back to top
বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৪, ২০২৫
HomeProductivityCareer Developmentআমি তো দিনরাত খাটি, কিন্তু তারপরও কেন উন্নতি করতে পারছি না?

আমি তো দিনরাত খাটি, কিন্তু তারপরও কেন উন্নতি করতে পারছি না?

এমন আফসোস আমরা অনেকের মুখেই শুনি।

একজন রিকশাচালক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেটে চলেছেন। আবার একই শহরে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারও কঠোর পরিশ্রম করছেন।

তবে দু’জনের পরিশ্রমের ফসল এক নয়। কেন?

কারণ পরিশ্রমের পাশাপাশি ‘শেখার মনোভাব’ (Growth Mindset) না থাকলে সফলতা শুধু কঠিনই নয়—অনেক সময় অসম্ভব।

এই লেখায় জানব—

  • পরিশ্রম আর শেখার মধ্যে সম্পর্ক কী
  • কেন শুধু পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়
  • কীভাবে শেখার মানসিকতা আপনাকে এগিয়ে নেবে

১. পরিশ্রমের ভুল ব্যাখ্যা

আমাদের সমাজে একটা বিশ্বাস অনেক গভীর:

“যে বেশি খাটে, সেই বেশি পায়।”

কিন্তু বাস্তবতা হলো—পরিশ্রমের মান ও দিক ঠিক না হলে, আপনি শুধু একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছেন।

উদাহরণ:

হোসেন ভাই প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা দোকান চালান। একই পদ্ধতিতে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। কিন্তু এখনো দোকানের আয় খুব কম।

অন্যদিকে, জামান ভাই একই ব্যবসায় অনলাইনে অর্ডার নেওয়া শুরু করেছেন, পণ্য হোম ডেলিভারি দিচ্ছেন, কাস্টমার রিভিউ নিচ্ছেন।

তিনি দিনশেষে কম সময় কাজ করেও বেশি আয় করছেন।

কারণ জামান ভাই শেখার মানসিকতা লালন করেছেন।

২. শেখার মানসিকতা কী?

Growth Mindset হলো সেই মনোভাব, যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে—

  • আমার দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব
  • আমি যা পারি না, তা শেখা যায়
  • ব্যর্থতা মানে শেখার সুযোগ

এই মানসিকতা আপনার মধ্যে থাকলে আপনি প্রতিদিন উন্নত হবেন।

আর যারা মনে করে “আমি তো এমনই, বদলানো সম্ভব না”—তারা পিছিয়ে পড়ে।

৩. শুধু খাটুনে হলে হয় না—বুদ্ধিদীপ্ত খাটুনি লাগে

একটি জনপ্রিয় কথা আছে:

“Don’t work harder, work smarter.”

আপনি যদি সারাদিন সময় ও শ্রম ঢালেন, কিন্তু বুঝেন না কীভাবে কাজটি আরও দক্ষভাবে করা যায়—তাহলে সেই পরিশ্রম দীর্ঘমেয়াদে ফল দেবে না।

উদাহরণ:

একজন শিক্ষার্থী যদি শুধু গাইড বই মুখস্থ করে, কিন্তু প্রশ্নের ধরন বোঝে না—তাহলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া কঠিন।

কিন্তু যে বুঝে পড়ে, প্র‍্যাকটিস করে, আগের বছরের প্রশ্ন দেখে—সে কম সময়েই সফল হয়।

৪. শেখার মনোভাব কীভাবে গড়ে তুলবেন?

১. ভুলকে ভয় পাবেন না

শেখার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভুল করা। ভুল করলে “আমি ব্যর্থ” না বলে ভাবুন—“এটা থেকে আমি কী শিখলাম?”

২. প্রতিদিন ২০ মিনিট ‘নতুন কিছু’ শিখুন

যেমন:

  • YouTube দেখে Excel শিখুন
  • LinkedIn Learning বা Coursera থেকে স্কিল ডেভেলপ করুন
  • কারও সফলতা শুনে নিজেকে প্রশ্ন করুন—“আমি কীভাবে এটা করতে পারি?”

৩. নিজের ভুলগুলোর ডায়েরি করুন

যে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়, সেগুলো লিখে রাখলে আপনি সেগুলো বারবার করবেন না।

৪. নতুন পরিবেশে নিজেকে ফেলে দিন

নিজেকে এমন জায়গায় নিন যেখানে আপনি সবার মতো জানেন না। নতুন কিছু শেখার জন্য পরিবেশ তৈরি করুন।

৫. বাংলাদেশি উদাহরণ: শেখার মনোভাব কীভাবে সফলতা আনে

শারমিন আকতার, গ্রামের মেয়ে। ইন্টারনেট কেবল মোবাইলেই ব্যবহার করতেন। তারপর YouTube দেখে কন্টেন্ট তৈরি শেখেন, Canva শিখে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন।

আজ তিনি ফেসবুক পেজে ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস দেন—নিজে উপার্জন করেন, অন্য মেয়েকেও শেখান।

→ শুধুমাত্র কষ্ট করলে হতো না, শেখার জেদ ছিল বলেই সফল হয়েছেন।

৬. কর্মক্ষেত্রে শেখার মনোভাব থাকলে কী সুবিধা হয়?

  • আপনি নতুন সমস্যার সমাধান বের করতে পারেন
  • সিনিয়রদের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করেন না
  • নিজের কাজের পাশাপাশি নতুন স্কিল যোগ করেন
  • চাকরি বদল করলেও শিখে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন
  • আপনি প্রোমোশন বা বেতন বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকেন

৭. আপনার সফলতা নির্ভর করে—আপনি কতটা শেখেন

একজন কৃষক যদি আধুনিক কৃষি পদ্ধতি না শেখে, তার উৎপাদন বাড়বে না।

একজন শিক্ষার্থী যদি শুধু রুটিন ফলো করে, কিন্তু বুঝে না কেন পড়ছে—সে বড় কিছু করতে পারবে না।

একজন উদ্যোক্তা যদি বাজার বিশ্লেষণ না জানে, তাহলে তার ব্যবসা টিকবে না।

শুধু খাটা নয়, শেখার আগ্রহই আপনাকে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

আপনি যদি প্রতিদিন ১টা নতুন জিনিস শিখেন, ১ বছর পর আপনি হবেন আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।

তাই আজ থেকেই প্রশ্ন করুন নিজেকে:

“আমি শুধু খাটছি, না শেখার জন্যও সময় দিচ্ছি?”

পরিশ্রমে ঘাম ঝরান, কিন্তু শেখায় নিজের দিগন্ত খুলে দিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular