সকালে উঠতেই অফিসের কথা মনে হলে মন খারাপ হয়ে যায়? Inbox খুলতেই anxiety শুরু? কাজে concentration নেই, সবকিছু overwhelming লাগে? আপনি একা নন। Gallup-এর গবেষণা বলছে বিশ্বব্যাপী ৩৭% employees—মানে প্রতি তিনজনে একজন—high burnout experience করছেন।
কিন্তু সুখবর? Burnout preventable। এবং সবচেয়ে ভালো কথা—productivity sacrifice না করেই এটা এড়ানো সম্ভব। চলুন জানি কীভাবে।
‘বার্নআউট’ আসলে কী? শুধু ক্লান্ত হওয়া নয়
‘বার্নআউট’ মানে শুধু এক দিনের ক্লান্তি বা কাজের প্রতি অনীহা নয়। এটি হলো দীর্ঘমেয়াদী মানসিক, শারীরিক এবং আবেগিক অবসাদের একটি চূড়ান্ত অবস্থা। যখন আপনি একটানা কাজের চাপে থাকেন এবং নিজেকে রিচার্জ করার কোনো সুযোগ দেন না, তখন একসময় আপনার ভেতরের সমস্ত শক্তি ও আগ্রহ ফুরিয়ে যায়।
এর প্রধান তিনটি লক্ষণ হলো:
১. চরম ক্লান্তি:ঘুম থেকেও উঠেও নিজেকে ক্লান্ত লাগা।
২. কাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা: যে কাজ একসময় ভালোবাসতেন, সেটাই এখন বিরক্তিকর বা অর্থহীন লাগা।
৩. অপারদর্শিতা: নিজের দক্ষতার ওপরই বিশ্বাস কমে যাওয়া, মনে হওয়া যে আপনি কিছুই ঠিকভাবে করতে পারছেন না।
এই বার্নআউট আপনার প্রোডাক্টিভিটিকে স্রেফ কমিয়ে দেয় না, একে ধ্বংস করে দেয়। তাই একে এড়ানোটা বিলাসিতা নয়, এটা জরুরি।
প্রোডাক্টিভিটি না কমিয়ে বার্নআউট এড়ানোর স্মার্ট কৌশল
মূলমন্ত্রটি হলো:“বেশি ঘণ্টা কাজ নয়, বরং কাজের সময়টুকুতে বেশি ফোকাসড থাকা।”
১. ‘ব্যস্ত’ থাকা আর ‘প্রোডাক্টিভ’ থাকার তফাৎ বুঝুন
আমরা অনেকেই এই দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলি। সারাদিন ৩০টা ইমেইলের উত্তর দেওয়া, ৫টা মিটিং করা আর ১০০টা ছোট ছোট কাজ করা মানে হলো ‘ব্যস্ত’ থাকা। অন্যদিকে, ‘প্রোডাক্টিভ’ থাকা মানে হলো সেই ২-৩টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করা, যা আপনার লক্ষ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।
করণীয়: দিন শুরু করুন ‘মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট টাস্ক’ (MIT) বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ঠিক করে। আপনার সেরা এনার্জিটুকু সেই কাজগুলোতেই দিন। বাকি সব কাজ এরপর। দেখবেন, দিনের শেষে এক ধরনের গভীর সন্তুষ্টি কাজ করবে।
২. ম্যারাথন নয়, ‘স্প্রিন্টে’ কাজ করুন (পোমোডোরো টেকনিক)
আমরা ভাবি, একটানা ৩-৪ ঘণ্টা কাজ করলেই বুঝি বেশি কাজ হয়। এটি মস্ত বড় ভুল। আমাদের মস্তিষ্ক একটানা এতক্ষণ ফোকাস ধরে রাখতে পারে না।
করণীয় (পোমোডোরো টেকনিক):
- ২৫ মিনিট টাইমার সেট করে সব মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করুন।
- এরপর ৫ মিনিটের একটি ছোট্ট বিরতি নিন। এই ৫ মিনিট ফোন নয়, বরং একটু হাঁটুন, চোখে পানি দিন বা শুধু চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন।
- এভাবে ৪টি ‘স্প্রিন্ট’ শেষ করার পর ১৫-২০ মিনিটের একটি বড় বিরতি নিন।
কেন এটা কাজ করে: এই ছোট বিরতিগুলো আপনার মস্তিষ্ককে রিচার্জ করে এবং তথ্যগুলো গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে। ফলে আপনি যখন আবার কাজে বসেন, তখন পূর্ণ ফোকাস নিয়েই বসতে পারেন।
৩. ‘না’ বলতে শিখুন (অপরাধবোধ ছাড়াই)
বার্নআউটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজের ক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ কাঁধে নেওয়া। আমরা প্রায়ই সহকর্মী বা বসকে খুশি করার জন্য এমন সব কাজে ‘হ্যাঁ’ বলে ফেলি, যা আমাদের মূল কাজের অংশ নয় বা আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
করণীয়: বিনয়ের সাথে ‘না’ বলতে শিখুন। এটা অভদ্রতা নয়, এটা আপনার সময়ের প্রতি সম্মান দেখানো।
- উদাহরণ: “আমি এই মুহূর্তে একটি জরুরি ডেডলাইনে কাজ করছি। আমি কি এটা শেষ করে আপনার কাজটি দেখতে পারি?” অথবা, “আমার হাতে এখন দুটি প্রজেক্ট আছে। আমি যদি এই নতুন কাজটি নিই, তবে অন্য দুটির কোয়ালিটি ঠিক রাখা কঠিন হবে। কোনটি আমার প্রায়োরিটি হওয়া উচিত?”
৪. ‘গভীর কাজ’ (Deep Work) বনাম ‘ছড়িয়ে থাকা কাজ’ (Shallow Work)
৩ ঘণ্টা ধরে নোটিফিকেশনের শব্দ আর মানুষের কথার মধ্যে বসে কাজ করার চেয়ে, ১ ঘণ্টা সব মনোযোগ দিয়ে কাজ করা অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ। একেই বলে ‘ডিপ ওয়ার্ক’ (Deep Work)।
‘ছড়িয়ে থাকা কাজ’ হলো সেগুলো, যা করতে খুব বেশি মনোযোগ লাগে না (যেমন – সাধারণ ইমেইল চেক, মিটিং)।
করণীয়: দিনের মধ্যে অন্তত ৯০ মিনিটের একটি স্লট আলাদা করুন। এই সময়ে মোবাইল সাইলেন্ট করুন, ইমেইল বা মেসেঞ্জারের ট্যাব বন্ধ রাখুন। শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ডুবে যান। এই এক ঘণ্টার কাজ আপনার সারাদিনের ছোট ছোট কাজের চেয়ে বেশি ফল দেবে।
৫. কাজের একটি শক্ত “সীমানা” তৈরি করুন
আধুনিক যুগে, বিশেষ করে যারা বাসা থেকে কাজ করেন (Work From Home), তাদের জন্য কাজ আর ব্যক্তিগত জীবন প্রায়ই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রাত ১১টায় ইমেইল চেক করা বা ছুটির দিনে ল্যাপটপ নিয়ে বসা—এগুলোই বার্নআউটের দিকে ঠেলে দেয়।
করণীয়: কাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করুন।
- অফিস আওয়ার শেষ মানে কাজ শেষ: ধরুন, আপনার কাজের সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৬টার পর ল্যাপটপ বন্ধ মানে, কাজ আসলেই বন্ধ। অফিসের নোটিফিকেশন মিউট করে দিন।
- “সুইচ অফ” রুটিন: কাজ শেষ করে এমন কিছু করুন যা আপনার মস্তিষ্ককে “রিল্যাক্স মোডে” যেতে সাহায্য করে। যেমন: বই পড়া, গান শোনা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো বা হালকা ব্যায়াম করা।
প্রোডাক্টিভিটির আসল জ্বালানি ভুলবেন না
একটি রেসিং কার খুব দ্রুত চলে, কিন্তু জ্বালানি ছাড়া সেটা অচল। আপনার প্রোডাক্টিভিটির জ্বালানি হলো আপনার স্বাস্থ্য।
- ঘুম: বার্নআউট এড়ানোর সেরা ওষুধ হলো ঘুম। ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে পরের দিনের চাপের জন্য প্রস্তুত করে।
- ছোট বিরতি: কাজের ফাঁকে ৫ মিনিটের জন্য হলেও ডেস্ক থেকে উঠুন।
- শখ: কাজের বাইরেও একটি জীবন রাখুন। যে কাজগুলো আপনার ভালো লাগে (গান, খেলা, আঁকাআঁকি) সেগুলোর জন্য সময় বের করুন।
মনে রাখবেন, প্রোডাক্টিভিটি মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা নয়; প্রোডাক্টিভিটি মানে হলো নির্দিষ্ট সময়ে সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজ করা।
আপনি কোনো মেশিন নন। আপনার বিশ্রাম, আপনার ঘুম এবং আপনার মানসিক শান্তি—এগুলো আপনার প্রোডাক্টিভিটির শত্রু নয়, বরং এগুলোই হলো উচ্চ প্রোডাক্টিভিটির আসল চাবিকাঠি।
কাজের চাপকে ম্যানেজ করুন, কিন্তু বার্নআউটকে কখনো আপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে দেবেন না। স্মার্টলি কাজ করুন, নিজের যত্ন নিন এবং সফল হোন!