রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে জেগে থাকে। এক হাতে ফোন, অন্য হাতে নোটবুক। ইউটিউব থেকে শেখে ডিজাইন, ফ্রি সফটওয়্যার ঘেঁটে শেখে ভিডিও এডিটিং। কেউ জানতো না—একজন ‘অচেনা ছেলে’ একদিন দেশের লাখো তরুণকে শেখাবে কীভাবে নিজেই নিজের সুযোগ তৈরি করতে হয়।
তার নাম আদিত্য খান।
ঢাকার মিরপুরে ভাড়া বাসায় থেকে শুরু করা এই তরুণ এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের মালিক, একাধিক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার।
এই লেখায় আমরা জানবো কীভাবে আদিত্য নিজের জিরো থেকে হিরো হওয়ার জার্নি তৈরি করলো, আর এখান থেকে আপনি কী শিখতে পারেন।
“তুমি তো কেবল ভিডিও বানাও—এতে ভবিষ্যৎ আছে?”
স্কুলে থাকতেই ক্যামেরা-ভিডিওর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় আদিত্যর। ১৬ বছর বয়সে বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে প্রথম ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে শুরু হয় তার ভিডিও তৈরির যাত্রা।
সে সময় বন্ধু, আত্মীয়, এমনকি নিজের মা-ও বলতেন—
“এভাবে সময় নষ্ট করিস না। লেখাপড়ার দিকে মন দে।”
কিন্তু আদিত্য জানত—তাকে স্রোতের বাইরে সাঁতার কাটতে হবে।
রাত জেগে ইউটিউব, ফোরাম, টিউটোরিয়াল দেখে সে নিজে নিজেই ভিডিও এডিটিং শেখে। একসময় ছোট ছোট ‘মোটিভেশনাল’ ভিডিও তৈরি করে নিজের পেজে পোস্ট করতে শুরু করে।
প্রথম ৬ মাসে ফলোয়ার হয় মাত্র ৫০০ জন। একসময় হতাশ হয়ে সে প্রায় ছেড়ে দিয়েই দিয়েছিল।
হঠাৎ ভাইরাল—আর শুরু নতুন অধ্যায়
২০২০ সালে আদিত্য একটি ১ মিনিটের ভিডিও বানায়—“জীবনে একবারও ব্যর্থ হও না এমন কেউ নেই।” ভিডিওটি পোস্ট করার এক সপ্তাহের মধ্যে ১ মিলিয়ন ভিউ হয়।
আচমকাই তাকে ইনবক্স করতে শুরু করে হাজারো তরুণ। কেউ বলে—“আপনার ভিডিও দেখে আজ আত্মহত্যার চিন্তা বাদ দিয়েছি।” কেউ বলে—“আপনাকে দেখে আমি নিজেও চেষ্টা শুরু করেছি।”
এই ভালোবাসা আদিত্যকে শেখালো—
সফলতা মানে শুধু টাকা নয়, অন্যকে সাহস দেওয়াও এক ধরনের অর্জন।
নিজের প্ল্যাটফর্ম: শিক্ষার সহজ ভাষা
২০২১ সালে আদিত্য নিজের ইউটিউব চ্যানেল চালু করে: “Learn & Lead”। সেখানে সে ভিডিও এডিটিং, অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্সিং, ও মোটিভেশনাল কনটেন্ট তৈরি করে।
বর্তমানে তার সাবস্ক্রাইবার ৪ লাখ+, এবং মোট ভিডিও ভিউ ৩ কোটি+।
অন্যদিকে সে তার দর্শকদের জন্য একটি ফ্রি ওয়েবসাইটও তৈরি করে, যেখানে টিনএজারদের জন্য রয়েছে ডিজাইন, এডিটিং, কনটেন্ট লেখার মতো কোর্স।
তরুণদের জন্য ৫টি মূল শিক্ষা তার যাত্রা থেকে
১. সবার মতো না হলেই তুমি ভুল নও
→ আদিত্য বলতেন, “আমি শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, ভালো প্রভাব রাখতে চাই।”
২. নিজের স্কিল গড়ো—সেটাই ভবিষ্যতের পুঁজি
→ সে একটিও টাকা খরচ না করে ইউটিউব দেখে ভিডিও এডিটিং শিখেছে।
৩. ভালো কনটেন্ট তৈরি করলে মানুষের মন জয় করা যায়
→ তার “মনের জোর” ভিডিও সিরিজ লাখো তরুণের মধ্যে নতুন আলো ছড়িয়েছে।
৪. সময়ের সদ্ব্যবহার করো—রাত জাগা মানেই ফেসবুকে সময় নষ্ট না
→ সে দিনে টিউশন করতো, রাতে ভিডিও বানাতো।
৫. ভালোবাসা, সমালোচনা—দুটোই থাকবে, কিন্তু থেমে গেলে হবে না
→ এক সময় নিন্দা হজম করেই সে জানতো—ভবিষ্যতে এসব তার পরিচয়ের অংশ হবে।
আদিত্য এখন কোথায়?
২০২4 সালের তথ্য অনুযায়ী, আদিত্য এখন শুধু ইউটিউবার নয়—একটি কনটেন্ট প্রোডাকশন ফার্মের কর্ণধার, যেখানে ১০+ তরুণ-তরুণী কাজ করেন।
তিনি একাধিক স্কুলে গিয়ে “Skill, not just Syllabus” নামে কর্মশালা করেন, যেখানে গ্রাম বা মফস্বলের ছেলেমেয়েদের শেখান কীভাবে অনলাইনে নিজে কিছু করে গড়া যায়।
তরুণদের প্রতি আদিত্যর বার্তা
“আপনার বয়স যতই কম হোক না কেন, আপনি যদি প্রতিদিন ১% শেখেন, এক বছর পর আপনি ৩৭ গুণ এগিয়ে থাকবেন।
তাই আজকেই শুরু করুন, কাল নয়।”
তরুণরাই দেশ গড়ার বড় শক্তি
আজকের বিশ্বে সাফল্য মানে শুধু চাকরি নয়। নিজের স্কিল দিয়ে, নিজের কনটেন্ট দিয়ে, নিজের সাহস দিয়ে—আপনি আজই শুরু করতে পারেন।
আপনার চারপাশ যদি নিরুৎসাহ দেয়—তাও শুরু করুন। কারণ আজকের ‘চুপচাপ ছেলে’ বা ‘ঘরে থাকা মেয়ে’-ই আগামী দিনের ‘চেঞ্জমেকার’ হতে পারে।