back to top
সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingরাতের বেলা হার্ট অ্যাটাক বেশি কেন হয়? আর আপনি কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত...

রাতের বেলা হার্ট অ্যাটাক বেশি কেন হয়? আর আপনি কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?

এক রাতে, ঢাকার এক মাঝবয়সী মানুষ ঘুম থেকে হঠাৎ উঠলেন বুক ধড়ফড় নিয়ে। পরিবারের লোকেরা ভাবলেন, হয়তো দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু ১৫ মিনিটের মধ্যে সবকিছু বদলে গেল—হার্ট অ্যাটাক। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও আর ফেরা হয়নি তার।

আপনার আশেপাশেও কি এমন কারও গল্প শুনেছেন? ভোররাতে, একেবারে ঘুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া মৃত্যু? এমন মৃত্যু এতটাই নীরব, যেন মৃত্যু নিজেই পা টিপে এসেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—রাতেই কেন বেশি হয় হার্ট অ্যাটাক?

এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে একেবারে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এবং, এটি জানা মানে আপনার পরিবার বা নিজের জীবন রক্ষা করার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

ঘুমের সময় হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার ৩টি প্রধান কারণ

১. রাতের বেলা শরীরের ভেতরে ঘটে হরমোনাল পরিবর্তন

রাতে ঘুমাতে গেলে আমাদের শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়—যেমন অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল। এগুলো দিনের তুলনায় ভোররাতের দিকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

এই হরমোনগুলো রক্তচাপ বাড়ায়, হৃদস্পন্দন ত্বরান্বিত করে—ফলে যদি আগে থেকেই হৃদযন্ত্র দুর্বল থাকে, তা আরও চাপে পড়ে।

২. রক্ত ঘন হয়ে পড়ে

রাতের দিকে পানি পান কম হয়, ঘুমের সময় শরীর থেকে ঘাম বা প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি হারায়, ফলে রক্ত ঘন হতে শুরু করে।

ঘন রক্ত সহজেই রক্তনালিতে ব্লক তৈরি করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ঘুমের মধ্যকার “REM ফেজ” সবচেয়ে বিপজ্জনক

REM মানে Rapid Eye Movement—এটা হলো ঘুমের সেই ফেজ, যখন আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি অ্যাকটিভ থাকে। এই সময় হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত পরিবর্তিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের ৪৫% ঘটেই REM ফেজের মধ্যে।

বাংলাদেশে কেন এই সমস্যা আরও বেশি?

বাংলাদেশে হৃদরোগের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। World Health Organization-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৭.৫% মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগজনিত কারণে।

এদেশে কিছু বিশেষ বিষয় এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়:

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা
  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের অবহেলা
  • ঘুমের সমস্যা বা অনিয়মিত জীবনযাপন
  • ধূমপান, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া

এছাড়া মানসিক চাপ, দীর্ঘদিনের কাজের স্ট্রেস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবও অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

আপনি কীভাবে বুঝবেন ঝুঁকিতে আছেন কি না?

হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর ছোট ছোট সংকেত দেয়। যেমন:

  • ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে বুক ধড়ফড় করা
  • ঘাড়, বুক বা বাম হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
  • হঠাৎ নিঃশ্বাসে কষ্ট, ঠান্ডা ঘাম হওয়া
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা

এসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না। একবার হলেও হার্ট চেকআপ করিয়ে নিন।

রাতের হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়

১. ঘুমের সময়ের রুটিন ঠিক করুন

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান
  • ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে ভারী খাবার বা চা-কফি এড়িয়ে চলুন
  • ঘুমের আগে মোবাইল, টিভি বন্ধ রাখুন—ঘুমের মান ভালো হবে

২. প্রতিদিন হালকা শরীরচর্চা করুন

  • সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করুন
  • শরীরচর্চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখে

৩. পানি পান করুন

  • দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন
  • রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানি খেতে পারেন (ডায়াবেটিস না থাকলে)

৪. মানসিক চাপ কমান

  • প্রতিদিন ৫ মিনিট মেডিটেশন বা প্রার্থনা
  • পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান
  • অফিসের কাজ ঘুমের সময় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • প্রতি ৬ মাস অন্তর রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও ইসিজি টেস্ট করুন
  • পরিবারের কেউ যদি হার্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আরও সতর্ক হোন

বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা

চট্টগ্রামের এক তরুণ, নাবিল হাসান। ৩৩ বছর বয়সে হঠাৎ এক রাতে বুকে চাপ অনুভব করেন। মনে করেন অ্যাসিডিটি, একটু পানি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে আর ওঠেননি।

পরিবার জানতো না যে তার উচ্চ কোলেস্টেরল ছিল। কোনো চেকআপ করেননি কখনো। অথচ একটু সচেতনতা তাকে হয়তো আরও ৫০ বছর বাঁচিয়ে রাখতে পারতো।

হৃদয় দিয়ে ভালো থাকুন

হৃদয় মানে শুধু ভালোবাসার জায়গা নয়—এটা আপনার জীবনের ইঞ্জিন। আর সেই ইঞ্জিনকে রক্ষা করা মানে প্রতিদিনের কিছু ছোট্ট সিদ্ধান্ত, অভ্যাস ও সচেতনতা।

আপনি যদি সত্যিই নিজের প্রিয়জনদের পাশে দীর্ঘদিন থাকতে চান, তাহলে আজই একটু ভাবুন—আপনার হৃদয় কতটা সুস্থ?

ঘুম ভাঙলেই যেন ভাঙে না স্বপ্ন। আর রাতে ঘুম মানেই যেন জীবনের শেষ ঘুম না হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular