“ঘাসের পাশে একটা হলুদ ফুলওয়ালা গাছ, যেটাকে সবাই আগাছা ভেবে তুলে ফেলে দেয়… কখনো ভাবছেন, এই গাছই হয়তো একদিন ক্যান্সারের ওষুধ হবে?”
এমনটাই দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। কানাডার একদল গবেষক দাবি করছেন—ড্যান্ডেলিয়ন রুট এক্সট্রাক্ট (Dandelion Root Extract বা DRE) নামের এক প্রাকৃতিক উপাদান ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৯৫% এর বেশি কোলন ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম!
চলুন, এই চমকপ্রদ আবিষ্কারের গল্পটা শুরু করি একটু কাছ থেকে।
“ঘাসের আগাছা” না হয়ে উঠছে আশার আলো
ড্যান্ডেলিয়ন—বাংলায় যাকে বলে ‘শিকড় ফুল’ বা অনেক সময় ‘হলুদ আগাছা ফুল’। এই গাছটি বাংলাদেশে খুব একটা পরিচিত না হলেও ইউরোপ-আমেরিকার ঘাসে ভরা উঠোনে প্রায়ই দেখা যায়।
এই গাছটির মূল (root) বহু প্রাচীনকাল ধরে হালকা হজম সহায়ক চা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখন গবেষকরা বলছেন—এই একই মূল থেকেই তৈরি এক নির্যাস ক্যান্সার কোষের মৃত্যুর ঘন্টা বাজাতে পারে।
গবেষণার হেডলাইন: মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৯৫% ক্যান্সার কোষ ধ্বংস!
কানাডার উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষক দল কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিকার খুঁজে চলেছেন। তাদের নেতৃত্বে থাকা ডঃ সিওরিন প্যান্টের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে Oncotarget জার্নালে।
গবেষণায় দেখা গেছে:
- ড্যান্ডেলিয়ন রুট এক্সট্রাক্ট (DRE) কোলন ক্যান্সার কোষের ৯৫% এর বেশি ধ্বংস করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়।
- এই ধ্বংসটা হয়েছে “অ্যাপোপটোসিস” নামে পরিচিত শরীরের প্রাকৃতিক কোষ-মৃত্যু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে—যেটা নিরাপদ এবং টার্গেটেড।
- সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—এই প্রভাব p53 জিনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। আর এই p53 জিন অনেক ক্যান্সারের রেজিস্ট্যান্সের মূল কারণ।
- শুধু ল্যাবেই না, ইঁদুরের শরীরে টিউমার বৃদ্ধিও ৯০% কমে গিয়েছে এই এক্সট্রাক্টের প্রভাবে।
এত চমকপ্রদ? তাহলে ব্যবহার শুরু কেন হচ্ছে না?
এই প্রশ্নটাই স্বাভাবিক। এত ভালো ফলাফল পাওয়ার পরও কেন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার শুরু হচ্ছে না?
কারণ এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
- গবেষণাটি এখনো মানুষের ওপর প্রয়োগ হয়নি। শুধুমাত্র ল্যাবরেটরি এবং প্রাণী পর্যায়ের সফলতা দেখানো হয়েছে।
- মানবদেহে প্রয়োগের আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দরকার, যেখানে নিরাপত্তা, ডোজ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবকিছু পরীক্ষা করা হয়।
- এই ধরণের ট্রায়াল করতে সময় লাগে, পুঁজি লাগে এবং সর্বোপরি নীতিগত অনুমোদনও লাগে।
তবুও, গবেষকরা বলছেন—এটি এমন এক ফলাফল যা নিয়ে আরও বড় আকারে গবেষণা হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটার অর্থ কী?
আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। উন্নত দেশগুলোর মতো চেকআপ ও আগাম সতর্কতার অভাবে বেশিরভাগ রোগী দেরিতে চিকিৎসা পান। যদি কোনো প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী উপাদান ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, তবে তা বাংলাদেশের মতো দেশে বিশাল আশার কথা।
যদিও ড্যান্ডেলিয়ন আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়, কিন্তু এটা দেখিয়ে দেয়—প্রাকৃতিক উদ্ভিদের ভেতর কত বড় শক্তি লুকিয়ে থাকে, যেটা আমরা জানিও না।
বাস্তব গল্প: একজন ক্যান্সার বাঁচিয়ে ওঠা রোগীর উপলব্ধি
টরন্টোতে বসবাসকারী রেহান সাহেব, যিনি নিজে কোলন ক্যান্সার সারভাইভার। তিনি বলেন—
“কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন—সবকিছু করেও যখন শেষ পর্যন্ত আর কোনো রাস্তা ছিল না, তখনই এই Dandelion চা পান শুরু করি। চিকিৎসক বলেনি যে এটা ওষুধ, কিন্তু মনের একটা আশা ছিল। আজ ৩ বছর ধরে আমি ক্যান্সারমুক্ত। বিজ্ঞান কী বলবে জানি না, কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ।”
এটা কোনো মেডিক্যাল প্রমাণ নয়, কিন্তু রোগীর অভিজ্ঞতাও মূল্যবান।
বাংলাদেশি পাঠকের জন্য বার্তা—আস্থা রাখুন প্রকৃতিতে, কিন্তু বিজ্ঞানকে পাশে রেখেই
আমরা অনেক সময় ভাইরাল পোস্ট দেখে হুট করে শুরু করে দিই কোনো হারবাল কিছু। কিন্তু মনে রাখতে হবে—যেকোনো থেরাপি শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এই গবেষণা শুধু দেখায়—কীভাবে একেবারে সাধারণ কোনো গাছও হতে পারে অসাধারণ একটি প্রতিরোধক। তাই আগামী দিনে যখন আপনি কোনো গাছ বা ভেষজ উপাদানকে তুচ্ছ ভাববেন, একটু থেমে ভাববেন—এই পাতাগুলো হয়তো ভবিষ্যতের জীবনদাতা।
গাছের শিকড়ে লুকিয়ে জীবন?
ড্যান্ডেলিয়ন ফুল—যেটাকে পশ্চিমা বিশ্বে অনেকেই আগাছা ভাবেন, আজ সেটা হয়ে উঠছে সম্ভাব্য এক অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধের মূল উপাদান। এই ঘটনা আমাদের শেখায়—
প্রকৃতি কিছুই ফেলনা রাখে না। সবকিছুর ভেতরে আছে কোনো না কোনো উপকার।
আজকের এই গবেষণা হয়তো আগামী দিনে ক্যান্সারের চিকিৎসা বদলে দেবে। আর আমরা, সাধারণ মানুষ, জানতে পারি—আশা সবসময় নতুন কোনো পাতা গজানোর মতোই ফিরে আসে।