back to top
রবিবার, জুলাই ২৭, ২০২৫
HomeBusinessBusiness Skillসার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় দোটানা: ‘কাস্টমার সবসময় ঠিক’ — কিন্তু কতদূর পর্যন্ত?

সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় দোটানা: ‘কাস্টমার সবসময় ঠিক’ — কিন্তু কতদূর পর্যন্ত?

“স্যার, এই অফারটা আমাদের পলিসির বাইরে পড়ছে…”

“মানে? আমি তো আগেও এই সেবা পেয়েছি! আজ কেন নয়?”

“আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত, তবে আজ সেটা সম্ভব নয়…”

— এরপরই শুরু হয় তিক্ততা। কাস্টমার ভেবে নেন, “এরা আন্তরিক না।” আর সার্ভিস প্রোভাইডার ভেবে নেন, “কাস্টমার শুধু অধিকার চায়, দায়িত্ব নেয় না।”

এটাই সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে পুরনো ও বড় দোটানা।

কাস্টমার সবসময় কি ঠিক? না হলে, সার্ভিস স্টাফ কীভাবে তাকে সামাল দেবে? আর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সার্ভিস দেয়ার একটা সীমা কোথায়?

বাংলাদেশের বাস্তবতা: ‘সেবা’ নাকি ‘সহ্য’?

বাংলাদেশে হোটেল, ব্যাংক, হাসপাতাল, কল সেন্টার বা রেস্টুরেন্ট—যেখানেই যান না কেন, এই দ্বন্দ্ব প্রতিদিনই চোখে পড়ে।

নুসরাত নামের একজন রেস্টুরেন্ট সার্ভার জানান,

“একজন অতিথি আমাদের মেনুর বাইরে স্পেশাল কিছু চাইলেন। বললাম এটা সম্ভব নয়। উনি বললেন, ‘তুমি কি জানো আমি কে?’ তারপর রিভিউতে লিখে দিলেন—‘খারাপ সার্ভিস’। আমাদের ম্যানেজার বললেন, ‘এক্সপ্লেইন করো না, শুধু হাসো।’ কিন্তু আমি জানি, আমার হাসিটাও তখন কৃত্রিম ছিল।”

সমস্যার মূল কোথায়?

এই দোটানার মূল কারণ দুটি জায়গায়:

১. অতিরিক্ত “কাস্টমার ইজ কিং” সংস্কৃতি

আমরা প্রায়শই ভাবি—“যেহেতু আমি টাকা দিচ্ছি, আমি যা চাইবো তাই হবে।”

কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু সেবা গ্রহণের ভারসাম্য নষ্ট করে না, সার্ভিস কর্মীর মনোবলও ভেঙে দেয়।

২. ফ্রন্টলাইন কর্মীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার অভাব

অনেক প্রতিষ্ঠানেই নীতিমালা স্পষ্ট নয়, অথবা কর্মীদের সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয় না।

ফলে তারা পড়ে যায়: “কাস্টমারকে না বললে চাকরি যাবে, আর হ্যাঁ বললে নিয়ম ভাঙবে।”

গবেষণার চোখে

Harvard Business Review-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়,

“Long-term customer loyalty comes from empowered employees—not just pleasing customers at any cost.”

অর্থাৎ, শুধু ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলেই কাস্টমার ধরে রাখা যায় না। বরং, স্টাফকে যদি যুক্তিসংগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তারা কাস্টমারকে আরও ভালোভাবে সার্ভ করতে পারে।

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চ্যালেঞ্জ

  • ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি: অনেক ব্যবসা এখনো বিশ্বাস করে, “কাস্টমার রাগ করলে ব্যবসা যাবে।”
  • সেলস টার্গেটের চাপ: কর্মীদের বলা হয়, “যেভাবেই হোক গ্রাহক ধরে রাখো।”
  • সঠিক ট্রেনিংয়ের অভাব: সমস্যার সময় কীভাবে কথাবার্তা চালানো উচিত, সেটা শেখানো হয় না।

ফলে, একটা ছোট ইমেইল রেসপন্সও হয়ে যায় ঝগড়ার সূত্র।

তাহলে সমাধান কী?

 ১. নীতি + নমনীয়তা = ব্যালেন্সড সার্ভিস

কাস্টমারকে না বলার অধিকার দিন, কিন্তু সেটাও যেন শ্রদ্ধার সুরে হয়।

যেমন:

  •  “না, এটা সম্ভব না।”
  •  “স্যার, আমরা বুঝতে পারছি আপনার চাওয়া কতটা জরুরি। তবে আমাদের নীতিমালার মধ্যে থেকে আমরা আপনাকে বিকল্প দুটি দিতে পারি।”

২. ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ক্ষমতায়ন দিন

সাধারণ সমস্যাগুলো যাতে কর্মীরা নিজেরাই সমাধান করতে পারেন, সেই ক্ষমতা দিন। এতে কাস্টমারও তৃপ্ত হন, কর্মীরাও আত্মবিশ্বাসী হন।

৩. কাস্টমারদেরও শেখান

সার্ভিস মানে শুধু পাওয়ার বিষয় নয়—এটা পারস্পরিক শ্রদ্ধার জায়গা।

কিছু প্রতিষ্ঠান “কাস্টমার এটিকেট” বা “স্মার্ট ক্লায়েন্ট গাইড” চালু করেছে—চমৎকার উদ্যোগ।

৪. সহানুভূতির ভিত্তিতে সার্ভিস

“আপনি ঠিক, আমি ভুল”—এভাবে নয়। বরং “আপনার অসুবিধা আমি বুঝতে পারছি”—এইভাবে কথা বলা শিখতে হবে।

একটি বাস্তব গল্প: ভয় থেকে বিজয়

রাজশাহীর একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান একবার ভুল করে এক কাস্টমারের প্রোডাক্ট দেরিতে পাঠায়।

কাস্টমার ফোনে চিৎকার করেন।

কর্মীটি শান্তভাবে বলেন:

“স্যার, দেরি হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। তবে আপনি যদি আমাকে ৩০ সেকেন্ড সময় দেন, আমি নিজেই সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

এই ‘ভদ্র অথচ দৃঢ়’ ভঙ্গি কাস্টমারকে থামায়, এবং পরে তিনি বলেন:

“আপনার মতো কথা বললে আসলেই রাগ কমে যায়।”

সত্যি কথা হচ্ছে…

কাস্টমার সবসময় ঠিক না, আর সার্ভিস কর্মীও সবসময় ভুল না।

সার্ভিস মানে শুধু কাজ সম্পন্ন করা নয়, বরং একটা অভিজ্ঞতা তৈরি করা—যেখানে শ্রদ্ধা, সংবেদনশীলতা ও পেশাদারিত্ব একসাথে কাজ করে।

আপনি যদি সেবাদাতা হন, তাহলে শিখুন কীভাবে “না” বলেও সম্মান রাখতে হয়।

আর আপনি যদি কাস্টমার হন, তাহলে মনে রাখুন—আপনার টাকা আপনাকে সম্মান দেয়, কিন্তু আপনার ব্যবহারই আপনাকে মানুষ বানায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular