back to top
সোমবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫
HomeLifestyleLifestyle Tipsগবেষণা বলছে: নিয়মিত কফি পানেই মস্তিষ্ক থাকবে তরুণ ও সক্রিয়

গবেষণা বলছে: নিয়মিত কফি পানেই মস্তিষ্ক থাকবে তরুণ ও সক্রিয়

সকাল শুরু হয় অনেকের জন্য এক কাপ গরম কফি দিয়ে। ঘুম চোখ মেলে প্রথম চুমুকেই যেন মস্তিষ্ক জেগে ওঠে। কিন্তু যদি বলি, এই ছোট্ট অভ্যাসটাই হয়তো আপনার মস্তিষ্ককে ৭ বছর তরুণ রাখতে সাহায্য করছে? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন! সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পান করা শুধু মন সতেজ রাখে না, বরং মস্তিষ্কের বয়সও কমিয়ে আনতে পারে। কিভাবে? চলুন, আজ জানি কফির এই চমকপ্রদ রহস্য।

গবেষণা কী বলছে?

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণা বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছে। এতে দেখা গেছে:

  • যারা দিনে ৫ কাপ বা তার বেশি কফি পান করেছেন, তাদের মনোযোগ, রিয়্যাকশন টাইম, ও কো-অর্ডিনেশন ছিল অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো।
  • মস্তিষ্কের স্ক্যান রিপোর্টে দেখা গেছে, তাদের কগনিটিভ মার্কার বা মানসিক সক্ষমতা ছিল গড়ে ৬.৭ বছর কম বয়সের সমতুল্য।
  • এই প্রভাব বয়স, লিঙ্গ বা ধূমপানের অভ্যাসের মতো বিষয়কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, কফির কিছু যৌগ মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা নিউরনকে দীর্ঘ সময় সুরক্ষিত রাখে।

একই সঙ্গে, আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের সমস্যার ঝুঁকি কমাতে কফি ভূমিকা রাখতে পারে বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা।

কফি কীভাবে কাজ করে?

বাংলাদেশে আমরা কফিকে দেখি মূলত জাগিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে আছে কিছু অসাধারণ উপাদান:

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কফির ভেতরে থাকা পলিফেনল ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় এবং কোষকে সুরক্ষা দেয়।
  • স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করা: কফেইন সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যার ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
  • রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা: কফি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।
  • হরমোন নিয়ন্ত্রণ: কর্টিসল ও ডোপামিনের মতো হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা মুড ভালো রাখতে সহায়ক।

তাহলে দিনে কতটা কফি?

এখন প্রশ্ন আসে—দিনে কতটা কফি নিরাপদ?

  • গবেষণায় ৫ কাপের কথা বলা হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২-৪ কাপ কফি হল সবচেয়ে সঠিক মাত্রা।
  • বেশি কফি খেলে ঘুমের সমস্যা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা উদ্বেগ বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
  • যদি গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভাবস্থার মতো স্বাস্থ্য অবস্থা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কফি পান করা উচিত।

সকালের কফি আরও স্বাস্থ্যকর করার কিছু টিপস:

  • চিনি ও অতিরিক্ত ক্রীম এড়িয়ে চলুন।
  • ভালো মানের কফি বিন বা গ্রাউন্ড কফি ব্যবহার করুন।
  • দুপুর বা সন্ধ্যার পর কফি পান কমান, যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।
  • কফির সঙ্গে পানি পান করার অভ্যাস রাখুন।

কফি শুধু আপনাকে জাগিয়ে রাখে না; এটি মস্তিষ্কের জন্য হতে পারে এক আশ্চর্য সহায়ক। দিনে নিয়মিত কয়েক কাপ কফি, বিশেষ করে মানসিক চাপের সময়ে, আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে তরুণ রাখতে সাহায্য করতে পারে। অবশ্যই মনে রাখবেন, কফি কোনো ম্যাজিক নয়—এটি এক স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের অংশ। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে কফি হলে তবেই আপনি পাবেন এর পুরো সুফল।

সকালের ব্যস্ততা, ট্রাফিক, ক্লাস বা মিটিং—সবকিছুর মাঝেও এক কাপ কফি হাতে নিয়ে একটু থামুন। জানালার বাইরে তাকিয়ে সেই প্রথম চুমুক নিন। মনে রাখুন—এটা শুধু ঘুম কাটানোর জন্য নয়; প্রতিদিনের এই ছোট্ট অভ্যাসই হয়তো আপনার মস্তিষ্ককে ৭ বছরের তরুণ রাখছে, মনকে তাজা করছে, আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথে আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে দিচ্ছে।

জীবন বড় পরিবর্তনে নয়, ছোট ছোট অভ্যাসেই বদলে যায়। আর কে জানে, আপনার সকালের কফিই হয়তো সেই অভ্যাস—যা আপনাকে আরও তীক্ষ্ণ, আরও উজ্জ্বল করে তুলবে আগামী দিনের জন্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular