করুন।
জিমে হার্ট সুস্থ রাখতে কী কী নিয়ম মানা উচিত?
১. প্রি-চেকআপ করান
- জিম শুরু করার আগে ডাক্তারের কাছে যান।
- রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, ECG—এসব চেক করে নিন।
- ৪০-এর ওপরে হলে ট্রেডমিল টেস্ট বা ETT করিয়ে নেওয়া ভালো।
২. ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন বাধ্যতামূলক
- জিমে ঢোকার আগে ১০ মিনিট হাঁটা বা সাইক্লিং করুন।
- শেষে ধীরে ধীরে হার্টরেট নরমাল করার জন্য কুল ডাউন এক্সারসাইজ করুন।
৩. নিয়মিত পানি পান করুন
ডিহাইড্রেশন হার্টের জন্য খারাপ।
- প্রতিবার এক্সারসাইজের আগে, মাঝে ও পরে পানি পান করুন
- পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট থাকলে আরও ভালো
৪. শরীরের সিগনাল শুনুন
- বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট—এসব হলে ওয়ার্কআউট বন্ধ করুন
- “No Pain No Gain” সবসময় ঠিক নয়—বিশেষ করে যখন ব্যথা মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক
৫. প্রফেশনাল ট্রেইনারের তত্ত্বাবধানে থাকুন
- নিজের ইচ্ছেমতো ইউটিউব দেখে ওয়ার্কআউট করলে ভুল হতে পারে।
- প্রথম কয়েক মাস অন্তত ট্রেইনারের সঙ্গে থেকে এক্সারসাইজের টেকনিক শিখুন।
বাংলাদেশি জিম ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন,
“আমি নিজেই শুরুতে বেশি রেপস দিতাম, ফাস্ট রেজাল্টের আশায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন গলা টাইট হয়ে আসে, ঘাম, বুক ব্যথা—ডাক্তার বললেন হালকা হার্ট স্ট্রেস হয়েছে। এখন বুঝি, স্লো স্টার্টই বেস্ট।”
ফিটনেস হোক নিরাপদ
জিম মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়—আন্তরিকভাবে সুস্থ থাকা।
হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে নিরাপদে রাখতে হলে জিমের নিয়ম মানতে হবে।
আপনি কী করবেন?
- জিমে যাওয়ার আগে হার্ট চেক করাবেন
- গাইডলাইন অনুযায়ী এক্সারসাইজ করবেন
- নিজের শরীরের সীমা বুঝে চলবেন
কারণ ফিট থাকা মানে শুধু মাংসপেশি বানানো নয়, বরং হৃদয়ের যত্ন নেওয়া।